Ajker Patrika

হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর কাঁচামিঠা আম

 রিমন রহমান, রাজশাহী
কাঁচামিঠা আম রানী
কাঁচামিঠা আম রানী

হাত বাড়ালেই আম, তবু কেউ ছোঁয় না, ছিঁড়ে ফেলে না। চুরি যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমের মৌসুমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ দৃশ্য অতি চেনা। অথচ চুরির ভয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তুলসীপুরের ডিলারের বাড়ির একটি আমগাছ বরই ডাল দিয়ে ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে!

আমটির নাম কালুয়া। তবে এটি ‘কাঁচামিঠা’ নামে বেশি পরিচিত। এই আম পাকার জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। কাঁচা থাকতেই সাবাড়। আমটির স্বাদ মিশ্র। সেই স্বাদের টানেই আঁটি ধরার আগে শেষ হয়ে যায় গাছের আম। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ আমগাছ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নতুন করে এই আমগাছ আর লাগানো হয় না। কোনো কোনো বাগানে কিংবা বাড়িতে একটি-দুটি গাছ খুঁজে পাওয়া যায়। শৌখিন মানুষেরা গাছগুলো রেখে দিয়েছেন।

কোন কোন আম কাঁচামিঠা

অনেক কাঁচামিঠা আমের কোনো নামই ছিল না এককালে। কিছু আম নাম পেয়েছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমানও কাঁচামিঠা আমের তেমন নাম জানাতে পারলেন না। তবে সহায়তা করলেন বাঘার অনিমা অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী সৌমেন মণ্ডল। তিনি জানান, তাঁদের এলাকায় নারকেল, জামানি, কালুয়া ও রানী নামের চারটি জাতের কাঁচামিঠা আম এখন পাওয়া যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বউ ভোলানি ও টিক্কাফরাসসহ কয়েকটি জাতের আম পাওয়া যায়। এর মধ্যে টিক্কাফরাসকে ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) বারি আম-৯ হিসেবে অবমুক্ত করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক জাত হিসেবে আমটি প্রতিষ্ঠা পায়নি।

টিক্কাফরাসের গড় ওজন ১৬৬ গ্রাম। মে মাসের শেষ দিকে সবুজ রঙের এ আম বাজারে আসে। এর আঁশ সাদা। খেতে কচকচে। মিষ্টতা ১১ শতাংশ। নারকেল আমটি পটোলের মতো হলেও দেখতে খুব সুন্দর। এটি টক নয়, মিষ্টিও নয়। কিছুটা ফজলির মতো। এর ফলন প্রচুর। এক থোকায় চার-পাঁচটি আম থাকে। ওজন ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম।

কালুয়া নামের আমটির সুঘ্রাণ আছে। পাকলেও এর রং সবুজই থাকে। তবে এ আম কাঁচা অবস্থায় যতটা সুস্বাদু, পাকলে ততটা নয়। পাকা কালুয়া খেতে অনেকটা পেঁপের স্বাদ পাওয়া যায়। গোলাকার এই আমের ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কাঁচামিঠার আরেক জাত রানী। এই আম কাঁচা অবস্থা মিষ্টি, পাকলে আরও মিষ্টি হয়। তখন এর রং হয় হলুদ। লম্বাটে আমটির ওজন ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম। অনেকে একে নারকেল আম বলে ভুল করেন।

কাঁচামিঠা আমের আরেক জাত জামানির ঘ্রাণ জোয়ানের মতো। গাছে থাকলে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঘ্রাণ পাওয়া যায়। স্বাদ টকমিষ্টি। প্রায় গোলাকার আমটির ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম।

কতটা দুষ্প্রাপ্য এই আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা দেশের অন্যতম বৃহৎ আমের মোকাম। ভারতের মালদহ লাগোয়া এ জেলায় বহু অজানা জাতের আম পাওয়া যায়। উন্নত জাতের আমেরও অভাব নেই। তবে এত আমের মাঝেও হারিয়ে যেতে বসেছে বিশেষ স্বাদের কাঁচামিঠা আম। এখানে কাঁচামিঠা আমের কোনো বাগান নেই। তবে বিমর্ষী গ্রামের শৌখিন বাগানি হাজি এখলাস উদ্দীনের একটি পুরোনো বাগানে ১৬টি কাঁচামিঠা আমের গাছ আছে।

অনলাইনে অর্ডার নিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বলিহার, আড়পাড়া, শ্রীরামপাড়া, হাজিপাড়া, কাজিপাড়া, তুলসীপুর, আমোদপুরের আশপাশের এলাকা থেকে আম সংগ্রহ করে সারা দেশে কুরিয়ার করেন সৌমেন মণ্ডল।

সৌমেন জানান, তাঁদের এলাকায় মাত্র চারটি কাঁচামিঠা আমের গাছ আছে। এর মধ্যে বলিহার গ্রামের তাপস সরকার, তুলসীপুরের ডিলার, হাজিপাড়ার আবদুর রাজ্জাক ও সিদ্দিপাড়ার আবদুস সালাম একটি করে গাছের মালিক। এর বাইরে এ আমগাছ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কাঁচা আমের দাম গাছের মালিক নেন কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তিনি বিক্রি করেন ১০০ টাকায়।

কাঁচামিঠা কি হারিয়েই যাবে

পুরোনো গাছ কাটা পড়ছে। নতুন করে রোপণ হচ্ছে না কোথাও। ফলে এ আম দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে অল্প কিছু মানুষ এখনো শখের বশে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পুরোনো গাছটি রেখে দিয়েছেন। আবার অনেকেই গাছটি খুঁজে পান শুধু স্মৃতির পাতায়। তেমন গল্পই শোনালেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতেই একটা কাঁচামিঠা আমের গাছ ছিল। দাদি বলতেন, “এই গাছটা তোর বাপের বয়সী।” সেই গাছও আমরা রাখতে পারিনি। এখন নতুন করে এই গাছ কেউ লাগায় না। আমটা হারিয়ে যাচ্ছে।’

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমটি (কাঁচামিঠা) কমে গেছে, তবে একেবারে হারিয়ে যায়নি। বাণিজ্যিকভাবে একক কোনো বাগান হয়নি। তবে বাগানে বা বাড়িতে একটি-দুটি গাছ আছে। সেখান থেকেই আমটা পাওয়া যায়। এর মধ্যে টিক্কাফরাস জাতের আমটিকে ২০১১ সালে বিএআরআই বারি আম-৯ হিসেবে অবমুক্ত করেছে। কাঁচামিঠার বেনামি অনেক জাত আছে। সেগুলো সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘নতুন করে আর এই গাছ লাগানো হচ্ছে না। কারণ এখন বাগান হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষিরা লাভটা দেখছেন বলে কাঁচামিঠা অনেকটা রেয়ার হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কাঁচামিঠা আম কাঁচাতেই খায়, পাকলে ভালো লাগে না। ফলে বাজারজাতের একটা অনিশ্চয়তার কারণে বাণিজ্যিকভাবে এটার সম্প্রসারণ হচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ভিসায় ছয় দেশ

এর জবাব দেশে দিইনি, জাপানে দিলে বিপদ হবে: পদত্যাগ প্রশ্নে ড. ইউনূস

চারটি গুলির পর নিরস্ত্র মেজর সিনহার গলায় পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়: অ্যাটর্নি জেনারেল

‘বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেও পাকিস্তানের কোনো লাভ হবে না’

বাজে হারের পরও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত