Ajker Patrika

মা দিবসে এক ভিন্ন লড়াইয়ের গল্প শুনুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক 
আনা মারিয়া জার্ভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া
আনা মারিয়া জার্ভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া

তিন শ পঁয়ষট্টি দিনের একটি দিন হবে শুধু মায়ের জন্য। সেই দিনটির প্রতিটি মুহূর্ত থাকবে মাকে ঘিরে। মা দিবস মূলত এই লক্ষ্যেই পালন করার কথা ছিল। কথা ছিল, এই দিন মাকে রাখা হবে অগ্রাধিকার তালিকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এই দিন ছাড়া কি তবে মায়ের দাম থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে মায়ের দরকার মানুষের কাছে সবার আগে। কিন্তু মাকে ঘিরে দিবসটি যেন একটু ভিন্নতা নিয়েই কাটে, সে উদ্দেশ্যেই মা দিবস। দিনটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যেমন কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বিস্তর তেমনি এর মূল উদ্দেশ্য অক্ষুণ্ন রাখতেও লড়াই করতে হয়েছে।

মা দিবসকে বাণিজ্যিকীকরণের হাত থেকে রক্ষা করারও একটা আলাদা লড়াইয়ের গল্প আছে। অনেকেই জানেন মা দিবস পালনের শুরু আনা মেরি জার্ভিসের হাত ধরে। তাঁর মায়ের ‘ইচ্ছা পূরণ’ করার ইচ্ছা থেকে মা দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়া জন্য লড়ে যান তিনি। মেরি জার্ভিসের মা আনা রিভিজ জার্ভিস ছিলেন একজন মার্কিন সমাজকর্মী। তাঁরা মা আর মেয়ে মিলে মার্কিন গৃহযুদ্ধে পরিবারহীন অনাথদের সেবা ও একত্রীকরণে কাজ করতেন। এ সময় তাঁরা মা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। পরে এই দিবসকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব নেন মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। তবে তারও আগে মা দিবস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল।

আনা রিভিজ জার্ভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া
আনা রিভিজ জার্ভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া

সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে একটু শান্তির আশায় একটি ঘোষণাপত্র লিখেছিলেন। সে ঘোষণাপত্রটি ‘মাদারস ডে প্রোক্লেমেশন’ নামে পরিচিত ছিল। রাজনৈতিক স্তরে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য ছিল সেই ঘোষণাপত্রে। সেখানে শান্তির জন্য মায়েদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে মাদার’স পিস ডে নামে একটি ছুটির দিন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন জুলিয়া। কিন্তু সে যাত্রায় তিনি সফল হতে পারেননি। সে সফলতা এসেছিল আনা মেরির হাত ধরে।

আনা মেরি জার্ভিস তাঁর মা আনা রিভিজ জার্ভিসের মৃত্যুর পর তাঁর শান্তি কামনায় এবং তাঁর প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানোর জন্য সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য প্রচারণা চালানো শুরু করেন। ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। আনা মেরি তাঁর মায়ের প্রিয় সাদা কারনেশন ফুল উপস্থিত সবাইকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন সে অনুষ্ঠানে। ১৯১২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। মা দিবসকে ছুটির দিন করার লক্ষ্যে এবং দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচারণাও চালান আনা জার্ভিস। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয় কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে এই উদ্যোগের কথা।

জুলিয়া ওয়ার্ড হোই। ছবি: উইকিপিডিয়া
জুলিয়া ওয়ার্ড হোই। ছবি: উইকিপিডিয়া

সাত বছরের চেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি দেয় মা দিবসকে। ১৯১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে মা দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। একই সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবেও ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই সরকারিভাবে মা দিবস পালিত হতে থাকে।

তবে ক্রমেই এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে দেখেন আনা সার্ভিস। শুরু হয় আরও এক লড়াই। এই লড়াইটি ছিল মা দিবসকে বাণিজ্যিকীকরণের হাত থেকে রক্ষার লড়াই। আনা জার্ভিস খেয়াল করেন, মা দিবসে ক্রমে মায়ের গুরুত্ব কমে গিয়ে ফুল কিংবা কার্ডের বিক্রির গুরুত্ব বেড়ে যায়। দিবসটিকে শুভেচ্ছা কার্ড, চকলেট ও ফুল বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। আনা জার্ভিস খেয়াল করেন, সেই বাণিজ্যিক বিষয়গুলোর কারণে মা দিবস উদ্‌যাপনের আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছিল। এ দেখে তিনি তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক ভাবেই এক সময় তিনি বিবাদে জড়িয়ে পড়েন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। এর ফলে তাঁকে পোহাতে হয় মামলার ঝক্কি। ১৯৪৪ সালের মধ্যে ৩৩টি মামলায় জড়িয়ে পড়েন আনা জার্ভিস। এরপরেও তাঁর প্রতিবাদ থেমে থাকেনি। তিনি এ ছুটির দিনটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যয় করেছেন বাকি প্রায় পুরো জীবন ও সঞ্চয়।

আন্দ্রেজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চ, পশ্চিম ভার্জিনিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া
আন্দ্রেজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চ, পশ্চিম ভার্জিনিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া

আনা জার্ভিস বলেছিলেন, ‘মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মানে নিজ হাতে তার জন্য দুই কলম লেখার সময় না হওয়া। চকলেট উপহার দেওয়ার অর্থ হলো, তা নিজেই খেয়ে ফেলা।’ এই দিনটিতে মায়ের জন্য অর্থবহ করে তোলার অনুরোধ করেন আনা জার্ভিস। মা দিবসকে প্রতিষ্ঠিত করা এই নারী নিজে কখনো পরিবার তৈরি করেননি। কোনো সন্তানের মা না হয়ে নিজের মায়ের শেষ ইচ্ছাকে পূরণ করেছেন তিনি। একজন সন্তান হিসেবে মায়ের জন্য একটি দিবস প্রতিষ্ঠা করেছেন আনা জার্ভিস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত