Ajker Patrika

সিসু: ৫০০ বছরের পুরোনো যে ফর্মুলায় ফিনল্যান্ডের মানুষ সবচেয়ে সুখী

পরাগ মাঝি
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৪
Thumbnail image

টানা ৬ বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় এক নম্বরে আছে ফিনল্যান্ড। ১৩৭টি দেশের মধ্যে করা এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮ তম। এ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের মানুষগুলোর সুখ অনুধাবন করা কিছুটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার অবশ্যই। 

তবে ফিনল্যান্ডের মানুষ কীভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী—তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এই কৌতূহল থেকেই জানা গেছে ‘সিসু’ নামে সুখী জীবন যাপন করার একটি পদ্ধতির কথা। ৫০০ বছরের পুরোনো এই ফর্মুলাই ফিনল্যান্ডের মানুষকে এত সুখী করেছে বলে জানা গেছে। 

‘সিসু’ কী? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেতে হয়। কারণ এই শব্দটির ইংরেজি কিংবা অন্য কোনো ভাষায় অনুবাদযোগ্য শব্দ নেই। সিসু এমন একটি শব্দ যা দিয়ে ফিনল্যান্ডবাসীকেই বোঝানো হয়। এটিকে মানুষের জীবনাচারণের একটি পদ্ধতি হিসেবেও বর্ণনা করেন অনেকে। 

সিসু সম্পর্কে ‘দিস ইজ ফিনল্যান্ড’ নামে একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিষয়টি আশ্চর্যজনকভাবে জটিল, আবার সহজও। সহজ কথায় বলতে গেলে—সিসু হলো ফিনল্যান্ডের আত্মা। 

ফিনিশ ‘সিসু’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দাঁড়ায় অভ্যন্তরীণ বা ভেতর। কখনো কখনো এই শব্দটিকে ‘সাহস’ বা ‘অভ্যন্তরীণ শক্তি’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়। 

ফিনিশ লেখিকা জোয়ান্না নুল্যান্ড ‘সিসু: দ্য ফিনিশ আর্ট অব কারেজ’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। এ সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে নুল্যান্ড তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘আপনার মধ্যে সিসু আছে এবং এটি সবার নাগালের মধ্যে রয়েছে ৷ এটা আপনার মধ্যেই আছে।’ 

এটি কর্মমুখী মানসিকতা
 ‘সিসু: দ্য ফিনিশ আর্ট অব কারেজ’ বইটিতে নুল্যান্ড দাবি করেছেন, সিসুর ধারণাটি ৫০০ বছরের পুরোনো বা তারও আগের। এর মধ্য দিয়ে মানুষের দৃঢ় সংকল্প, কঠোরতা, সাহস, ইচ্ছাশক্তি, দৃঢ়তা এবং স্থিতিস্থাপকতার মতো বিষয়গুলোকে নির্দেশ করা যায়। পুরো বিষয়টি মানুষের জীবনাচারণের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মানসিকতাকে বোঝায়। কেউ নিজের মধ্যে সিসু থাকার বড়াই করতে পারে না, মানুষের কাজই বলে দেয় যে, তাঁর মধ্যে সিসু উপস্থিত। 

সিসুর মানসিকতা দিয়েই ফিনল্যান্ডের মানুষ তীব্র শীতকে যুদ্ধের মতো চ্যালেঞ্জ জানায় এবং মোকাবিলা করে। এটি শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতায় অবদান রাখে এবং সঙ্গী, পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় সহায়তা করে। এই মানসিকতাকে একটি সক্রিয়, স্বাস্থ্যকর জীবন পরিচালনার ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করে ফিনল্যান্ডের মানুষ। কেউ তাঁর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সিসু মানসিকতা ধারণ করতে পারেন, আবার এটি মানুষকে সুখেরও সন্ধান দিতে পারে। 

নুল্যান্ডের বইটিতে একজন মানুষ কীভাবে তাঁর মধ্যে সিসুকে ধারণ করতে পারেন সে সম্পর্কে কিছু টিপসও রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু টিপস হলো এমন—সত্যিকারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন, নীরবতাকে অনুধাবন করুন, নিঃসঙ্গ থাকার সময় বেছে নিন। প্রকৃতিতে ফিরে আসার জন্য কিছু পরামর্শ এমন—শান্ত হোন, প্রস্তুতির কথা ভাবুন। এ ছাড়া এমন কিছু পরিবেশনা আছে যেগুলোর মধ্য দিয়েও মূর্ত হয়ে ওঠে সিসু। যেমন—ব্লুবেরি পাই থেকে শুরু করে ব্ল্যাকবেরি, তুলসী এবং লেবুর সঙ্গে ভদকা ককটেল ইত্যাদি। 

সিসুর মধ্যে থাকা
ফিনল্যান্ডের মানুষ মনে করেন, বরফ জলে সাঁতার কাটা আনন্দদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর। তবে আশপাশে একটি উষ্ণ ঘরও থাকা চাই যেখানে চাইলেই শরীরটিকে গরম করে নেওয়া যেতে পারে। 

যার মধ্যে সিসু উপস্থিত তার মধ্যে কোনো ভয়ও কাজ করে না। নুল্যান্ডের মতে, সিসু জীবনের প্রতিটি অংশকে প্রভাবিত করে। অনেক কিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে ফেলে। 

কেউ যদি ফিনল্যান্ড নিয়ে আগ্রহী হয় তবে নিশ্চিতভাবেই তিনি সিসুর মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। সিসুর মানসিকতাই ফিনল্যান্ডবাসীর চিন্তা-চেতনা এবং কাজে কর্মে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে। তাঁরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত