Ajker Patrika

আয়োজন হোক মন মাতানো

মির্জা গালিব, ঢাকা
আয়োজন হোক মন মাতানো

আকাশের মন খারাপ হচ্ছে ইদানীং, হোক। আকাশ মন খারাপ করলেই আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। যখন তার মুখ ঘন কালো, বুকের ভেতর কোনো এক অব্যক্ত কষ্টগাঁথা গর্জে গর্জে ওঠে, নীলচে সবুজ মর্ত্যবাসী আমরা তখন খুশিতে বাকবাকুম করে উঠি। আকাশের দু’চোখ উছলে ওঠা জল যখন ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ে তৃষ্ণার্ত পৃথিবী বুকে, তখন আমাদের হেঁশেলে ছ্যাঁৎ করে ওঠে পাঁচফোড়নের ঘ্রাণ। ‘তেল নেই’ হাহাকার দূরে ঠেলে রেখে আমাদের চোখমুখ চকচক করে ওঠে হলুদ খিচুড়ির জন্য। কী নিষ্ঠুর আমরা!  

আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাচ্ছে, আরও কয়েক দিন থাকবে এই বৃষ্টি বৃষ্টি ভেজা ভেজা অবস্থা। তাতে আমাদের আমোদ হওয়ার কথা। এই গরমের বৃষ্টিতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বৃষ্টিবিলাস করার অবকাশ হয়তো নেই। কিন্তু সরষের তেল, চানাচুর, কাঁচা পেঁয়াজ ও সবুজ মরিচের কুচি দিয়ে তাজা মুচমুচে মুড়ি মেখে খেতে কোনো বাধা নেই। আবার মুড়ি যদি একঘেয়ে মনে হয়, তাহলে চাল ভাজাও খাওয়া যেতে পারে। কড়াই গরম করে তাতে পরিমাণমতো চাল দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে নিলেই হয়ে যায় চাল ভাজা। মুড়ি মাখার উপকরণ দিয়ে মেখে চাল ভাজাও দুর্দান্ত উপাদেয় খাবার এই বৃষ্টি বৃষ্টি ভেজা ভেজা দিনে। আর তার ওপর যদি পরে এক ফালি নারকেল বা এক মুঠো নারকেল কোরা— উহু, মির্জা গালিব দিল্লি ছেড়ে ঢাকার রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতেও রাজি। তবে হ্যাঁ, বাস্তবতা জেঁকে ধরলে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়। তাই বেশি তেল খরচ করবেন না।

প্রথমেই বলেছিলাম খিচুড়ির কথা। একটু মেঘলা আকাশ কিংবা বৃষ্টি দেখলে কেন যে বাঙালির খিচুড়ি খেতে মন চায়, সেটা বলা সম্ভব নয়। বৃষ্টিঝরা দিনে খিচুড়ি খাওয়াটা বাঙালির প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উত্তরাধুনিক যুগে যখন প্রথা ভাঙাটাই একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খাওয়ার এই আটপৌরে প্রথাটির পক্ষে প্রবল জনমত গড়ার কাজে আমি ভ্যানগার্ড হয়ে যেতে রাজি। তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো, খিচুড়ির সঙ্গে যদি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা না যায় তাহলে পুরো বিষয়টিই মাঠে মারা যেতে পারে। এখন বাজারে প্রচুর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো দিয়ে নরম নরম খিচুড়ি বানানো যায়। সব উপকরণ ভেজে নিয়ে ভুনা খিচুড়িও খাওয়া যায়। যেভাবেই খান না কেন, ইলিশ মাছ ভাজা হলে একেবারে জমে যাবে সব। চাকা চাকা করে কাটা ইলিশ মাছ ভালো করে ধুয়ে হলুদ, লবণ মেখে গরম কড়াইতে গরম হতে থাকা তেলে ছেড়ে দিলে যে আওয়াজটা হয়, সেটা শোনা যেকোনো বাঙালির স্বপ্নের বিষয়। স্বপ্নই বটে। ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও দাম কমছে না যে! অবশ্য এখন ইলিশ নাকি ভোজ্যতেল দুর্মূল্য ও দুর্লভ সেটাও এক গবেষণার বিষয় বটে।

সেসব গবেষণা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ খাবারের স্বাদ নেওয়া। বৃষ্টিভেজা দিনে লোকজনকে  ‘খাও খাও খাও’ বলে একটুখানি উসকে দেওয়া। উসকে দিতে দিতে নিজেই যে কখন খেতে শুরু করব, তার খবর অন্তর্যামীও জানেন না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত