Ajker Patrika

এই খাবারগুলোর দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১৭: ০৮
এই খাবারগুলোর দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে

বিশ্বের সেরা স্বাদের ও দামি খাবার নিয়ে ভোজনরসিকদের আগ্রহের অন্ত নেই। অনেকে শুধু খাবার খেতেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে যান। এসব খাবার সাধারণত সহজলভ্য হয় না। তা ছাড়া দামি খাবারগুলো তৈরিতে অনেক সময় সোনা, রুপা এমনকি হিরের ব্যবহারও হয়ে থাকে। চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার বা খাবারের উপাদানগুলো সম্পর্কে।

জাফরান
জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলার একটি। প্রতি আউন্স জাফরানের দাম স্বর্ণের দামের চেয়েও বেশি। এ জন্য জাফরানকে ‘লাল স্বর্ণ’ নামে ডাকা হয়। জাফরান মূলত একটি ফুলের গর্ভমুণ্ড। এটি সাধারণত খাদ্যে ব্যবহার করা হয় রঙিন করতে। সেই সঙ্গে ছড়ায় দারুণ সুবাস। যদি ওজনের তুলনা করা হয়, নিঃসন্দেহে এটি স্বর্ণের চেয়ে দামি।

কিন্তু কেন জাফরানের দাম এত বেশি? কারণ, যেই ফুল থেকে এই জাফরান সংগ্রহ করা হয়, শরৎকালের শুরুতে সেটি মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ফোটে। একটি ফুলে মাত্র তিনটি গর্ভমুণ্ড থাকে। খালি হাতে এটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করতে হয়। এক কিলোগ্রাম জাফরান সংগ্রহ করতে অন্তত দুটি ফুটবল পিচের সমান জায়গায় এই ফুলের চাষ করতে হয়। এক কেজিতে দরকার হয় প্রায় তিন লাখ ফুল। 

ক্যাভিয়ার আসলে একধরনের সামুদ্রিক মাছের ডিমক্যাভিয়ার
ক্যাভিয়ার খুবই দামি একটি খাবার। এটি আসলে একধরনের সামুদ্রিক মাছের ডিম। বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবারের একটি বলে গণ্য করা হয় এই ডিমকে। ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করে প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করার কাজটি খুবই দুরূহ। তা ছাড়া ক্যাভিয়ার খুবই বিরল।

সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যাভিয়ার আসে বেলুজা স্টার্জেন মাছ থেকে। কেবল কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরে এই মাছ পাওয়া যায়। এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। একটি বেলুজা স্টার্জেন পূর্ণবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় দুই দশক অর্থাৎ ২০ বছর! এরপর এই মাছ ডিম পাড়তে পারে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসাবে এক কিলোগ্রাম অ্যালবিনো ক্যাভিয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৪ হাজার ৫০০ ডলার। 

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় ঝিনুকঝিনুক
অয়েস্টার বা ঝিনুক এখন বিলাসী বা ধনীদের খাবার হিসেবে বিবেচিত হলেও আগে কিন্তু তা ছিল না। উনিশ শতকের শুরুতে ঝিনুক ছিল খুব সস্তা। উপকূলীয় এলাকার শ্রমজীবী মানুষের অন্যতম প্রধান খাবার ছিল এটি। কিন্তু অতিরিক্ত ঝিনুক আহরণ ও দূষণের কারণে ঝিনুকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে বেড়ে গেছে এর দাম। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় ঝিনুক। যেমন লন্ডনের কোনো দামি রেস্তোরাঁয় এক ডজন ঝিনুক খেতে অন্তত ৫১ পাউন্ড খরচ করতে হবে আপনাকে।

সাদা ট্রাফলের বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ছত্রাকগুলোর একটিসাদা ট্রাফল
সাদা ট্রাফল বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ছত্রাকগুলোর একটি। এটি জন্মায় গাছের শিকড়ে। তা-ও আবার কেবল উত্তর ইতালির পাইডমন্ট অঞ্চলের কিছু গাছে। সাদা ট্রাফলের চাষ করা যায় না। অনেকে এই ট্রাফলের চাষ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণেই এর দাম এত বেশি। সাদা ট্রাফলের মধ্যে রয়েছে এক দারুণ সুগন্ধ। ম্যাকাওয়ের এক ক্যাসিনোর মালিক একটি সাদা ট্রাফলের জন্য ২০০৭ সালে ৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার খরচ করেছিলেন। ট্রাফলটির ওজন ছিল দেড় কেজি। মাটির নিচে জন্মানো সামান্য(!) ছত্রাকের এমন চড়া মূল্য একটু বেশিই বলতে হয়। 

ওয়াগইউ মাংসের পরতে পরতে থাকে চর্বিওয়াগইউ বিফ
ওয়াগইউ বিফ হলো জাপানের বিশেষ জাতের গরুর মাংস। চার জাতের জাপানি গরুর যেকোনোটি থেকেই আসতে পারে এই মাংস। ওয়াগইউ মাংসের পরতে পরতে থাকে চর্বি। রান্নার সময় চর্বি গলে মাংসে মিশে যায়। ফলে মাংস হয় খুবই নরম। মুখে দিলে মনে হবে যেন গলে যাচ্ছে! 

ওয়াগইউ মাংসের দাম এত বেশি হওয়ার কারণ, এসব গরু লালন-পালনে খরচ অনেক। গরুগুলোকে কঠোর নিয়ম মেনে পালন করতে হয়। বাছুরগুলোকে শুরু থেকেই বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া হাত দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করতে হয়।

জাপানে সবচেয়ে দামি ওয়াগইউ মাংস হচ্ছে ‘কোবে বিফ’। প্রতি কেজির দাম ৫০০ পাউন্ড। এই মাংসের স্টেকের দাম কয়েক হাজার ডলার। 

বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির তালিকায় শীর্ষে কোপি লুয়াককোপি লুয়াক কফি
বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির তালিকায় শীর্ষে কোপি লুয়াক। এই কফির দাম প্রতি কেজি ৭০০ ডলার। যে কফি বিন থেকে এটি তৈরি হয়, সেই বিনগুলোকে পাম সিভেটকে (একধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী) খাওয়ানো হয়। কফি বিনগুলো পাম সিভেট খাওয়ার পর সেগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিডে জারিত হয়। এরপর মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে কফি বিন। সেই বিন থেকে তৈরি হয় কফি।

এই প্রক্রিয়া জানার পরও অনেকের প্রিয় কফির তালিকায় রয়েছে কোপি লুয়াক। এই কফির ভক্তদের দাবি, সিভেটের পেটেই আসলে এই কফির সঙ্গে যুক্ত হয় ভিন্ন স্বাদ। 

মুজ পনির একধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ দুধ দিয়ে তৈরি হয়মুজ চিজ
চিজ বা পনির সব দেশেই দামি দুগ্ধজাত পণ্যের একটি। তবে এর মধ্যে মুজ বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ মূল্যের পনির। এটি মুজের দুধ থেকে তৈরি করা হয়। কেবল সুইডেনে মুজ পনির প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রতি কেজি মুজ পনিরের দাম প্রায় এক হাজার ডলার।

মুজ হলো হরিণজাতীয় একটি প্রাণী। উত্তর আমেরিকায় এ প্রজাতির প্রাণীকে বলে মুজ, আর ইউরেশিয়া (রাশিয়া অন্যতম) অঞ্চলে বলে এলক। রাশিয়া, সুইডেন ও কানাডাতে দুধের জন্য মুজের বাণিজ্যিক খামার রয়েছে।

মুজ পনির তৈরি মোটেই সহজ কাজ নয়, তাই এর দাম এত বেশি। সুইডেনে ‘দ্য এলক হাউস’ ফার্ম নামে একটি খামার পরিচালনা করেন দুই বোন। এই খামার মুজ পনিরের বৃহত্তম ও প্রধান উৎপাদক।

ফোয়ে গ্রা মূলত হাঁস বা রাজহাঁসের লিভার দিয়ে তৈরি করা হয়ফোয়ে গ্রা
ফোয়ে গ্রা বেশ দামি একটি খাবার। এটি মূলত হাঁস বা রাজহাঁসের লিভার (কলিজা) দিয়ে তৈরি করা হয়। এর বিশেষত্ব হলো হাঁসের কলিজা স্বাভাবিক আকারের চাইতে প্রায় দশ গুণ পর্যন্ত বড় করা হয়। যারা ফোয়ে গ্রা খাবারের ভক্ত, তাঁরা অনেক খরচ করতে রাজি। তবে মানুষের এই লোভের করুণ বলি হচ্ছে হাঁস। 

বিশেষ এই খাবার তৈরির জন্য হাঁস বা রাজহাঁসকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানো হয়। কলিজা স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ বড় করতে গলা দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে জোর করে খাবার খাওয়ানো হয়। মূলত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গেলানো হয় হাঁসগুলোকে। এরপর প্রক্রিয়াজাত কলিজা টিনজাত করে বিক্রি করা হয়।

অবশ্য হাঁসের প্রতি নিষ্ঠুরতার কারণে কয়েক হাজার বছর ধরে চলা এই প্রথার বিরুদ্ধে এখন অনেক দেশে আইন করা হয়েছে। 

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফল মনে করা হয় ডেনসুক ওয়াটার মেলনকেকালো তরমুজ
বিশ্বের দামি খাবারের মধ্যে ডেনসুক ব্ল্যাক ওয়াটার মেলন একটি। এটি বিশেষ প্রজাতির তরমুজ। যার একটির দাম ছয় হাজার ডলারের বেশি। এটি কেবল জাপানে উৎপাদিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফল মনে করা হয় কালো ডেনসুক মেলনকে। এই তরমুজ এত ব্যয়বহুল যে এগুলো খোলাবাজারে বিক্রি হয় না। ঐতিহ্যগতভাবে জাপানিদের বিয়ের একটি মূল্যবান উপহার হিসেবে দেওয়া হয় কালো তরমুজ। 

বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে তামান্না-ই-জাহান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত