Ajker Patrika

দিল ওহি মেরা ফাস গ্যেয়ি

দিল ওহি মেরা ফাস গ্যেয়ি

আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গ্যেয়ি
বিনোদ বেণির জরিন ফিতায়
আন্ধা ইশক মেরা কাস গ্যেয়ি...
-কাজী নজরুল ইসলাম

বিদ্রোহীরা কখনো প্রেমের ফাঁদে পড়ে না—এমন কথায় যাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের ভুল ভাঙিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কানেরও দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া,/আঁখ ফিরা দিয়া চোরি কার নিন্দিয়া।…’ উপেক্ষা করার উপায় নেই, নিখাদ প্রেম বিদ্রোহীরও ঘুম চুরি করে। প্রিয়তমার চুলের ঘ্রাণে ঘোর লাগে তারও। বিদ্রোহী হলেও কবি নজরুলের হৃদয়ে তো শ্যামের বাঁশি কম বাজেনি। নজরবন্দী প্রিয়দর্শিনীকে তিনি নানা সময়ে নানা রূপে সাজিয়েছেন, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর সৃষ্টিতে। শুধু যদি নজরুলসংগীতের কথাই বলা হয়, অর্থাৎ নজরুলসংগীতের দেউড়িতে যাঁরা অহর্নিশ ঘুরে বেড়ান, তাঁদের জানতে বাকি নেই, এই সংগীতসম্ভারে প্রেমের নানান গানে কবি প্রিয়দর্শিনীর রূপ ও সাজের বর্ণনা করেছেন। 

নজরুলের নারীরা
বিদ্রোহী হলেও কবি তো। কল্পনা ছিল তাই আকাশছোঁয়া। বাস্তবে যতটা না, কল্পনায় প্রিয় নারীদের তিনি সাজিয়েছেন একেবারে নিজের মতো করে। যত দূর কল্পনা যেতে পারে। প্রিয় নারীদের কেন্দ্র করে সাজসজ্জার যে চিত্রকল্প নজরুল এঁকেছেন, তা অসাধারণ ছিল।

চাপা রঙের শাড়ি,​​ খয়েরি টিপ
গায়ে চাপা রঙের শাড়ি জড়ানো। কপালে ফুটেছে খয়েরি টিপের বিন্দু। প্রিয়তমকে বরণের জন্য মালা চন্দনে থালা সাজিয়ে জানালার ধারে অপেক্ষমাণ সে নারী। কল্পনা আরেকটু প্রশস্ত করলে সেই অপেক্ষমাণ নারীর পুরু কাজল টানা চোখে সুদূর থেকে আসা অতিথির জন্য তৃষ্ণা উপলব্ধি করা যাবে। এই তৃষ্ণা যেন কৃষ্ণপক্ষে চাঁদের অপেক্ষার মতোই প্রবল।
দেব খোঁপায় তারার ফুল প্রেমিক তো তার হৃদয়ের রানিকে সবচেয়ে আরাধ্য উপকরণেই সাজাতে চাইবে, তাই নয় কি? কবি সে আশা বেঁধেই খোঁপায় তারার ফুল গুঁজে দিয়েছেন। বিজলির জ্বলজ্বলে ফিতায় মেঘবরণ চুল বেঁধে দেওয়ার ইচ্ছেও জানিয়েছেন। শুধু কি তাই? জোছনাকে চন্দন করে গায়ে মাখাবেন প্রিয়ার, রামধনুর রং হবে আরাধ্য সে নারীর পায়ের আলতা। 

চৈতালি-সাঁঝে কুসমি শাড়ি
‘পরো পরো চৈতালি-সাঁঝে কুসমি শাড়ি’ গানে কবি মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন প্রিয় নারীকে। কল্পস্বর্গে ভেসে চৈত্রের সন্ধ্য়াবেলায় প্রিয়দর্শিনীকে তিনি সাজিয়েছেন স্বর্গীয়রূপে। হৃদয় নিংড়ে সবটুকু লাল দিয়ে তার পায়ে আলতা পরাতে চেয়েছেন। খোঁপায় পরতে বলেছেন বেল-যূথীকার মালা।

বাঁধব না, বাঁধব না চুল
‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল/ এনে দে এনে দে/ নৈলে বাঁধব না, বাঁধব না চুল...’। সঙ্গে কুসুম রঙের শাড়ি আর চুড়ির আবদারও ছিল এ গানে। 

 মডেল: মুনিয়া আফরিন, ছবি: মঞ্জু আলমসজ্জা উপকরণ
সাজ একলা চলে না। সঙ্গে চলে অনুষঙ্গ। নজরুল জানতেন, প্রেমের অনুগামী যেমন লাল গোলাপ, সজ্জার সহচর তেমন অনুষঙ্গ। চাপা রঙের শাড়ি পরে টিপ না দিলে চলবে কেন? এত কিছুই যখন হচ্ছে, তখন পায়ের আলতাই কেন দূরে থাকবে? এই সবকিছু নিয়েই তো সজ্জা।

আলতা: নজরুলসংগীতের সম্ভারে কয়েকটি গানে হৃদয় নিংড়ে হোক বা রংধনু থেকে রং আরোহণ করেই হোক, আরাধ্য নারীর পায়ে টুকটুকে লাল আলতা পরিয়েছেন কবি। নয়তো সাজ যেন অপূর্ণই রয়ে যেত।

সুরমা: ‘মোমের পুতুল’ গানে তিনি লিখেছেন, ‘সুর্মা-পরা আঁখি হানে আস্‌মানে,/ জ্যোৎস্না আসে নীল আকাশে তার টানে।/ ঢেউ তুলে নীল দরিয়ায় দিল-দরদী/ নেচে যায় দুলে দুলে দূরে সুদূর...’।

নূপুর: শুকনো পাতা ও খেজুরপাতার নূপুরের কথা বলেছেন কবি। ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ ও ‘রুম ঝুম ঝুম ঝুম’ গানে এই দুটি অনুষঙ্গের কথা উল্লেখ আছে। নজরুলসংগীতে ঘুঙুরের ঝুমুর ঝুমুর ধ্বনির কথাও বলা হয়েছে।  

টিপ: সাজের পরিপূর্ণতা টিপের কথা একেবারেই এড়িয়ে যাননি কবি। কল্পস্বর্গের বাসিন্দা হয়ে চৈতালি সাজে প্রিয়ার কপালে কাচপোকার টিপও পরাতে বাকি রাখেননি।   

ফুল: ডালা সাজানো বা খোঁপায় নারীর সাজ উপকরণ হিসেবে ও প্রেমার্ঘে গাঁদা, পলাশ, যূথী, বেলফুল, চম্পা, চামেলির নাম পাওয়া যায়।

এ ছাড়া কানের দুল, বাজু, চুড়ির উল্লেখও রয়েছে নজরুলসংগীতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত