Ajker Patrika

ফ্যাশনে রিকশাচিত্র

রিক্তা রিচি, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪১
ফ্যাশনে রিকশাচিত্র

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনি এই মুহূর্তে যে রিকশায় বসে আছেন, সেই রিকশার পেছনে টিনের ঝুলবোর্ডে যে রঙিন চিত্র ঝোলানো থাকে, তার জন্য বাংলাদেশের আলাদা এক পরিচিতি আছে?

১৯৩০-এর দশকে ঢাকায় রিকশার প্রচলন হয় আর ১৯৫০ সালের দিক থেকে রিকশাচিত্রের ধারাবাহিক ইতিহাস জানা যায়। এরপর রিকশার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে রিকশার নগরী হিসেবে ঢাকা শহর গিনেস রেকর্ড তৈরি করে।

রিকশার পেছনের টিনের পাতের ঝুলবোর্ডে যে চিত্রকর্ম ঝোলানো থাকে তা-ই রিকশা আর্ট। বিভিন্ন উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয় রিকশাচিত্র আঁকার ক্ষেত্রে। ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা শহরের বিশেষ ঘরানার একদল শিল্পী রিকশাচিত্র এঁকে চলেছেন নীরবে-নিভৃতে। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্যবাহী চিত্রশিল্পকে রিকশার ঝুলবোর্ড থেকে বের করে ফ্যাশনে ও অনুষঙ্গে ব্যবহার করার প্রবণতা শুরু হয়েছে। পোশাক, ফ্যাশন ও ঘরের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নকশার জন্য রিকশাচিত্রকে কাজে লাগিয়েছেন বিবি রাসেল কিংবা লিপি খন্দকারের মতো ডিজাইনার ও শিল্পীরা। তরুণ উদ্যোক্তা এবং ডিজাইনারদের কেউ কেউ এখন হাতে এঁকে কিংবা ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমে রিকশাচিত্রকে আরও বিচিত্রভাবে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন পণ্যে। এখন পোশাক ও ফ্যাশন অনুষঙ্গের বাইরে ঘরের বিভিন্ন অনুষঙ্গ, যেমন: কাচের গ্লাস, মগ, কেটলি, কাচের বোতল, প্লেট, গয়নার বাক্স, মোবাইল কভার, ট্রে, ট্রাঙ্ক, অফিসের ফাইল বক্স ইত্যাদি নকশা করতে রিকশাচিত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।

অনেকে তরুণ উদ্যোক্তার মতো ফিনারির স্বত্বাধিকারী ড চিং চিং কিংবা স্বপ্নযাত্রার কর্ণধার রাজন কুমার মজুমদার তাঁদের বিভিন্ন পণ্যে রিকশাচিত্রের ব্যবহার করছেন।

ফিনারির উদ্যোক্তা ড চিং চিং বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পমাধ্যমটি হারিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা হয়তো রিকশা পেইন্টের কথা শোনাতে পারব; কিন্তু দেখাতে পারব না। এ রিকশা পেইন্টকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। আমার মোট ২৯টি পণ্য আছে, যেখানে রিকশা পেইন্ট ফুটিয়ে তুলেছি।’

মডেল: লিউনা  শাড়ি: স্বপ্নযাত্রা মেকআপ: স্পা ব্রাইডাল ছবি: রনি বাউলসাধারণত এনামেল রং দিয়ে রিকশা পেইন্ট করা হয়। ড চিং চিং তাঁর প্রায় সব পণ্যে এনামেল রং ব্যবহার করছেন। তবে শাড়ি, পাঞ্জাবি, প্যান্টের মতো পোশাকের ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন অ্যাক্রেলিক রং। এ রং দিয়ে প্যান্টে ফুটিয়ে তোলেন সুন্দরবন, কখনো ময়ূর, কখনো তাড়া খাওয়া হরিণী অথবা শিকারের খোঁজে হাঁ করে থাকা বাঘ।

২০১৬ সালে কাজ শুরু করেন ড চিং চিং। নিজ কাজের মাধ্যমে রিকশা পেইন্টকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি। ড চিং চিং বলেন, ‘আমার পাশাপাশি আরও অনেকে এ কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে আমার মনে হয়, কাজের মাধ্যমে রিকশা পেইন্টকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব সামনের দিনে।’
রিকশা পেইন্ট নকশার কাপ, কেটলি, টি-পট, ট্রে, ফাইল ক্যাবিনেট নান্দনিকতার ক্ষেত্রে এক ভিন্ন মাত্রা তৈরি করে।

ড চিং চিং বলেন, ‘উদ্যোগের শুরু থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। এখন অনেকে কাজ করছেন এবং কোভিডের কারণে সাড়াটা একটু কমে গেছে। কোভিডের আগপর্যন্ত আমাদের পণ্যের সাড়া বেশ ভালোই ছিল। তবে এ সময়ে আমি আমার কারিগরদের বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি। আশা করছি, আবারও আমরা আগের পর্যায়ে পৌঁছে যাব।’

মডেল: লিউনা  শাড়ি: স্বপ্নযাত্রা মেকআপ: স্পা ব্রাইডাল২০১৪ সালে ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজ শুরু করে স্বপ্নযাত্রা। এর কর্ণধার রাজন কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রিকশা পেইন্টকে শাড়ির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা। আমাদের প্রতিটি শাড়ির পেছনে আছে আলাদা গল্প।’ রাজন জানান, ২০-৬০ বছর বয়সী মানুষের জন্য তাঁরা রিকশাচিত্রের নকশায় শাড়ি, প্যান্ট শাড়ি, স্কার্ফ, স্কার্ট, কুর্তি পিস, কাফতানসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি করছেন। তাঁরা রিকশাচিত্রকে ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন। কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন তসর, সামু ও গুজরাটি সিল্ক।

ফিনারি ও স্বপ্নযাত্রা ছাড়াও বিভিন্ন জিনিসপত্রে রিকশা পেইন্ট ব্যবহার করে ডিজাইনের কাজ করছে যথাশিল্প, নৈসর্গিকসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ পোশাকের নকশায়, কেউ শোপিসে আবার কেউ ফ্যাশন অনুষঙ্গে রিকশাচিত্র ব্যবহার করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শোরুম কিংবা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজে খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে রিকশাচিত্রের নকশা দিয়ে তৈরি করা সব পণ্য।

দরদাম
ফিনারির রিকশা পেইন্টের মগ প্রতি পিসের দাম ৩৮০ টাকা, ৬ পিসের রিকশা পেইন্টের কাপ সেট ২ হাজার ৬৪০ টাকা, রিকশা পেইন্টের গয়নার বাক্স প্রতি পিস ১ হাজার ৫০০ টাকা, বোতল প্রতি পিস ৪৫০ টাকা, কলমদানি ১৮৫ টাকা, কেটলি ১ হাজার ২০০ টাকা, অফিসের ফাইল বক্স ১ হাজার ২০০ টাকা।
স্বপ্নযাত্রার কুর্তির দাম ১ হাজার ২২০ থেকে শুরু। শাড়ি ২ হাজার ৪২০ থেকে ৩ হাজার ১২০ টাকা এবং পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ৮২০ থেকে শুরু।
আর্টজেনিক্সের রিকশাচিত্রে চিত্রিত কেটলির দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা, জগ ও গ্লাস সেট ১ হাজার ৬৫০ টাকা, হারিকেন ১ হাজার ৫০০ টাকা, খেলনা বেবিট্যাক্সি ৫৭০ টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত