Ajker Patrika

নদীর নাম তারাছা

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১১: ২১
নদীর নাম তারাছা

অনেক দিন হয় যাই যাই করেও যাওয়া হচ্ছিল না পাহাড়ি নদী তারাছার কাছে। কারণ এই নদী দেখতে গেলেই দেখা হয়ে যাবে দেবতাখুম। সুযোগ মিলে যাওয়ায় একমুহূর্ত দেরি না করে দে ছুট। রাতের গাড়িতে চড়ে ছুটলাম বান্দরবান। বাস যখন বান্দরবান ঢুকছে, তখন রাতের অন্ধকার কেটে চারপাশ ফরসা হতে শুরু করেছে। জানালার ফাঁক গলে চোখমুখে বিশুদ্ধ হাওয়ার ঝাপটা লাগল খানিক। সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যেই বান্দরবান শহরে উপস্থিত হলাম আমরা।

বেশ কয়েক বছর পর যাওয়া। অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। অটোরিকশায় চড়ে সোজা হোটেলে। সাফসুতরো হতে হতেই চান্দের গাড়ি এসে হাজির। নাশতা করেই ছুটলাম রোয়াংছড়ি। ছবির মতো সুন্দর পাহাড়ি সর্পিল পথ। যেতে যেতে রোয়াংছড়ি বাজার। সেখানে দেবতাখুম ভ্রমণের ফরম পূরণ করে ছুটলাম কচ্ছপতলী লিরাগাঁও আর্মি ক্যাম্প। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে এবার হেঁটে গাইড অঙ্কিনের সঙ্গে চললাম শীলবান্ধাপাড়া।

যতই এগিয়ে চলেছি, ততই সৌন্দর্যের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি। পথটিতে এক অন্য রকম মায়া আচ্ছন্ন করে রেখেছে। শঙ্খ নদের উপনদী তারাছার তীর ধরে প্রায় ঘণ্টাখানেক যাওয়ার পর ইঞ্জিন বোটে চড়ি। ঝিরি ভেবে ভুল করলেও এটি আসলে নদী। দেবতাখুম যাওয়ার সময় কোথাও কোথাও তারাছা নদীর বুকের ওপর হাঁটুসমান পানি, কোথাও একটু বেশি।

সাদমান-সানজিদনদীর দুই তীরে পাহাড়। সেই পাহাড়ে প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়া ঘন সবুজ বন। পাহাড়ের ফাঁক গলে আসা হিমেল হাওয়া হাইকিংয়ের ক্লান্তি দূর করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বোটচালক আমাদের একটি বাজারে নামিয়ে দেন। বাজারটি পর্যটকে গিজগিজ করছে। আগতদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে দায়িত্বরতদের ঘন ঘন উচ্চ স্বরে মাইকিং চলছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। নিরাপত্তাকর্মীরাও যথেষ্ট সতর্ক নিয়মশৃঙ্খলার বিষয়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

সিরিয়াল নম্বর ১২। ডাক আসতেই লাইফ জ্যাকেট পরে সবাই প্রস্তুত। নৌকায় চড়ব, নাকি বাঁশের ভেলায়—ভাবছি। দ্বিতীয়টি বেছে নেওয়ার কারণে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা। এরপর সবাই বেশ কয়েকটি ভেলায় ভেসে যাত্রা শুরু করি। তারাছা নদীর স্বচ্ছ টলটলে পানিতে ভেলা সামনে এগোতে থাকে। দুপাশে খাড়া হয়ে উঠে গেছে বিশাল পাথুরে পাহাড়। তার মাঝ দিয়েই আমরা চলেছি। যতই এগোতে থাকি, ততই সরু হতে থাকে দেবতাখুমের অভ্যন্তর। স্থানীয় মানুষেরা গর্তকে খুম বা কুম বলে থাকে। জায়গাটা বিশাল পাহাড়ের মাঝে হওয়ায় হয়তো তারা এর নাম রেখেছে দেবতাকুম। ভেলা ভাসাতে ভাসাতে একেবারে দুই পাহাড়ের মাঝের সবচেয়ে সরু জায়গায় পৌঁছালাম।

তানবীর-খানএ এক দারুণ জায়গা। ছোট-বড় অজস্র পাথর প্রাকৃতিকভাবেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ পাশটায় গভীরতা কম। কিন্তু পানি প্রবাহের ক্ষিপ্রতা অনেক বেশি। টলটলে পানির নিচের সবকিছুই দেখা যায়। সূর্যের আলো এখানে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না। ভরদুপুরেও মনে হবে সন্ধ্যা। এ যেন কোনো মায়াবিনী তার ভালোবাসার চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দিতে চাইছে।

ইচ্ছে ছিল হেঁটে আরও কিছু দূর এগোব। কিন্তু দায়িত্ববোধ ও মানবতা বলে কথা। কারণ আমরা ফেরার পর, সেই ভেলায় চড়ে আরও অনেকেই উঠবেন। তাই আর দেরি না করে ফিরতে শুরু করি। নিরাপত্তাকর্মীদের তথ্যমতে, দেবতাখুমের কোথাও কোথাও ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত পানির গভীরতা। তাই লাইফ জ্যাকেট না পরে সেখানে যাওয়ার দুঃসাহস করবেন না।

যাবেন কীভাবে ঢাকা থেকে বান্দরবান হয়ে রোয়াংছড়ি বাজার। সেখানে স্থানীয় গাইড মিলবে। থানায় নাম-ঠিকানা লিখে চলে যেতে হবে কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্প। সেখান থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেবতাখুম যাওয়ার অনুমতি মিলবে।

 খাওয়াদাওয়া 
যাওয়ার সময়ই কচ্ছপতলী বাজারে থাকা পছন্দমতো কোনো হোটেলে খাবার অর্ডার করে যাবেন।

সময় ও খরচাপাতি 
যাওয়া-আসা দুই রাত এবং মাঝে এক দিন হলে মাত্র তিন হাজার টাকায় দেবতাখুম ঘুরে আসা যাবে। তবে পরিবার নিয়ে একটু আরামে যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় বেশি হবে।

টিপস

  • সঙ্গে রাখবেন তিন কপি ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • লাইফ জ্যাকেট ছাড়া দেবতাখুমে ভ্রমণ করবেন না।
  • স্থানীয় অধিবাসীদের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করুন।

লেখক: চিফ অর্গানাইজার, দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

সাবেক ‘র’-এর প্রধানের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত