Ajker Patrika

ক্যারিয়ার পরামর্শ: চাকরির প্রস্তুতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এগিয়ে রাখবে

এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
ক্যারিয়ার পরামর্শ: চাকরির প্রস্তুতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এগিয়ে রাখবে

তানজিলুর রহমান অন্তর। শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। পরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে খাদ্য প্রকৌশলে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অষ্টম হন। তাঁর চাকরি পাওয়ার পেছনের গল্প শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে স্থির করি, বিসিএস ক্যাডার অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হব। যেহেতু আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না, তাই বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে এবং শিক্ষকতা করে কিছু টাকা জমাই। সেই সঙ্গে মায়ের মৃত্যুর পর যে মাসিক পেনশন পেতাম, সেগুলো দিয়ে নির্বিঘ্নে আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিশ্রম করি।

প্রস্তুতি শুরুর আগে
যেকোনো যুদ্ধে যাওয়ার আগে নিজের শক্তিমত্তা, সামর্থ্য ও দুর্বলতা ভালোভাবে জেনে নেওয়াটা জরুরি, অন্যথায় হার অবশ্যম্ভাবী। যেহেতু অনেক দিন নিয়মিত পড়ালেখার মধ্যে ছিলাম না, সেহেতু প্রথমে ছোট ছোট পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করি এবং সে অনুযায়ী ধীরে ধীরে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যেমন বিসিএস ও ব্যাংক প্রস্তুতি একসঙ্গে নেওয়া যায় না বা কোচিং না করলে এসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব না—ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার কোচিং না করে মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে একদিকে যেমন ৪৪তম বিসিএস লিখিত ফলাফলপ্রত্যাশী এবং ৪৫তম প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হয়েছি। অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অফিসার, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষক, সমন্বিত সাত ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (২০১৮ সাল ভিত্তিক), সমন্বিত আট ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (২০১৯ ভিত্তিক) এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে (৮ম স্থান) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমার প্রস্তুতির আলোকে চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ তুলে ধরছি। 

প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি
নৈতিকতা ও সুশাসন, বিজ্ঞান—এ দুটি বিষয় বাদে বিসিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালকের প্রস্তুতিতে তেমন পার্থক্য নেই। তাই বিসিএস সিলেবাস অনুসারে বাংলা ব্যাকরণের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বই ও যেকোনো একটি বাংলা বইয়ের থেকে মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে হবে। বাংলা সাহিত্যের জন্য বিগত ব্যাংক ও বিসিএসে বারবার আসা লেখকদের সাহিত্যকর্মগুলো ভালোভাবে জানতে হবে। ইংরেজির জন্য ব্যাংক ভোকাবুলারির যেকোনো একটি বই ভালোভাবে শেষ করতে হবে এবং অচেনা শব্দগুলো বাক্যে প্রয়োগের মাধ্যমে মনে রাখতে হবে, যা পরে লিখিততেও লেখার মান বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া ইংরেজি ব্যাকরণের ব্যতিক্রম নিয়মগুলো আয়ত্তের পাশাপাশি যে নিয়মগুলোর প্রয়োগ বারবার পরীক্ষায় এসেছে তা চিহ্নিত করে উদাহরণ হিসেবে মনে --রাখলে ইংরেজিতে ভালো করা সহজ হবে। ইংরেজি সাহিত্যের জন্য বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির বিগত বছরের প্রশ্ন এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী পড়ে রাখলে শুধু সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে নিয়মিত ধারণা পেতে পত্রিকা ও যেকোনো একটি মাসিক সাধারণ জ্ঞানের বই পড়াই যথেষ্ট। তবে গণিত আমরা ভালো বুঝলেও ইংরেজিতে গণিত প্রশ্ন বুঝতে আমাদের দুর্বলতা কাজ করে। এ জন্য বাজারে প্রচলিত যেকোনো একটি ব্যাংক ম্যাথের বই এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির গণিত বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ অনুশীলন করলে ভালো ফলাফল সম্ভব।

লিখিত
বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালকের লিখিত পরীক্ষার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়। মাত্র ১২০ মিনিট সময়ে একটি অনুচ্ছেদ থেকে প্রশ্নের উত্তর লেখা, ৫টি গণিত, ১৫-৩০টি সাধারণ জ্ঞান, একটি অনুবাদ এবং ৩টি নিবন্ধ লিখতে হবে, যার পূর্ণমান ২০০। লিখিত পরীক্ষার ওপরেই অনেকাংশে সফলতা নির্ভর করে। এত কম সময়ে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে প্রতিটি অংশে দক্ষতা থাকা জরুরি। শুরু থেকেই শুধু প্রিলিমিনারি পাসের লক্ষ্য না রেখে লিখিতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মাঝে লিখিত পরীক্ষা হয়। গণিতে ভালো করার জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সন বই, একটি ব্যাংক ম্যাথ রিটেনের বই—পুরোটা ভালোভাবে শেষ করা উচিত। অনুষদভিত্তিক প্রস্তুতি না নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। ১০০ মার্কসের ফোকাস ও আরগুমেন্ট রাইটিংয়ের জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়া, গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও তথ্যগুলো আলাদা করে চর্চার বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত একটি বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংলিশ ফোকাস রাইটিং লেখার অভ্যাস আপনার লেখা মানসম্পন্ন হবে। অনুবাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত পত্রিকার সংবাদের অনুবাদ এবং অনুবাদ শেখার যেকোনো বই অনুসরণ করে প্রাথমিক নিয়মগুলো আয়ত্ত করে নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় সহকারী পরিচালক পদের সঙ্গে বিসিএসের মিল রয়েছে গণিত, অনুবাদ, ফোকাস রাইটিং, অনুচ্ছেদ থেকে উত্তর করা ইত্যাদি। তাই এসব বিষয়ের প্রস্তুতি আপনাকে এগিয়ে রাখবে চাকরির প্রতিযোগিতায়।

ভাইভা প্রস্তুতি
মৌখিক পরীক্ষা হলো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। আপনাকে ৫-১০ মিনিটের মধ্যে বোর্ডের বিজ্ঞ প্রশ্নকর্তাদের কাছে প্রমাণ করতে হবে কেন আপনি সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের যোগ্য। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যাঁরা আপনার পরীক্ষা নিচ্ছেন তাঁরা আপনার থেকে অনেক বিষয়ে ভালো ধারণা রাখেন এবং আপনার পক্ষেও সব প্রশ্নের উত্তর জানাটাও অসম্ভব। তাই প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তরে একটু কৌশলী হয়ে আপনার যেসব বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি আছে, সেদিকে প্রশ্নগুলো নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। উত্তর জানা না থাকলে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখিত বলতে পারাটাও একটি বড় গুণ। প্রশ্নকর্তারাও আশা করেন না আপনি সব উত্তরই সঠিক পারবেন। তবে যে প্রতিষ্ঠানের যে পদে আপনি ভাইভা দিচ্ছেন, আপনার পঠিত বিষয় এবং যদি কোথাও কর্মরত থাকেন সেই সব বিষয়ের সাধারণ প্রশ্ন না পারাটা আপনার নম্বর অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়াটা জরুরি। এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার শুরুতে ‘ব্যাংকার’স ভাইভা বোর্ড’ বইটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পরামর্শগুলো পড়তে পারেন। তাহলে ভাইভাভীতি কেটে যাবে এবং আপনার প্রস্তুতিও সহজ হয়ে যাবে।

প্রস্তুতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে চাকরির প্রস্তুতিতেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। এ ক্ষেত্রে চাকরিবিষয়ক ফেসবুক গ্রুপগুলো, অনলাইন কোচিংয়ে মডেল টেস্ট দেওয়া, গুগল ট্রান্সলেটরের ব্যবহার এবং ই-পেপার পড়া। অবসর সময়ে এ মাধ্যমগুলো হতে পারে আপনার জ্ঞান অর্জনে সহায়ক। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে মোবাইল ফোন যেহেতু অনেকটা অংশজুড়ে থাকে তাই এ মাধ্যম ব্যবহারেও আপনার প্রস্তুতিকে করবে শাণিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়গুলো থেকে সুফল পেয়েছি। সর্বোপরি সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেই সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। আপনার যোগ্যতা, পরিশ্রম, মেধা ও ভাগ্যের সমন্বয়েই আপনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত