Ajker Patrika

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দুঃখের কথা

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দুঃখের কথা

‘ভাই, কষ্টের কথা কারে কমু। আপনে তবু জিগাইলেন। আমি কেমনে সংসার চালাই, বাড়ির সবাই কেমন আছে? আইজ তুরি কেউ জিগায়ও নাই। মাস শেষে যা পাই, দোকানের বাকি আর চাইল কিনতেই শেষ। বাজার, পোলাপানের খরচ, পোশাক-আশাকের কথা ভাবতেই শরীর দুর্বল অইয়া যায়। ঋণ পরিশোধের ভয়ে কারও কাছে হাত পাতবারও পারি না। বাধ্য অইয়া মাঝেমধ্যেই রোজা থাইকা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি’—দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌরশহরের টেংরি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল আমিন।

টাঙ্গাইল সদর, মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল, কালিহাতী উপজেলার অন্তত ২৫টি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের জীবনযুদ্ধের করুণ কাহিনির কথা জানা গেছে। এসব ইমামের কারও বেতন মাসিক, কারও বাৎসরিক। মাসিক বেতনধারীরা পান ২ থেকে ৭ হাজার টাকা। বাৎসরিক বেতনধারীরা পান ৭০ থেকে ৯০ হাজার। মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন আরও কম। অনেক মসজিদ কমিটির লোকজন তাঁদের সঙ্গে বাড়ির কাজের লোকের মতো আচরণ করেন। অনেকে বাসার বাজার-সদাইও করান। চাকরি হারানোর ভয়ে আপত্তি করতে সাহস পান না সমাজের অবহেলিত এসব সম্মানিত মানুষ।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা যে সম্মানী পান, তা দিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর। তারপরও বাধ্য হয়ে বুকে পাথরচাপা দিয়ে হাসিমুখে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তাঁরা। তাঁদের সমস্যার কথা কমিটির লোকজনও আমলে নিতে চান না। কমিটির মর্জির ওপর নির্ভর করে চাকরিও।

টাঙ্গাইলের ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় ৮ হাজারের অধিক মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদগুলোতে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম মিলিয়ে ২০ হাজারের অধিক ধর্মীয় ব্যক্তি কর্মরত আছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার খারজানা ঘোনারপাড় বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম কালাচান মৌলভি মুন্সি ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে ইমামতি করেন। বর্তমানে তাঁর সম্মানী মাসিক ২ হাজার টাকা। কালাচান মুন্সি বলেন, ‘আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য ইমামতি করি। কী পাইলাম, কী পাইলাম না, তা ভাবি না। গেরস্থালি করেই সংসার চলে।’

মুয়াজ্জিন আবুল বাশার বলেন, ‘আমি যে সম্মানী পাই, তা বলার মতো না। মসজিদের কাছেই দোকান দিয়েছি। তা দিয়াই সংসার চলে।’

মধুপুর উপজেলার মাগুন্তিনগর গ্রামের মাওলানা আরিফ আদনান বলেন, ‘মসজিদ কমিটির লোকজন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন ভাবার সময় পান না। তাঁরা রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গ্রুপিং, সামাজিক দ্বন্দ্ব আর মসজিদের উন্নয়ন নিয়ে মেতে থাকেন। ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনের কথা তুললেই নানা সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি ইমামকে চাকরিচ্যুতও করেন অনেকে।’

ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসকেরা ধর্মীয় মূল্যবোধের লোকজনকে অবহেলিত রাখার যে চেষ্টা চালিয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের সমস্যার কথা শোনা এবং দুঃখের কথা ভাবার কেউ নেই।’

ঘাটাইলের চাপড়ী, রসুলপুর, মধুপুরের কাঁকড়গুনি, মাগুন্তিনগর, অরণখোলা, হাগুড়াকুড়ি এলাকার কয়েকটি মসজিদের ইমাম জানান, তাঁদের মাসিক বেতন দেওয়া হয় না। বছরে দেওয়া হয় ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। দুই ঈদে তা পরিশোধ করা হয়। অন্য সময়ে তাঁরা কোনো বেতন-ভাতা পান না।

টাঙ্গাইলের স্থানীয় সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি ও শিক্ষাবিদ বজলুর রশিদ খান বলেন, ‘আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এবং শেষ বিদায় জানাজার সঙ্গী ইমামদের মাসিক আয় খুবই কম। ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যে টাকা সম্মানী পান, তা দিয়ে কোনোভাবে চার সদস্যের সংসার চালানো অসম্ভব। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের বেতনের কথা ভাবা উচিত।’

টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণ, পরিচালনা, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম ও খতিবদের দেখভালের কোনো দায়িত্বই আমাদের কাজের আওতাভুক্ত নয়। তবে ইমামদের জন্য সীমিত আকারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য মডেল মসজিদ প্রকল্পের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন ওই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। সেখানে ইমামের বেতন ১৫ হাজার, মুয়াজ্জিনের বেতন ১০ হাজার এবং খাদেমের বেতন ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন কমিটির লোকজনই দিয়ে থাকেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

দেশি ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতে সরকার বেশি পছন্দ করে

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

সংঘর্ষের পর সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি বন্ধ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পাইলটকে প্রলুব্ধ করে মাদুরোকে ধরার মার্কিন গুপ্ত অভিযান ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসি-কৌতুক যখন গুনাহের পর্যায়ে চলে যায়

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

হাসি মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এটি মনকে প্রফুল্ল রাখে, ক্লান্তি দূর করে এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে মধুর করে তোলে। জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো হাসি-কৌতুকেও পরিমিতি বোধের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা অতিরিক্ত হাসি যেমন হৃদয়কে কঠোর করে, তেমনি অশালীন রসিকতা মানুষের চরিত্র ও মর্যাদাকে কলুষিত করে তোলে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। সাহাবায়ে-কেরামের সঙ্গে তিনি কখনো হালকা রসিকতা করতেন; কিন্তু কখনোই তাঁর মুখ থেকে অসত্য বা আঘাতমূলক কোনো কথা বের হতো না। হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি তো মজা করেও সত্য ছাড়া কিছু বলি না।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৯০)। এই হাদিসে শিক্ষণীয় বিষয় হলো—মজার মধ্যেও সত্যতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের সমাজে অনেকেই হাস্যরসের নামে মিথ্যা, গালি কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করেন, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

হাসি-কৌতুক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হৃদয়ের কোমলতা নষ্ট হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অতিরিক্ত হাসি হৃদয়কে মেরে ফেলে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৯৩)। অনবরত হাসাহাসি ও কৌতুক অনুচিত কাজ। ইসলাম মানুষকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেনি; বরং আনন্দকে করেছে সংযমের মাধ্যমে সুন্দর ও অর্থবহ। কারও দোষ, আকৃতি, জাতি, ভাষা বা আর্থিক অবস্থা নিয়ে উপহাস করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা হুজুরাত: ১১)

বর্তমান সময়ে বিনোদনের নামে টিভি-অনুষ্ঠান, ইউটিউব-ভিডিও কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন কৌতুক ছড়িয়ে পড়ছে। প্র্যাংকের নামে অন্যের সম্মান নষ্ট করতেও মানুষের দ্বিধাবোধ হচ্ছে না। অথচ একজন মুমিনের হাসি-কৌতুক হওয়া উচিত বিনয়ী, শালীন ও কল্যাণমুখী, যা কাউকে আঘাত না করে; বরং ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বাড়ায়।

অতএব একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য হাসি-কৌতুকে পরিমিতি বোধ বজায় রাখা জরুরি।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

দেশি ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতে সরকার বেশি পছন্দ করে

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

সংঘর্ষের পর সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি বন্ধ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পাইলটকে প্রলুব্ধ করে মাদুরোকে ধরার মার্কিন গুপ্ত অভিযান ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৯ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪৫ মিনিট
ফজর০৪: ৪৬ মিনিট০৬: ০১ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৪৪ মিনিট
আসর০৩: ৪৫ মিনিট০৫: ২০ মিনিট
মাগরিব০৫: ২২ মিনিট০৬: ৩৭ মিনিট
এশা০৬: ৩৮ মিনিট০৪: ৪৫ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—

চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট

সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—

খুলনা: ০৩ মিনিট

রাজশাহী: ০৭ মিনিট

রংপুর: ০৮ মিনিট

বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

দেশি ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতে সরকার বেশি পছন্দ করে

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

সংঘর্ষের পর সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি বন্ধ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পাইলটকে প্রলুব্ধ করে মাদুরোকে ধরার মার্কিন গুপ্ত অভিযান ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্তানকে নামাজি বানাবেন যেভাবে

সাকী মাহবুব
পরিবার। ছবি: সংগৃহীত
পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আর নামাজ হলো এই ব্যবস্থার প্রাণ। নামাজ শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি মানুষের আত্মার প্রশান্তি, নৈতিকতার ভিত্তি এবং সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। তাই সন্তানের চরিত্র গঠনের প্রথম পাঠই হওয়া উচিত নামাজের শিক্ষা।

প্রশ্ন হলো, কীভাবে মা-বাবা সন্তানকে নামাজপ্রিয় ও নামাজি হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন?

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ হলো দ্বীনের স্তম্ভ।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি হাদিসে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের ৭ বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও, আর ১০ বছর বয়সে তা না পড়লে শাসন করো।’ (সুনানে আবু দাউদ)

অতএব ছোটবেলা থেকে সন্তানকে নামাজের প্রতি অনুরাগী করে তোলার নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে।

সন্তান কখনো এক দিনে নামাজি হয় না। এটি একটি ধৈর্য, ভালোবাসা ও উদাহরণের দীর্ঘ যাত্রা। এই যাত্রার প্রথম ধাপ হলো, নিজে নামাজি হওয়া। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়; তারা যা দেখে, তা-ই শেখে। মা-বাবার নিয়মিত নামাজ তাদের চোখে সবচেয়ে বড় শিক্ষা। একটি পরিবারে নামাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে কিছু কার্যকর উপায় হলো, ঘরে নামাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা।

আজানের সময় আজান দেওয়া এবং সবাইকে একত্রে নামাজে আহ্বান করা। ছোটদের জন্য আলাদা জায়নামাজ, টুপি ও ওড়না দেওয়া, যাতে তারা উৎসাহ পায়। নামাজ শেষে সবাই মিলে দোয়া করা, এতে শিশুর মনে নামাজের প্রতি ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়। শিশুর কাছে নামাজ যেন ভয় বা শাস্তি নয়, বরং আনন্দের একটি অভ্যাস হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

নামাজ পড়লে ছোট পুরস্কার দিন। নবী ও সাহাবাদের নামাজের কাহিনি গল্প আকারে বলুন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ইতিবাচক প্রেরণা ভয় বা শাস্তির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। তাই ‘নামাজ না পড়লে আল্লাহ রাগ করবেন’ বলার পরিবর্তে বলা উচিত—‘নামাজ পড়লে আল্লাহ খুশি হন, তোমার জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখেন।’ এইভাবে ভালোবাসা ও পুরস্কারের ভাষায় সন্তানকে নামাজের প্রতি অনুরাগী করে তুলুন।

সন্তান যে পরিবেশে বড় হয়, তা তার চরিত্রে গভীর প্রভাব ফেলে। তাই নামাজি বন্ধু ও সঙ্গ তৈরি করুন। মসজিদভিত্তিক শিশু কার্যক্রম বা ইসলামিক সংগঠনে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন। স্কুল ও সমাজে নামাজবান্ধব পরিবেশের জন্য উদ্যোগ নিন। সন্তানকে নামাজি বানানো মানে শুধু তাকে নামাজ শেখানো নয়; বরং তার হৃদয়ে আল্লাহভীতি, নৈতিকতা ও আত্মিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, ভালোবাসা ও সঠিক দিকনির্দেশনা।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে মা-বাবাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমার পরিবারকে নামাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেও এতে স্থির থাকো।’ (সুরা তোহা: ১৩২)

সুতরাং মা-বাবা যদি নিজের ঘরে নামাজের আলো জ্বালান, তবে সেই আলো একদিন পুরো সমাজকে আলোকিত করবে নামাজি প্রজন্মের মাধ্যমে। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সন্তানদের নামাজি হিসেবে কবুল করে নিন।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পাংশা, রাজবাড়ী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

দেশি ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতে সরকার বেশি পছন্দ করে

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

সংঘর্ষের পর সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি বন্ধ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পাইলটকে প্রলুব্ধ করে মাদুরোকে ধরার মার্কিন গুপ্ত অভিযান ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় তিনবারের চ্যাম্পিয়ন হাফেজের ডেঙ্গুতে মৃত্যু

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৩৬
বিশ্বজয়ী হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজয়ী হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের গৌরব ছড়িয়ে দেওয়া তিনবারের বিশ্বজয়ী হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী।

আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর হাফেজ ত্বকীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

বিশ্বজয়ী এই হাফেজ জর্ডান, কুয়েত ও বাহরাইনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন। দেশে-বিদেশে অসংখ্য কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি অর্জন করেন অসামান্য সাফল্য।

২০১৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে জর্ডানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৬২টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন হাফেজ ত্বকী। পরবর্তী সময় কুয়েত ও বাহরাইনেও তিনি কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।

প্রতিভাবান এই হাফেজ ২০০০ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন। তাঁর বাবা মাওলানা বদিউল আলম একজন মাদ্রাসাশিক্ষক।

হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন তরুণ এই হাফেজের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

দেশি ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতে সরকার বেশি পছন্দ করে

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

সংঘর্ষের পর সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি বন্ধ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পাইলটকে প্রলুব্ধ করে মাদুরোকে ধরার মার্কিন গুপ্ত অভিযান ফাঁস

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত