Ajker Patrika

পদ্মা সেতুর ডলারের পুরো চাহিদা আমরাই পূরণ করছি

ফারুক মেহেদী
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১৭: ৫৬
পদ্মা সেতুর ডলারের পুরো চাহিদা আমরাই পূরণ করছি

করোনায় কেমন চলছে ব্যাংকিং খাত? অগ্রণী ব্যাংক কীভাবে আমানত ও রেমিট্যান্সে শীর্ষ হতে পারছে? পদ্মা সেতুতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে কোনো সংকট হচ্ছে কি না? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন 
ফারুক মেহেদী।

আজকের পত্রিকা: কেমন চলছে আপনাদের ব্যাংকিং ব্যবসা?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: এখন মুনাফার সময় নয়, বেঁচে থাকাটাই বড় কথা। এ সময়ে গ্রাহকেরা সুবিধা পেয়েছে, তাদের ঋণের কিস্তি দেওয়া লাগছে না। তাদের টাকাই আমাদের আয়। ফলে এখান থেকে আয় বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে আমরা রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি করেছি। প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এসেছে। গতবারের তুলনায় আমদানি ও রপ্তানি থেকে আয় একটু কম। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে আশা করি এ ঘাটতিটা আমরা পূরণ করতে পারব। পশ্চিমা দেশ থেকে ক্রয়াদেশ আসছে। সামনে ভালো ব্যবসা হবে।
আজকের পত্রিকা: করোনায় মুনাফায় কী প্রভাব পড়েছে?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: আমাদের অস্বাভাবিক মুনাফা করার কোনো দরকার নেই। যেমন জুন মাসে আমাদের সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার মুনাফা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে হলে এটা হতো ৫০০ বা সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। আমাদের গ্রাহক ভিত্তি শক্ত। বড় গ্রাহকদের আমরা নিয়ে এসেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অগ্রণী ব্যাংকে ভাবমূর্তি গড়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছি। যেসব বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ সরকারি ব্যাংকে আসেনি, তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে খুশি। আমরা খরচ প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ব্যাংকের লাভের অংশ বাড়িয়েছি। 
আজকের পত্রিকা: আমানতে আপনারা কতটা সফল?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: আমরা সেবার মান বাড়িয়েছি। ফলে আমাদের আমানতের পরিমাণ বেড়ে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে সোনালী ও ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ কোটি টাকা ছিল। এখন আমরাসহ তিন ব্যাংক আমানতে এক লাখ কোটি টাকার ক্লাবে। বেশি আমানত হলেও এর বিপরীতে গ্রাহকদের লাভ দিতে হয়। আবার ওই ভাবে ঋণও দিতে পারছি না। বেসরকারি খাতে ঋণ যাচ্ছে না। এতে আয় কমেছে। সরকারি ব্যাংক হিসেবে আমরা শুধু মুনাফা করব না। মানুষের সেবাও করতে হবে। 
আজকের পত্রিকা: রেমিট্যান্সে ভালো করছেন কীভাবে?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: রেমিট্যান্সে সরকারের ২ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি। এর ফলে আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে গেছে। যারা হয়তো কোনো দিন অগ্রণী ব্যাংকে টাকা পাঠায়নি। এখন তারাও চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন মহল প্রশংসা করছে। আমি ২০০৯ সাল থেকে রেমিট্যান্সের যুদ্ধ শুরু করি। এখন আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে এক নম্বরে আছি। করোনা মহামারির মধ্যে আমরা একটা অ্যাপ তৈরি করেছিলাম। প্রবাসীরা এই অ্যাপের মাধ্যমে সহজে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এই অ্যাপটি সিঙ্গাপুরের ফিনটেক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। 
আজকের পত্রিকা: আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ও ঋণ আদায়ে কী করছেন?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: আপনি যদি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা ধরেন, দেখবেন এখানেও আমরা এক নম্বর। একসময় আমরা এক নম্বর ছিলাম না। এটা সম্ভব হয়েছে গ্রাহকের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কের কারণে। আপনি জেনে আরও খুশি হবেন যে এখন আমাদের অনাদায়ি ঋণ আদায়েও আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে ভালো অবস্থানে আছি। এখন তা ১১-১২ শতাংশের মধ্যে আছে। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন তা ছিল ২৯ শতাংশ। 
আজকের পত্রিকা: পদ্মা সেতুতে বৈদেশিক মুদ্রা দিচ্ছেন। এতে সংকট হচ্ছে কি না?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: পদ্মা সেতুতেও অগ্রণী ব্যাংক শতভাগ বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে আসছে। যদিও সমস্যা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা দেবে বলেছিল। তবে আজ পর্যন্ত আমরা তাদের থেকে ১ ডলারও নিইনি। আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছি। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে যত বৈদেশিক মুদ্রা লাগছে, এর পুরোটাই আমরা দিচ্ছি এবং সামনেও দিতে পারব। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন


আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে কী সাড়া দেবে ব্যাংকগুলো?
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম: ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ অলস টাকা পড়ে আছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতে চায়। তবে সুদের হার কম বলে খুব সাড়া পড়বে মনে হচ্ছে না। যারা কিছুই পারছে না তারা হয়তো সাড়া দেবে। আমাদের প্রয়োজন হবে না। আমি মনে করি, সুদের হার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে হলেও রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুললে সাড়া পড়বে।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত