Ajker Patrika

গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ

গাজায়ও হবে অবৈধ ইহুদি বসতি

  • ঘোষণা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে গাজা অধিগ্রহণ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়।
  • ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের পক্ষের নেতারা।
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প ইসরায়েলকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, সেখানকার ভৌত-অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে। ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে এ জন্য কোনো বাজেট কিংবা খরচ কত হতে পারে তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন কোনো পরিকল্পনা নেয়নি, কত সেনা পাঠানো হতে পারে, তারও কোনো পরিকল্পনা নেই।

কয়েকটি দেশ ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা সমর্থন দিচ্ছে। তবে এ ঘটনা যদি সত্যি হয়, তবে গাজায় জাতিগত নিধনের ঘটনাই ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি গ্রহণ করলে আরেকটি ঘটনা সেখানে ঘটবে। তা হলো, এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল সবুজ সংকেত পাবে অবৈধ বসতি স্থাপনের। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েল বসতি স্থাপন করছে। আর ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে সব এলাকাতেই বসতি স্থাপনের সুযোগ পাবে ইসরায়েলে।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট ডাস বলেন, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হলো, ট্রাম্প এটিই বলে দিয়েছেন, ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েল তার শেষ লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি দিয়ে সমর্থন করবে। এই এলাকা খুব দ্রুতই পশ্চিম তীরের মতো হয়ে যাবে, কোনো সন্দেহ নেই।

ইসরায়েলের যারা অবৈধ বসতি স্থাপনের পক্ষে, তারা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী বেজালেল স্মোট্রিচ ইহুদি তীর্থযাত্রীদের ইসরায়েলে ফিরে আসার বিষয় নিয়ে বাইবেলের একটি অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি অসাধারণ পৃথিবী গড়ে তুলব।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। যেসব দেশ ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে, তাদের গাজাবাসীকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

হামাসের সঙ্গে ইরায়েলের যুদ্ধবিরতির কারণে নেতানিয়াহুর জোট ত্যাগ করেছেন ইসরায়েলের কট্টর ইহুদিবাদী আইনপ্রণেতা ইতামার বেন-জিভির। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে গাজা নিয়ে এ সমাধানের কথা আমি বলেছিলাম, তখন অনেকেই আমাকে ব্যঙ্গ করেছিলেন।’

নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এ ঘোষণা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, গাজায় আসলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এরপরই মূলত ট্রাম্পের প্রশাসনের লোকজন গাজা নিয়ে ভিন্ন চিন্তাভাবনা শুরু করে।

ট্রাম্পের এই গাজা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নতুন কোনো কিছুর সুরুয়াত নয়। বরং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে, সেটার ওপরও প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে ইসরায়েল প্রশাসনের যারা অবৈধ বসতি স্থাপন করা নিয়ে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্পের নতুন নীতিতে তারা খানিকটা হালে পানি পেয়েছেন।

ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশকে চটিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র সৌদি আরব, যারা কি না ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল, তারা ফিলিস্তিনের পক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তারা বলে দিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা ইরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান বলেছে, ইসরায়েলি বসতি বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, তা অবশ্যই থামাতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিরা আছেন দুশ্চিন্তায়। তাঁরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিধ্বস্ত হলেও গাজা ছাড়বেন না তাঁরা। তবে ট্রাম্প আবার আরেক দিক থেকে ফিলিস্তিনিদের চাপে ফেলেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ পরিচালিত শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনআরডব্লিউএ) তহবিল দেওয়া বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এরপর পেছনেও রয়েছে ইসরায়েলের চাওয়া। দেশটির অভিযোগ, এই সংস্থা হামাসকে সাহায্য করে থাকে। হামাসের বাতাবরণ হয়েছে তাদের হাত ধরে। অর্থাৎ ইসরায়েলেরে চাওয়া অনুসারেই হাঁটছেন ট্রাম্প। পশ্চিম তীরের পর গাজাও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে কি না, সে শঙ্কা বাড়ছেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরব আমিরাতে লটারিতে সোনার বার জিতলেন বাংলাদেশি যুবক হায়দার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিগ টিকিট লটারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ জনপ্রিয়। ছবি: সংগৃহীত
বিগ টিকিট লটারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ জনপ্রিয়। ছবি: সংগৃহীত

দুই বছর ধরে চেষ্টার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনপ্রিয় বিগ টিকিট লটারিতে ভাগ্য খুলল প্রবাসী বাংলাদেশি হায়দার আলীর। লটারির সাপ্তাহিক ড্রতে ২৪ ক্যারেটের ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি সোনার বার জিতেছেন তিনি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৪ টাকা)।

পাঁচ বছর ধরে আমিরাতের আল আইন শহরে বাস করছেন ৩১ বছর বয়সী হায়দার আলী। কাজ করেন বৈদ্যুতিক পণ্যের দোকানে। পরিবার থাকে বাংলাদেশে।

একদিন বিগ টিকিটের বিক্রয় দলের ফোনকলের মাধ্যমে এ লটারির খবর পান তিনি। এরপর নিয়মিতভাবে টিকিট কিনতে শুরু করেন কখনো নিজের নামে, কখনো বা অন্যের নামে নিবন্ধন করে।

গত দুই বছর ধরে চার-পাঁচজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে মিলে প্রতি মাসে যৌথভাবে অর্থ জোগাড় করে লটারিতে অংশ নিচ্ছিলেন হায়দার। আশা ছিল, একদিন ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই। অবশেষে ধৈর্যের ফল মিলল।

সরাসরি সম্প্রচারে লটারির ফল ঘোষণার সময় উপস্থাপক রিচার্ড যখন ফোন করে সুখবরটি জানান, তখন মুহূর্তের জন্য হতবাক হয়ে যান হায়দার। প্রশ্ন করেন, ‘কত গ্রাম?’ উত্তর শুনে বলেন, ‘২৪ ক্যারেট? আচ্ছা!’

বিস্মিত হয়ে ফোনটি বন্ধুকে দেন নিশ্চিত হতে, এটা সত্যি কিনা, নাকি কোনো ঠাট্টা।

রিচার্ডের মুখে যখন ‘বিগ টিকিট’ নামটি শোনা গেল, তখন আর ধরে রাখা গেল না আনন্দ। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন সবাই, কারণ অবশেষে ভাগ্য খুলেছে তাঁদের।

সোনার বারের দাম শুনেই হায়দার আলীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। এটা সত্যিই এক বড় চমক।’

পুরস্কারটির অর্থ কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা এখনো ঠিক করেননি হায়দার। তবে তাঁর ভাষায়, এই জয় তাঁকে নতুন উদ্যম ও আশায় ভরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা আমাকে প্রতি মাসে লটারিতে অংশ নিতে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।’

বিগ টিকিটের প্রশংসা করে হায়দার আলী আর বলেন, ‘এটা খুব ভালো একটি কোম্পানি। এর প্রক্রিয়াটাও বেশ সহজ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দক্ষিণ কোরিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির অনুমতি ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ইপিএ
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ইপিএ

দক্ষিণ কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ অনুমোদন দেন ট্রাম্প।

এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের এক উপদেষ্টা জানান, বিনিয়োগ ও জাহাজ নির্মাণ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতে এগিয়েছে দুই দেশ। ট্রাম্পও বলেছেন, চুক্তিটি ‘প্রায় চূড়ান্ত’।

আজ বৃহস্পতিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাদের এখনকার ডিজেলচালিত সেকেলে ধীরগতির সাবমেরিনের পরিবর্তে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির অনুমোদন দিয়েছি।’

আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরি করবে ফিলাডেলফিয়া শিপইয়ার্ডে, আমাদের প্রিয় আমেরিকাতে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিশাল প্রত্যাবর্তন হচ্ছে।’

দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিশ্বের অন্যতম উন্নত হলেও, পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রপালশন প্রযুক্তি কোথা থেকে আসবে, সে বিষয়ে ট্রাম্প কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অকাস (Aukus) প্রকল্পে কাজ করছে। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন পাবে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই প্রযুক্তি ভাগ করে নিয়েছে, তাও সেই পঞ্চাশের দশকে।

গতকাল বুধবার লি জে মিয়ুং ট্রাম্পকে পারমাণবিক সাবমেরিনের জন্য জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেন।

লি ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত সাবমেরিন তৈরির প্রস্তাব করছি না। বরং, ডিজেলচালিত সাবমেরিনের পানির নিচে স্থায়িত্ব কম, যা আমাদের উত্তর কোরিয়া বা চীনের সাবমেরিনগুলোকে অনুসরণ করার ক্ষমতাকে সীমিত করে।’

লি-এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যান্য প্রেসিডেন্টরাও পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কয়েক দশক ধরে এর বিরোধিতা করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র।

সিউলের প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস জানিয়েছে, ট্রাম্পের জন্য আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজের ডেজার্টের ওপরে ‘PEACE!’ (শান্তি!) শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এটি দুই নেতার প্রথম সাক্ষাতের প্রতিধ্বনি, যখন তাঁরা কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির রক্ষায় ‘শান্তি স্থাপনকারী’ (পিসমেকার) এবং ‘গতি সঞ্চারকারী’ (পেসমেকার) হিসেবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করায় উত্তেজনা এখনো তুঙ্গে রয়েছে।

বুধবার ট্রাম্প জানান, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে কোনো বৈঠক আয়োজন করতে সক্ষম হননি, ফলে বহু বছরের কূটনৈতিক স্থবিরতার পর সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে চলা তীব্র জল্পনার অবসান হলো।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া এ ধরনের সাবমেরিন অর্জন করলে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হবে। অকাস চুক্তির মতো দক্ষিণ কোরিয়া সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবমেরিনের জন্য পারমাণবিক প্রপালশন সেবা ও জ্বালানি আশা করছে।

কিমবল আরও বলেন, এই ধরনের সাবমেরিন সাধারণত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এর জন্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পক্ষ থেকে জটিল এক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে যা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য প্লুটোনিয়াম নিষ্কাশনের জন্য প্রযুক্তি বা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা অর্জন করা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য প্রযুক্তিগত এবং সামরিকভাবে অপ্রয়োজনীয়, যা পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনেও ব্যবহার হতে পারে।’

কিমবল আরও সতর্ক করে বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ করতে চায়, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত মিত্রদের কাছ থেকে আসা এই ধরনের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা, যেমনটি তারা শত্রুপক্ষের এই দ্বৈত-ব্যবহারের প্রযুক্তিগুলিতে প্রবেশাধিকার অস্বীকার করার জন্য কাজ করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তোষামোদ: ট্রাম্পকে তুষ্ট করার অব্যর্থ হাতিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ০৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তুষ্ট করতে চাইলে প্রশংসা বা তোষামোদই সেরা অস্ত্র। দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের সময় যেভাবে বিভিন্ন দেশের নেতারা আচরণ করছেন, তাতে এমনটি মনে হচ্ছে। এমনকি পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতারা যেভাবে আচরণ করেছেন, তা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট।

আত্মগরিমা ও দাম্ভিকতায় যার তুলনা মেলা ভার, সেই ট্রাম্পকে তাঁর পাঁচ দিনের এশিয়া সফরজুড়ে স্তুতি ও শ্রদ্ধার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে রেখেছেন আঞ্চলিক নেতারা। সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

তার আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ট্রাম্পের ‘অদম্য সাহস’ ও ‘দৃঢ়তার’ প্রশংসা করে বলেছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতির মতো ‘প্রায় অসম্ভব’ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন তিনি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টায় ‘মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এমনকি তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে উপহার দিয়েছেন একটি স্বর্ণমুকুট, যা প্রাচীন সিলা রাজ্যের নিদর্শনের প্রতিরূপ, সঙ্গে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গ্র্যান্ড অর্ডার অব মুগুংহওয়া’।

এই প্রশংসা ও উপহারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে এমন এক সময়, যখন মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। চীনও পিছিয়ে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যার সম্পর্ক ট্রাম্পের সময় বিশেষ করে টানাপোড়েনে ছিল, সেই বেইজিংও এবার প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিয়েছে। সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ট্রাম্প ও সি দুজনই ‘বিশ্বমানের নেতা’, যারা ‘দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’।

এর আগে গত আগস্টে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তিচুক্তিতে ভূমিকা রাখেন ট্রাম্প। এরপর দুই দেশের শীর্ষ নেতাই ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, ‘ট্রাম্প মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মিরাকল ঘটিয়ে দিয়েছেন।’ তারও আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। এমনকি তিনিও ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত করার কথা দিয়েছেন।

কূটনীতির ক্ষেত্রে হাসি আর করমর্দন নতুন কিছু নয়। কিন্তু সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশনের সিনিয়র ফেলো হেনরি গাওয়ের মতে, এশীয় নেতারা এবার যেন ট্রাম্পের মন জয় করতে বাড়তি উদ্যম দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়ায় রাজা ও সম্রাটদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, তার দীর্ঘ ইতিহাস আছে এবং নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা প্রদর্শনের এই ঐতিহ্য সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত।’

শুধু এশিয়ায় নয়, অন্য জায়গাতেও ট্রাম্পকে খুশি করতে নেতারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। গত জুনে ন্যাটো সম্মেলনে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা প্রশমনের ভূমিকাকে তুলনা করেছেন ‘স্কুলের মাঠে মারামারি থামাতে এগিয়ে আসা এক অভিভাবকের’ সঙ্গে।

ট্রাম্পের আত্মগরিমা বরাবরই তার সমালোচকদের নিশানায় থেকেছে, বিশেষ করে যারা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। ট্রাম্পের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার ২০২৩ সালে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে সব সময় নিজের স্বার্থ ও নিজের অহংকার পূরণের বিষয়টাকেই অগ্রাধিকার দেবে—এমনকি দেশের স্বার্থেরও আগে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

আল জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সির সঙ্গে ‘অসাধারণ বৈঠক’ শেষে চীনের ওপর শুল্ক ৪৭ শতাংশে নামানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৫৯
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হবে। তবে শর্ত হলো—চীন আবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা শুরু করবে, বিরল খনিজ রপ্তানি অব্যাহত রাখবে এবং অবৈধ ফেন্টানিল-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকের পর তিনি এই ঘোষণা দেন। ২০১৯ সালের পর এটাই ছিল দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। ট্রাম্পের ঝোড়ো এশিয়া সফরের শেষ প্রান্তে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সফরে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্যিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।

বুসান ছাড়ার পর প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি এটা ছিল এক অসাধারণ বৈঠক।’ এ সময় তিনি জানান, চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হবে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ওঠানামা শুরু হয়। প্রধান এশীয় সূচকগুলো ও ইউরোপের ফিউচার মার্কেট লাভ-ক্ষতির মধ্যে দোদুল্যমান ছিল। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১০ বছরের উচ্চতা থেকে কিছুটা নেমে আসে, আর যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন ফিউচার দুর্বল হয়ে পড়ে।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানের আশায় ওয়াল স্ট্রিট থেকে শুরু করে টোকিও পর্যন্ত শেয়ারবাজারগুলো বৈঠকের আগে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে নড়িয়ে দিয়েছে এবং ব্যবসায়ী আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।

এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত দুই নেতার বৈঠক প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠক শেষে ট্রাম্প সি চিন পিংয়ের সঙ্গে করমর্দন করে তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন। পরে বিমানবন্দরে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকেরা জানান, চীনের সঙ্গে একটি কাঠামোগত সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে, যা চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এড়াবে এবং চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখবে—এই খাতে চীনই বিশ্বের প্রধান সরবরাহকারী। তবে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় উভয় দেশই যে এখন আরও কড়া অবস্থান নিতে প্রস্তুত, তা স্পষ্ট। ফলে এই নতুন বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি কত দিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত