Ajker Patrika

কে হতে যাচ্ছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি এবং কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে। ছবি: এএফপি
নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি এবং কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে। ছবি: এএফপি

কানাডার ভোটাররা ২৮ এপ্রিল জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। এই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অনুপস্থিতিতে কানাডার দুটি প্রধান দল কনজারভেটিভ ও লিবারেল পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি এবং কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে। এই নির্বাচনেই ঠিক হবে, দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। এক দশক ধরে দায়িত্ব পালনের পর তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দীর্ঘদিন ধরেই লিবারেল পার্টির ভেতরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ট্রুডোর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় তাঁকে দলীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে দুর্বল করে তোলে। কনজারভেটিভ পার্টি তখন জরিপে লিবারেলদের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল, ফলে ট্রুডোর পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার ওপর কঠিন অর্থনৈতিক শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এমনকি তিনি কানাডাকে ৫১তম মার্কিন অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার মতো উসকানিমূলক মন্তব্য করেন। এই অবস্থায় ট্রুডো সরে দাঁড়ালে লিবারেল দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি লিবারেল পার্টির নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় বিজয় অর্জন করেন। অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক খাতে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকলেও, এই রাজনৈতিক পদ তাঁর জীবনের প্রথম। শপথ নেওয়ার মাত্র ৯ দিনের মাথায় কার্নি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

আগাম নির্বাচনের ঘোষণা কেন?

কার্নির সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক হুমকি ও কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে সৃষ্ট জাতীয় উদ্বেগ।

দ্বিতীয়ত, তিনি নিজেই সংসদ সদস্য নন, ফলে পার্লামেন্টে নিজের অবস্থান থেকে বিরোধীদের মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বিরোধীদের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে তিনি আগাম নির্বাচনের পথ বেছে নেন।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও তাদের অবস্থান

নির্বাচনে পাঁচটি বড় রাজনৈতিক দল থাকলেও মূল লড়াই লিবারেল পার্টির মার্ক কার্নি ও কনজারভেটিভ পার্টির পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রের মধ্যে।

দুজনই কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপসহীন অবস্থান নিয়েছেন। তবে জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি ও গৃহনির্মাণ সংকট নিয়ে তাঁদের নীতিতে পার্থক্য রয়েছে।

পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে, একজন অভিজ্ঞ সংসদ সদস্য এবং দৃঢ়পন্থী রাজনীতিবিদ। তিনি সরকার ছোট করা, ব্যবসায়িক বিধিনিষেধ কমানো এবং ঘরবাড়ি নির্মাণ সহজ করতে চান। তিনি অপরাধ দমনে কঠোর নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি দেশের সংবিধান ও মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘনের সম্ভাবনাও রয়েছে তাঁর পরিকল্পনায়। তবে তিনি ‘নটউইথস্ট্যান্ডিং ক্লজ’ নামের একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কথা বলেছেন।

অন্যদিকে মার্ক কার্নি নিজের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি সরকারি তত্ত্বাবধানে বড় পরিসরে ঘরবাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক কেন্দ্রপন্থী অবস্থান নিয়ে দুদিক থেকেই ক্ষুব্ধ ভোটারদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন।

তবে কনজারভেটিভ পার্টি কার্নির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলেছে। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্রুকফিল্ডের চেয়ারম্যান থাকার সময় তিনি নাকি কর আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া, বিতর্কিত কার্বন ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ অনেক কনজারভেটিভ নীতি দলে আনার জন্য কার্নিকে সমালোচনা করা হচ্ছে।

বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), কিউবেকভিত্তিক ব্লক কিবেকোয়া এবং পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি—এই তিনটি দল জাতীয়ভাবে খুব একটা আলোচনায় আসতে পারছে না।

নির্বাচন পদ্ধতি

কানাডার ফেডারেল নির্বাচন আসলে ৩৪৩টি পৃথক সংসদীয় আসনে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত চার বছর অন্তর নির্বাচন হয়। সংবিধান অনুযায়ী আগামী অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এবার আগাম নির্বাচন ডাকা হয়েছে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার অনুসরণে যে দল ১৭২টির বেশি আসন পাবে, তারাই সরকার গঠন করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, ছোট দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকার চালাতে হবে।

২০২১ সালের নির্বাচনে লিবারেলরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। পরে এনডিপির সঙ্গে ‘কনফিডেন্স অ্যান্ড সাপ্লাই অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করে সরকার গঠন করেছিল। এবার লিবারেলরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কারণ, সংখ্যালঘু সরকার থাকলে যেকোনো সময় অনাস্থা ভোটে সরকার পড়ে যেতে পারে।

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কনজারভেটিভরা ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল। তখন জরিপকারীরা প্রায় ৯৯ শতাংশ সম্ভাবনা দেখিয়েছিল যে, পোয়েলিয়েভ্রের দল বিশাল ব্যবধানে জিতবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক আবহ দ্রুত বদলে যায়।

এখন কানাডার ১২টি বড় জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিই লিবারেলদের এগিয়ে রাখছে। এমনকি লিবারেলদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। বিশেষ করে দেশের ভোটসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে তাদের অবস্থান খুবই শক্তিশালী।

কানাডার মূল ভোট ২৮ এপ্রিল। তবে অগ্রিম ভোট গ্রহণ খুব শিগগিরই শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত