Ajker Patrika

‘অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র’, সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় ‘গোপন অভিযানের’ অনুমতি ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য তিনি তাঁর দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে অনুমোদন দিয়েছেন। নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের অভিযানকে এটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ভেনেজুয়েলার ভেতরেই সামরিক হামলার কথা বিবেচনা করছেন—যা হবে এক চরম পদক্ষেপ। এর আগে ক্যারিবীয় সাগরে নৌকায় প্রাণঘাতী হামলার একাধিক ঘটনায় জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ও মার্কিন বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব হামলা অবৈধ।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সিআইএ-এর নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র চলছে।’

তিনি এক ভাষণে বলেন, ‘ক্যারিবীয় সাগরে যুদ্ধ নয়… সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র নয়… সিআইএ-এর নেতৃত্বে অভ্যুত্থান নয়।’ ওই ভাষণটি তিনি দেন এমন এক কমিটির বৈঠকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের পর গঠিত হয়েছিল। ওয়াশিংটন দাবি করেছে, ওই অভিযান ছিল ‘মাদকবিরোধী।’

ট্রাম্পের সিআইএ-কে নিয়ে মন্তব্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে। আগেই পত্রিকাটি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোপন অভিযানের বিষয়ে শ্রেণিবদ্ধ এক ক্লাসিফাইড নথির ভিত্তিতে খবর প্রকাশ করেছিল।

ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রশাসন ভেনেজুয়েলার ‘ভূখণ্ডেও হামলা চালানোর বিষয়টিও ভাবছে।’ তবে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করেন সিআইএ কি মাদুরোকে হত্যার অনুমোদন পেয়েছে, তখন তিনি কোনো উত্তর দেননি। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় ভেনেজুয়েলা এখন চাপে আছে।’

ট্রাম্প দাবি করেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রে বন্দিদের ছেড়ে দিচ্ছে, এমনকি মানসিক হাসপাতালের রোগীদেরও পাঠাচ্ছে। এছাড়া, তিনি অভিযোগ করেন, ভেনেজুয়েলা সমুদ্রপথে বিপুল পরিমাণ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করছে। তবে এই দাবিগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এমন হুমকি আসছে—ট্রাম্পের এই দাবি ভিত্তিহীন।

এ মাসের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়, তারা এখন মাদকচক্রের সঙ্গে ‘সশস্ত্র সংঘাতে’ রয়েছে। মাদক প্রবাহ ঠেকানোর অজুহাতে এই সামরিক পদক্ষেপকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এ নিয়ে কংগ্রেসে দুই দল থেকেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাঁদের অভিযোগ, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ট্রাম্প কার্যত যুদ্ধ শুরু করেছেন।

বুধবার সিনেটের পররাষ্ট্র কমিটির ডেমোক্র্যাট সিনেটর জিন শাহিন বলেন, তিনি মাদক পাচার দমনের পক্ষে হলেও প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সীমা ছাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সিআইএ-কে গোপন অভিযান চালানোর অনুমোদন দেওয়া, নৌযানে প্রাণঘাতী হামলা চালানো এবং ভূমিতে অভিযানের ইঙ্গিত দেওয়া—এসবের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে এক সরাসরি সংঘাতে টেনে নিচ্ছে, যেখানে কোনো স্বচ্ছতা, নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। আমেরিকান জনগণের জানার অধিকার আছে—প্রশাসন কি আরেকটি যুদ্ধে দেশকে জড়িয়ে ফেলছে, সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলছে, নাকি শাসন পরিবর্তনের অপারেশন চালাচ্ছে।’

এ পর্যন্ত ক্যারিবীয় অঞ্চলে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন এই হামলাগুলোতে।

বুধবার আরও একটি নৌকা লক্ষ্য করে হামলার পর মাদুরো রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন। তিনি জানান, দেশের পাহাড়, উপকূল, স্কুল, হাসপাতাল, কারখানা ও বাজার রক্ষায় সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক মিলিশিয়াদের মোতায়েন করা হবে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এরা ‘নার্কোটেররিস্ট’—যদিও কোনো প্রমাণ দেননি। তিনি আরও বলেন, এসব হামলার লক্ষ্য ছিল ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ নামের এক গ্যাং সদস্যদের নির্মূল করা। কিন্তু হোয়াইট হাউস এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

গত সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নৌযানে এই হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যানও মন্তব্য করেন, ‘এসব অবৈধ হত্যাকাণ্ড—যা কোনো আদালতেই টিকবে না।’

এ বছর শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ তুলে অনেক ভেনেজুয়েলানকে দ্রুত নির্বাসিত করে মধ্য আমেরিকার কুখ্যাত এক জেলে পাঠায়। এছাড়া ট্রাম্প শত শত হাজার ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর অস্থায়ী বৈধ মর্যাদা বাতিলেরও চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, মাদুরো নিজেই মাদকচক্রের প্রধান। মাদুরো অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ধরিয়ে দেওয়ার তথ্যের জন্য পুরস্কার বাড়িয়ে ৫ কোটি ডলার করেছে।

মাদুরোকে নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি গত বছরের নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত