Ajker Patrika

বাণিজ্যিক আদালত হচ্ছে, মামলা নিষ্পত্তি ৯০ দিনে

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
বাণিজ্যিক আদালত হচ্ছে, মামলা নিষ্পত্তি ৯০ দিনে

বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে প্রস্তাব ও আইনের খসড়া পাঠানোর পর আইন মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, বাণিজ্যিক আদালত গঠন করে আইন মন্ত্রণালয় শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আইনজ্ঞরা বলছেন, এমন আদালত প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতি বাড়বে।

জানা গেছে, বর্তমানে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট আদালত না থাকায় সহকারী জজ থেকে জেলা জজ আদালত বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি করেন। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয় অর্থ ঋণ আদালতে। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিসংক্রান্ত বিরোধ হলে তা আন্তর্জাতিক সালিসি (আরবিট্রেশন) বা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিসি কেন্দ্রের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছে অ্যাডমিরালটি ও কোম্পানি বেঞ্চ। তবে জেলা আদালতগুলোতে বিভিন্ন মামলার চাপ থাকায় বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে অনেক বিলম্ব হয়। এতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করতে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ভারতে জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট পর্যায়ে বিশেষ আদালত রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই আদালতগুলো বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। ফলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সময়োপযোগী ও কার্যকর আইনগত প্রতিকার লাভে সক্ষম হবেন, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে ও অধিক পরিমাণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।

সুপ্রিম কোর্ট থেকে গত ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পৃথক বাণিজ্যিক আদালত তৈরি হলে তা বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে। বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচারপ্রাপ্তির ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত হবে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বাণিজ্যিক আদালতের প্রস্তাবের সঙ্গে আইনের একটি খসড়াও পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তাঁরা আশা করছেন, দ্রুতই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বাণিজ্যিক আদালতের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবে ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ লেনদেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ ও লাইসেন্সিং চুক্তি, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা, অংশীদারত্ব ও যৌথ উদ্যোগ চুক্তিসহ আধুনিক বাণিজ্যের বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরিষেবা খাত সম্পর্কিত সাবস্ক্রিপশন ও বিনিয়োগ চুক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিরোধও বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত হবে।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব অনুযায়ী, জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। আপিল হবে হাইকোর্টের নির্ধারিত বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চে। তবে মামলা দায়েরের পূর্বে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে প্রাপ্ত সমঝোতা সালিসি রায়ের অনুরূপ আইনি কার্যকর হবে। চূড়ান্ত শুনানি ৯০ দিনের মধ্যে করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এই আদালতে বিরোধের বিষয়বস্তু ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনও বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত করার সুপারিশ করেছে গত জানুয়ারিতে। ওই সুপারিশে বলা হয়, সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর প্রতিনিধিসহ অন্য অংশীজনেরা দ্রুততার সঙ্গে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। ওই কমিশনের সদস্য তানিম হোসেইন শাওন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের খসড়া নিয়ে কাজ চলছে। বাণিজ্যিক আদালত গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি শিগগির এটি হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত কিছু বিরোধ সহকারী জজ আদালত থেকে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মানিস্যুট আকারে নিষ্পত্তি হয়। অর্থঋণ আদালতে নিষ্পত্তি হয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণসংক্রান্ত বিরোধ। আরবিট্রেশনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কিছু বিরোধ নিষ্পত্তি করেন জেলা জজ আদালত। আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় থাকলে (জাহাজসংক্রান্ত) হাইকোর্ট বিভাগে অ্যাডমিরালটি বেঞ্চে নিষ্পত্তি হয়। এ ছাড়া কোম্পানিসংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চ রয়েছে। এখন জেলা আদালতে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত হলে অন্য আদালতগুলোতে চাপ কমবে এবং দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি হবে। এতে করে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আইনজ্ঞরা। দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের চিন্তা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। ব্যবসা, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাণিজ্যিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করবে। তবে অতীতে বিশেষ আদালত বা বিশেষ আইনের আওতায় গঠিত অনেক প্রতিষ্ঠান কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারেনি। তাই কেবল নতুন আদালত গঠন করলেই কাঙ্ক্ষিত গতি বা দক্ষতা আসবে না। এ জন্য আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকেও তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

দয়া করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না, দেশকে বাঁচান: মির্জা ফখরুল

স্কুলছাত্রীর মৃত্যুতে স্তব্ধ মালয়েশিয়া, কাঠগড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত