Ajker Patrika

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে ভারত, ‘আশ্বস্ত করেছেন মোদি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ‘আশ্বস্ত করেছেন’ যে, নয়াদিল্লি ‘রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে।’ প্রায় দুই মাস আগে রুশ তেল আমদানির কারণে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আরও বলেছেন, এবার তিনি চীনকেও একই কাজ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করবেন, কারণ ওয়াশিংটন মস্কোর জ্বালানি আয়ের উৎস বন্ধ করতে কাজ করছে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘এটা এমন একটা যুদ্ধ, যা শুরুই হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু রাশিয়ার এই যুদ্ধ প্রথম সপ্তাহেই শেষ করে ফেলার কথা ছিল। অথচ এখন তারা চতুর্থ বছরে ঢুকছে। আমি চাই এই যুদ্ধ থেমে যাক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুশি ছিলাম না যে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছিল। আজ মোদি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। অবশ্য এটা হুট করে করা যায় না, কিছুটা সময় লাগবে। তবে এই প্রক্রিয়া শিগগিরই শেষ হবে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাব। এটা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে গত সপ্তাহে আমরা যা করেছি তার তুলনায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখানে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিমুক্তি সংক্রান্ত তার মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করছিলেন। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল না কেনে, তাহলে এই যুদ্ধ শেষ করা সহজ হবে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। যুদ্ধ শেষ হলে তারা আবার রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করবে।’

মোদি ও ট্রাম্প ১৬ সেপ্টেম্বর এবং ৯ অক্টোবর কথা বলেছেন। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এমন কোনো মন্তব্য করা হয়নি যে মোদি রুশ তেল আমদানি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে মোদি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্যও করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘মোদি একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি ট্রাম্পকে ভালোবাসেন। আমি বহু বছর ধরে ভারতকে পর্যবেক্ষণ করছি। এটা এক অবিশ্বাস্য দেশ। আগে প্রায়ই নেতৃত্ব বদল হতো, এখন আমার বন্ধু অনেক দিন ধরে দায়িত্বে আছেন।’

ট্রাম্প যদিও দাবি করেছেন, ভারত যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রুশ তেল কেনা স্থগিত রাখবে, কিন্তু ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন—নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত। সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেড়েছে ১১ শতাংশ, আর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ।

বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল বুধবার বলেন, গত সাত–আট বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি—মূলত অপরিশোধিত তেল—২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে প্রায় ১২–১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘তাই এখানে প্রায় ১২–১৫ বিলিয়ন ডলারের সুযোগ আছে, যা আমরা কিনতে পারি রিফাইনারির কনফিগারেশন নিয়ে চিন্তা না করেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা দ্বিপক্ষীয় অঙ্গীকারের অংশ। আলোচনায় আমরা ইতিবাচকভাবে জানিয়েছি যে ভারত তার জ্বালানি আমদানির উৎস বৈচিত্র্য আনতে চায়। বড় ক্রেতা হিসেবে এটা ভারতের জন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল।’ যুক্তরাষ্ট্র গত ২৭ আগস্ট ভারতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এর ফলে সেপ্টেম্বরে ভারতের রপ্তানি ১২ শতাংশ কমে গেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও গত মাসে বলেছিলেন, ভারত একটি বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ এবং তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আগামী বছরগুলোতে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ হবে। তবে ভারত বারবার বলেছে, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে। বর্তমানে রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী। তেল রপ্তানি রাশিয়ার প্রধান আয়ের উৎস, আর চীনের পর ভারতই রুশ তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা।

যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান ও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরও ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। জুলাই ও আগস্টে ভারতের বন্দরে রুশ তেল আসা কিছুটা কমলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এর কারণ ছিল রুশ তেলের ছাড় কমে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নয়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে রুশ তেল সরবরাহের পরিসংখ্যানই দেখাবে, ট্রাম্পের কঠোর বক্তব্য ও শুল্কনীতি ভারতের রুশ তেল আমদানিতে কোনো প্রভাব ফেলেছে কি না। এদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সরকার থেকে তেল কেনা বন্ধের কোনো নির্দেশ তারা পায়নি। দাম ও ব্যবসায়িক সুবিধা অনুকূল থাকলে তারা রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত