Ajker Patrika

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের ‘এআই ভিডিও’, হামাসের কড়া প্রতিক্রিয়া

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ০৯
ট্রাম্পের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা ভিডিওর একটি দৃশ্য। ছবি: ফেসবুক
ট্রাম্পের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা ভিডিওর একটি দৃশ্য। ছবি: ফেসবুক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার ভবিষ্যৎ চিত্র কেমন হবে তা নিয়ে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে ট্রাম্পে কীভাবে বদলতে দিতে চান, তারই একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে ভিডিওটিতে। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের এই ভিডিওর কড়া সমালোচনা করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালেও এই ভিডিও শেয়ার করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি ভিডিওটিতে গাজার বিষয়ে তাঁর ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ তুলে ধরা হয়েছে।

ওই ভিডিওতে গাজাকে ইউরোপের রিভেরার মতো এক বিলাসবহুল রিসোর্টে রূপান্তরিত করার কল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওতে ট্রাম্পের একটি স্বর্ণের মূর্তি দেখা যায়। এ ছাড়া, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ককে হুমুস (মধ্যপ্রাচ্যে পরিচিতি এক বিশেষ ধরনের রুটি) খেতে দেখা যায়। ভিডিওতে আরও দেখানো হয়েছে, ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সমুদ্রসৈকতে বসে ককটেল পান করছেন। তাদের চারপাশে আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বিলাসবহুল ইয়ট ও ঝলমলে শহরের দৃশ্য দেখানো হয়েছে।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ও মুখপাত্র বাসেম নাঈম এই ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে পরিকল্পনার কথা বলছেন, তা ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতি ও স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইককে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, ট্রাম্প আবারও এমন ধারণা দিচ্ছেন যা এখানকার জনগণের সংস্কৃতি ও স্বার্থকে বিবেচনায় নেয় না।’

বাসেম নাঈম আরও বলেন, ‘গাজার জনগণ এমন এক দিনের প্রত্যাশায় আছে, যখন তারা একটি পুনর্গঠিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ গাজা দেখবে, যেখানে তাদের সন্তানদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। কিন্তু এটি বড় একটি কারাগারের ভেতরে থেকে সম্ভব নয়। আমরা কারাগারের অবস্থা ভালো করার জন্য সংগ্রাম করছি না, বরং কারাগার ও কারারক্ষীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লড়াই করছি।’

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখলেও বর্তমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজার জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা বলেছেন, তাতে ২১ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে উৎখাত করে অঞ্চলটিকে একটি ‘রিভেরা’ রূপে গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় থাকবে। নেতানিয়াহু এ পরিকল্পনাকে ‘সৃজনশীল’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে গাজার পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার সম্ভাবনাময় উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা যদি গাজায় ফিরতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই ‘সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন আবাস গড়ার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো এমন এক দেশ খুঁজে বের করা, যারা তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

এদিকে, মিসরের নেতৃত্বে আরব নেতারা গাজার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার ব্যাপারে একটি যৌথ প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত করছেন। আগামী ৪ মার্চ কায়রোতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে তারা পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা করবেন এবং পরবর্তীতে তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে উপস্থাপন করা হতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্পের ভিডিওটি জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান গাজার চিত্র দিয়ে শুরু হয়, যেখানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত শহর ও ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত এলাকাগুলো দেখানো হয়েছে। সেখানে খালি পায়ে শিশুদের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়।

এরপর একটি শিরোনাম দেখ যায় ভিডিওটিতে ‘এরপর কী?’ এরপর, খালি পায়ে হাঁটতে থাকা শিশুরা একটি অন্ধকার গুহা সদৃশ টানেলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যার, আর তাদের সামনে উদ্ভাসিত হয় গাজা উপকূলে আকাশচুম্বী অট্টালিকা, রাস্তায় বিলাসবহুল স্পোর্টস কার এবং সমুদ্রে সারি সারি ইয়ট। ভিডিওতে এমন একটি ভবনও দেখা যায়, যা দেখতে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মতো।

পটভূমিতে একটি গান বাজতে থাকে, যেখানে শুনতে পাওয়া যায়, ‘ডোনাল্ড আসছে তোমাদের মুক্ত করতে। ট্রাম্প গাজা ঝলমলে আলোর মতো উজ্জ্বল। সোনালি ভবিষ্যৎ, নতুন দিগন্ত। নাচো-গাও, কাজ শেষ।’

এ সময় ভিডিওতে লম্বা দাড়িওয়ালা ও বিকিনি পরা নারী নৃত্যশিল্পীদের পাশাপাশি ট্রাম্পের মাথার আকৃতির একটি স্বর্ণের বেলুন হাতে ধরে রাখা একটি শিশুর দৃশ্য দেখানো হয়। ভিডিওতে ইলন মাস্ককে সমুদ্রসৈকতে নাচতে দেখা যায়, যেখানে তাঁর ওপর দিয়ে মার্কিন ডলারের ঝর্ণা প্রবাহিত হচ্ছে এবং তিনি খাবার উপভোগ করছেন।

গাজার কেন্দ্রে ‘ট্রাম্প গাজা’ লেখা সংবলিত বিশাল এক ভবন দেখা যায়, যা স্পষ্ট করে দেয় যে, কে এখানে কর্তৃত্ব করবে। এ ছাড়া, একটি দোকানে ট্রাম্পের ক্ষুদ্র মূর্তি বিক্রি হতে দেখা যায়, যা তাঁর ক্ষমতার প্রদর্শনের আকাঙ্ক্ষা আরও জোরালো করে তোলে। ভিডিওর শেষ অংশে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে সমুদ্রসৈকতে বসে ককটেল পান করতে দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

কুষ্টিয়ায় গভীর রাতে বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলি, দেখে নেওয়ার হুমকি

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত