Ajker Patrika

ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি: পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক
১৯৭২ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় শিমলা চুক্তি। ছবি: সংগৃহীত
১৯৭২ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় শিমলা চুক্তি। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ একটি টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য যে সিমলা চুক্তি হয়েছিল, এখন আর তা প্রযোজ্য নয়। যুদ্ধ পরিস্থিতির পর এই চুক্তির কোনো মূল্যই নেই। তাঁর এই মন্তব্যের পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। তবে সিমলা চুক্তি প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর (এফও) জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ডন সিমলা চুক্তির বিষয়ে ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতির সত্যতাও নিশ্চিত করেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হলে ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু জল চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই। চুক্তির সব সিদ্ধান্তই নিতে হয় পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে।’

খাজা আসিফের মতে, ভারতের পদক্ষেপেই সিমলা চুক্তির মর্যাদা হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের যে ধারাটি সিমলা চুক্তিতে ছিল, তা এখন আর প্রযোজ্য নয়। যুদ্ধ পরিস্থিতির পর এই চুক্তির কোনো মূল্যই নেই।’

১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সিমলা চুক্তি। এতে উভয় দেশ সম্মত হয়, কোনো দেশ একতরফাভাবে কোনো পদক্ষেপ নেবে না এবং সব বিরোধ মিটবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির রেখাকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে গণ্য করা হয়।

চুক্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৫ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে বিরোধের যে মূল কারণগুলো রয়েছে, তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা হবে।’ এ ছাড়া দুই দেশ টেকসই শান্তি ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথ নিয়ে আলোচনা করবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

তবে পাকিস্তানের দাবি, ভারত ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। এর ফলে সিমলা চুক্তির লঙ্ঘন হয়েছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে বহিরাগতদের সেখানে বসবাস ও সম্পত্তি কেনার সুযোগ তৈরি হয়। এই বিষয়টিকে কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের ওপর চাপ মনে করছে পাকিস্তান।

কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এর পর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

হামলার দুই দিন পরেই (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তানের সঙ্গে সাড়ে ছয় দশকের পুরোনো সিন্ধু জল চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে ভারত। এ ছাড়া, আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়, সার্ক ভিসা স্কিমে ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে বলে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় বিমান সংস্থার জন্য নিজেদের আকাশসীমা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ ছাড়া, ওয়াঘা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করে দেয় এবং এই রুট দিয়ে ভারত থেকে সব আন্তসীমান্ত চলাচল ও বাণিজ্য স্থগিত করে।

প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়। অবশেষে চার দিনের সংঘাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত