Ajker Patrika

হামাসকে অস্ত্র ও গাজার শাসনভার ছাড়তে বলল আরব বিশ্ব, সমর্থন পশ্চিমা বিশ্বের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১১: ২২
জাতিসংঘে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ইস্যুতে সম্মেলনে উপস্থিতি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। ছবি: এএফপি
জাতিসংঘে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ইস্যুতে সম্মেলনে উপস্থিতি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘে আয়োজিত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো হামাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিল কাতার, সৌদি আরব, মিসরসহ আরব দেশগুলো। গতকাল মঙ্গলবার তারা এক যৌথ বিবৃতিতে হামাসকে গাজা শাসন থেকে সরে দাঁড়াতে এবং অস্ত্র পরিত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছে। আরব বিশ্বের এই অবস্থানে সমর্থন দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এতে সমর্থন দেয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, উক্ত ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কঠোর নিন্দা জানানো হয়। এই বিবৃতিতে হামাসকে স্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি শাসনকাঠামো থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ঘোষণাটি ১৭টি দেশ যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে আছে—কাতার, সৌদি আরব ও মিসরের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা এবং আরও কিছু পশ্চিমা দেশ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রেক্ষাপটে হামাসকে গাজা শাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এতে আন্তর্জাতিক মহলের সম্পৃক্ততা ও সহায়তা থাকবে। লক্ষ্য হবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন।’

ঘোষণাটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানাল, ৭ অক্টোবরের হামলা প্রত্যাখ্যান করল এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ফিলিস্তিনি প্রশাসন থেকে এর বর্জনের আহ্বান জানাল। একই সঙ্গে তারা ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছাও প্রকাশ করল।’

মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ বিবৃতিকে সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ‘হামাসকে ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার জন্য কোনোভাবেই পুরস্কৃত করা যাবে না। তারা যেন অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্তি দেয়, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, গাজার শাসনে নিজেদের ভূমিকার অবসান ঘটায় এবং নিরস্ত্রীকরণে সম্মতি জানায়।’

এর আগে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা দেন, ইসরায়েল যদি গাজার ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতির অবসান না ঘটায়, তবে ব্রিটেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তাঁর এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও কিছু ইহুদি গোষ্ঠী।

বিবৃতিতে আরব দেশগুলো জিম্মি থাকা সব ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্ত করার দাবিও জানায়। বলা হয়, ‘কেবল গাজার যুদ্ধ শেষ করে, সব জিম্মিকে মুক্ত করে, দখলদারিত্ব ও সহিংসতা বন্ধ করে, একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করে—এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে সহাবস্থান ও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।’

এ ছাড়া, ঘোষণায় যুদ্ধ শেষে গাজায় বিদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনেরও সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘আমরা একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশনের পক্ষে মত দিয়েছি, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে এবং জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থনে এই মিশন পরিচালিত হবে।’

ঘোষণায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অন্য নেতাদের প্রতি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি জানানোর আহ্বান জানানো হয়। জাতিসংঘের এই সম্মেলন বর্জন করেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা ঘোষণায় স্বাক্ষরও করেনি।

এদিকে, চলতি মাসের শুরুতে হামাসের একাধিক সূত্র সৌদি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, একটি যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে তারা অস্ত্র পরিত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। দশকজুড়েই জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন—দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে রয়েছে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার এক বৈঠকে বলেন, ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক দূরে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত