Ajker Patrika

নেতানিয়াহুর অপসারণ চেয়ে ৪৩ সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তার চিঠি

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০: ২২
নেতানিয়াহুর অপসারণ চেয়ে ৪৩ সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তার চিঠি

ইসরায়েলের ৪০ জনেরও বেশি সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা, খ্যাতিমান বিজ্ঞানী এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুকে তাঁরা ইসরায়েলের ‘অস্তিত্বের’ জন্য হুমকি উল্লেখ করে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ইসরায়েলের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবার চারজন সাবেক পরিচালক, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দুই সাবেক প্রধান এবং তিনজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রয়েছেন। 

চিঠিটি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের উগ্র–ডানপন্থী সরকারের জোটকে বিব্রত করেছে। 

নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমিয়ে সংশোধনী আনার বিতর্কিত প্রচেষ্টা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করেছে এবং এর ফলেই ৭ অক্টোবরের হামলা হয়েছে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নেতানিয়াহু এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যার ফলে ১ হাজার ২০০–এর বেশি ইসরায়েলি এবং অন্যদের নৃশংস গণহত্যা, সাড়ে ৪ হাজারের বেশি আহত এবং ২৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৩০ জনের বেশি এখনো হামাসের হাতে বন্দী। এসব হতাহতের রক্ত নেতানিয়াহুর হাতে লেগে আছে।’ 

গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ এবং আজ শুক্রবার দেশটির আইনসভা নেসেটের স্পিকার আমির ওহানাকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। 

মাত্র এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ষষ্ঠ মেয়াদ শুরু করার পর থেকে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা আশ্চর্যজনকভাবে কমে গেছে। সমালোচকেরা তাঁর বিচার বিভাগের সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করেছেন। ওই সংস্কার চেষ্টা সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি এবং কয়েক মাস ধরে ব্যাপক বিক্ষোভে দেশকে বিভক্ত করেছিল। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরান, হিজবুল্লাহ এবং হামাসের নেতারা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েলের বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থা দেখে খুশি এবং এর প্রশংসা করেছে। তাঁরা ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিনষ্ট ও আমাদের ক্ষতি করার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। 

স্বাক্ষরকারী ৪৩ জনের মধ্যে রয়েছেন— সাবেক আইডিএফ প্রধান মোশে ইয়ালন এবং দান হালুৎজ, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক পরিচালক তামির পার্দো এবং দানি ইয়াতম এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবা ‘শিন বেতের’ সাবেক পরিচালক নাদাভ আরগামান এবং ইয়াকভ পেরি। 

সাবেক সিইও, রাষ্ট্রদূত, সরকারি কর্মকর্তা এবং রসায়নের জন্য নোবেল বিজয়ী তিনজন অ্যারন সিচানোভার, আব্রাম হার্শকো এবং দান শেচমানও চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। 

এই সপ্তাহে প্রকাশিত ইসরায়েলের চ্যানেল–১৩–এর একটি জরিপ বলছে, আজ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির বড় পরাজয় হবে। জরিপে সবচেয়ে এগিয়ে সাবেক আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ও বর্তমানে নেতানিয়াহুর যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্তজের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য পার্টি। 

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের আগে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা নেই। যদিও আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ চলছে এবং দেশটির অন্যতম প্রধান বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ একই আহ্বান জানিয়েছেন। 

নেতানিয়াহুর অপসারণের দাবিতে চিঠিতে স্বাক্ষর করা সাবেক মোসাদ প্রধান হাইম তোমার বলেছেন, ‘ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের দাবি এখন যা চলছে তা নজিরবিহীন। সবাই বোঝে যে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের নেতৃত্ব দিতে অযোগ্য।’ 

গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আবারও কথা বলেছেন, যেখানে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র দুই রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। 

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দুর্বল করার জন্য বছরের পর বছর হামাসকে সমর্থন করার জন্য নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেছেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম তীর এবং গাজা শাসন করার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করা উচিত বলে মত দিয়েছে। 

মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উদ্বেগ সত্ত্বেও কয়েক বছর ধরে নেতানিয়াহুর যোগসাজশে কাতার সরকার গাজায় টাকাভর্তি স্যুটকেস সরবরাহ করেছে। সেসব টাকা সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং অবসরপ্রাপ্তদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ছিল। এখন টাকা দেওয়া হয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে। গত মাসেও কাতার বলেছে, হামাসকে টাকা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। 

নেতানিয়াহু লিকুদ পার্টির সঙ্গে অন্য দলগুলোকে জোটবদ্ধ করে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থী সরকার গঠন করেছেন। ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই সরকারের দুজন বিশিষ্ট সদস্য বেজালেল স্মোত্রিচ এবং ইতামার বেন গভিরকে তলব করেছে বাইডেন প্রশাসন। 

চিঠিতে ৭ অক্টোবরের হামলার দায় নিতে নেতানিয়াহু অস্বীকার করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবর্তে তিনি অন্যদের দোষারোপ করেছেন, যারা ইসরায়েলের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করেছেন। 

এটি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট এবং নেসেট স্পিকারের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা না হলে সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আপনি যদি আপনার সর্বোচ্চ জাতীয় দায়িত্ব পালন না করেন তবে ইসরায়েলি জাতি এবং ইহুদি ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।’ 

প্রেসিডেন্ট বা স্পিকার কারওই একতরফাভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে পদ থেকে অপসারণের ক্ষমতা নেই। তবে স্পিকার চিঠিটি নেসেট সদস্যদের কাছে পাঠিয়েছেন। তাঁদের ভোটেই প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ এবং অন্য কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা সম্ভব।

মোসাদের সাবেক কর্মকর্তা তোমার বলেছেন, ‘দেশ পরিচালনার জন্য এখন সঠিক লোকের প্রয়োজন। আমি মনে করি, এখন বিশ্ববাসী ইসরায়েলের দিকে তাকালেই তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগছে, এই দেশের হয়েছেটা কী! অনেক যোগ্য ব্যক্তি থাকা এই দেশের নেতৃত্বে কেন বোকার দল!’ 

তোমার আরও বলেন, ‘আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, আমাদের একটি নতুন সরকার দরকার, আমাদের নতুন করে যাত্রা শুরু করা দরকার।’ 

ইসরায়েল গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যার কারণে তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়েছে। এ পর্যন্ত ইসরায়েল ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ১২ মে ভার্জিনিয়ার ডালস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শরণার্থীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ১২ মে ভার্জিনিয়ার ডালস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শরণার্থীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

আগামী অর্থবছরে (২০২৬-২৭) যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশের সর্বোচ্চ সীমা ৭ হাজার ৫০০ জনে নামিয়ে আনছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনের নির্ধারিত ১ লাখ ২৫ হাজারের তুলনায় প্রায় ৯৪ শতাংশ কম।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মার্কিন ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘মানবিক উদ্বেগ ও জাতীয় স্বার্থে’ শরণার্থী প্রবেশের নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে নতুন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নির্ধারিত ৭ হাজার ৫০০ জনের বেশির ভাগই হবেন দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ।

এর আগে জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ কর্মসূচি (ইউএসআরএপি) স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি দাবি করেন, এই পদক্ষেপ ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে’ সহায়ক হবে।

গত মে মাসে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, দেশটিতে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে।

বৈঠকে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও দেখানো হয়। সেখানে আফ্রিকায় ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কবরস্থান’ দেখানো হয়েছিল। তবে ট্রাম্প স্বীকার করেন, তিনি জানেন না ভিডিওটি দক্ষিণ আফ্রিকার কোন স্থানে ধারণ করা হয়েছে।

এ বৈঠকের কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ৬০ জন শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান নাগরিককে আশ্রয় দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে ‘লাভ জিহাদে’ মত্ত শিক্ষার্থীরা—অভিযোগ ভারতীয় কর্মকর্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য প্রিন্টের সৌজন্যে
ছবি: দ্য প্রিন্টের সৌজন্যে

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিইও) একটি চিঠি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলার ওই শিক্ষা কর্মকর্তার অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা ‘ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে গিয়ে লাভ জিহাদে জড়াচ্ছে’।

গতকাল বুধবার ওই চিঠি প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অংশু গর্গ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন এক নির্দেশনায় আগের চিঠি ‘বাতিল’ ঘোষণা করেন।

ডিইও অংশু গর্গ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে বলেন, নাগরিকদের উদ্বেগ প্রকাশের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ পোর্টালে (সিএম উইন্ডো) একটি অভিযোগ পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয়, ফরিদাবাদের কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ ও লাভ জিহাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যই ওই চিঠি জারি করা হয়েছিল।

চিঠিতে বলা হয়েছিল, সরকারি ও বেসরকারি সব বিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো ঠেকাতে কঠোর তদারকি করতে হবে।

চিঠির মূল শিরোনামে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা ‘বিভিন্ন পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপ ও লাভ জিহাদে জড়িয়ে সমাজের বন্ধন নষ্ট করছে ও পরিবেশ দূষিত করছে’।

চিঠিতে সতর্ক করা হয়—যেকোনো বিদ্যালয়ে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা জরিমানা আরোপ করা হতে পারে। তবে এক দিন পর আজ নতুন চিঠিতে ডিইও স্পষ্টভাবে জানান, শিক্ষা বিভাগে এমন কোনো অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া যায়নি। তাই আগের চিঠিটি বাতিল করা হলো।

কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মহাবীর জাগলান এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে একজন শিক্ষা কর্মকর্তার জন্য অত্যন্ত ‘অশোভন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলায় রাখা এক বিষয়, কিন্তু এতে ‘লাভ জিহাদ’ শব্দটি আনার মানে কী? এ ধরনের ভাষা কোনো সরকারি শিক্ষা কর্মকর্তার মুখে শোভা পায় না।

জাগলান অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে ‘লাভ জিহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন, এখন কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তাও তা অনুসরণ করছেন রাজনৈতিক কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।

‘লাভ জিহাদ’ শব্দটি ভারতের উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রচলিত একটি শব্দ। তারা ভিন্ন ধর্মের তরুণ-তরুণীর প্রেম বা বিবাহকে ধর্মান্তরের কৌশল হিসেবে উপস্থাপন করে। তবে এর কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই এবং বহু বিশ্লেষক একে রাজনৈতিক প্রচারণা ও বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে ১৭ শিশুকে জিম্মি করা যুবক নিহত, কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রোহিত আর্য (বাঁয়ে), মুম্বাইয়ের পাওয়াই এলাকার এই আবাসিক ভবনে ১৭ শিশুকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
রোহিত আর্য (বাঁয়ে), মুম্বাইয়ের পাওয়াই এলাকার এই আবাসিক ভবনে ১৭ শিশুকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মুম্বাইয়ে ১৭ শিশুকে জিম্মি করে রাখা এক যুবক পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের পাওয়াই এলাকার একটি আবাসিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিত আর্য নামের ওই যুবক একটি ‘অডিশনের’ কথা বলে ১৭ শিশুকে সেখানে নিয়ে আসেন। মুম্বাই পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী এই শিশুদের প্রায় দুই ঘণ্টা জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। তবে তাদের সবাইকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, একটি সরকারি প্রকল্পের বকেয়া দুই কোটি টাকা না পেয়ে এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটিয়েছেন রোহিত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জিম্মি শিশুদের উদ্ধারে পুলিশের অভিযানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের উদ্ধার অভিযানের সময় রোহিত এয়ারগান ব্যবহার করে পুলিশের দিকে গুলি চালান। এর প্রতিক্রিয়ায় পুলিশও একটি গুলি চালায়। গুলির আঘাতে আহত অবস্থায় রোহিতকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, পাওয়াই থানা বেলা ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ একটি জরুরি ফোন কল পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর রোহিতের সঙ্গে জিম্মি উদ্ধারে আলোচনা শুরু হলে তিনি শিশুদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করতে থাকেন। একসময় রোহিত শিশুদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়, তখন পুলিশ ওই স্টুডিওর বাথরুম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং নিরাপদে ১৭ শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

এদিকে, এ ঘটনার আগে রোহিত একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, তিনি ‘আত্মহত্যা করার বদলে’ এই পথ বেছে নিয়েছেন। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রোহিত আর্য। আত্মহত্যা না করে আমি একটি পরিকল্পনা করেছি এবং এখানে কিছু শিশুকে জিম্মি করে রেখেছি।’ এরপর তিনি তাঁর দাবিগুলোকে ‘সাধারণ দাবি, নৈতিক দাবি, নীতিগত দাবি এবং কয়েকটি প্রশ্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের সামান্যতম ভুল পদক্ষেপ আমাকে ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’ এ সময় তিনি ওই স্টুডিওতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, তিনি টাকাপয়সা চান না এবং তিনি ‘সন্ত্রাসী নন’।

ভিডিওতে রোহিত বলেন, ‘আমি কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। আর সেই কারণেই আমি এই শিশুদের জিম্মি করেছি। যদি আমি বেঁচে থাকি, আমি এটা করব; যদি মারা যাই, অন্য কেউ এটা করবে, কিন্তু এটা অবশ্যই ঘটবে।’

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এয়ারগান এবং কিছু রাসায়নিকের পাত্র উদ্ধার করেছে। পুলিশ ধারণা, রোহিত এসব দেখিয়েই প্রথমে তাদের ভয় দেখান। জানা গেছে, জিম্মি শিশুরা একটি ওয়েব সিরিজের অডিশনের জন্য পাওয়াইয়ের ওই আবাসিক ভবনের নিচতলায় অবস্থিত আরএ স্টুডিওতে এসেছিল।

এর আগে রোহিত অভিযোগ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ‘মাই স্কুল, বিউটিফুল স্কুল’ কর্মসূচির অধীনে ‘পিএলসি স্যানিটেশন মনিটর প্রজেক্ট’ নামে একটি পরিচ্ছন্নতা প্রচারণার জন্য শিক্ষা বিভাগ তাঁর বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেনি। রোহিত দাবি করেন, তাঁর ‘লেটস চেঞ্জ’ (Lets Change) প্রচারণার অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল স্কুলছাত্রদের ‘পরিচ্ছন্নতার দূত’ হিসেবে তৈরি করা।

তাঁর এই কাজের জন্য স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ দুই কোটি রুপি অনুমোদন করেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি। ওই বছর রোহিত দুবার অনশনও করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেসরকারের ব্যক্তিগত আশ্বাস সত্ত্বেও কর্মকর্তারা তাঁকে কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয়, রোহিত আর্য ঠিক কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। অনেকেই ধারণা করছেন, সরকারি প্রকল্পের বকেয়া দুই কোটি টাকা না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে রোহিত এমন পদক্ষেপ নেন। তবে পুরো ঘটনা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

করুণ পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছে যুদ্ধে অস্বীকৃতি জানানো রুশ সেনারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ঝাপোরিঝিয়া অঞ্চলে দুই রুশ সেনা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ইউক্রেনের ঝাপোরিঝিয়া অঞ্চলে দুই রুশ সেনা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

ইউক্রেন যুদ্ধে লড়তে অস্বীকার করা রুশ সেনাদের নিজ কমান্ডাররা নির্যাতন ও হত্যা করছেন—এমন ভয়াবহ অভিযোগ উঠে এসেছে স্বাধীন রুশ সংবাদমাধ্যম ভার্স্তকা-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ সেনাবাহিনীর ভেতরে এখন এমন এক সহিংস সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে অবাধ্যতা মানে মৃত্যুদণ্ড বা আত্মঘাতী যুদ্ধে পাঠানো।

তদন্তে ১০১ জন রুশ কমান্ডারের নাম উঠে এসেছে, যারা নিজেদের সেনাদের হত্যা, নির্যাতন বা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। ভার্স্তকা অন্তত ১৫০টি মৃত্যুর ঘটনা যাচাই করতে পেরেছে, যদিও তাদের ধারণা প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। প্রমাণ হিসেবে তারা ব্যবহার করেছে ভিডিও ফুটেজ, সেনাদের পরিবার ও সহযোদ্ধাদের সাক্ষ্য এবং সরকারি অভিযোগের নথি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুদ্ধ থেকে ফিরতে চাওয়া বা আদেশ অমান্যকারী সেনাদের বিশেষভাবে নিয়োগ করা ‘এক্সিকিউশন শুটার’ দিয়ে গুলি করে হত্যা করাতেন অনেক কমান্ডার। পরে নিহতদের দেহ নদীতে বা অগভীর গর্তে ফেলে দেওয়া হতো, আর রেকর্ডে দেখানো হতো—যুদ্ধে নিহত।

আরও ভয়ংকর তথ্য হলো—যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটে আসছে এমন সেনাদের ওপর ড্রোন থেকে গ্রেনেড ফেলে হত্যা করা হয়েছে, যেন তা শত্রুপক্ষের হামলা মনে হয়।

ভার্স্তকা আরও জানায়, অনেক সেনাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। লোহার খাঁচায় ফেলে রাখা, পানি ঢেলে মারধর, কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করা—এই সব ঘটনা খুবই সাধারণ চিত্র। কিছু ক্ষেত্রে সেনাদের বাধ্য করা হতো একে অপরের সঙ্গে প্রাণঘাতী লড়াইয়ে, অনেকটা ‘গ্ল্যাডিয়েটর স্টাইলে’।

ইউক্রেনীয় পর্যবেক্ষকেরা গত মে মাসে এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়—দুই অর্ধনগ্ন রুশ সৈন্য একটি গর্তের মধ্যে একে অপরকে মারছে, আর পাশে এক কর্মকর্তা চিৎকার করছেন, ‘যে মেরে ফেলতে পারবে, সে মুক্তি পাবে।’

প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদ্বেগজনক দিক উন্মোচিত হয়েছে—কমান্ডারদের আর্থিক চাঁদাবাজি। অনেক সেনাকে জানানো হয়, বিপজ্জনক ও আত্মঘাতী মিশনে যাওয়ার হাত বাঁচতে হলে ঘুষ দিতে হবে। যারা ঘুষ দিতে পারেনি, তাদের করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে।

ভার্স্তকা-এর তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার সেনা ও তাদের পরিবার অভিযোগ দায়ের করেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার অভিযোগই নিজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

এদিকে রাশিয়ার একটি সামরিক প্রসিকিউটর সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা কমান্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্তে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে, অভিযোগ যতই গুরুতর হোক, তাদের দায়মুক্তিই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

গণভোট নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত