Ajker Patrika

ইসরায়েল থেকে পশ্চিম তীর-গাজায় ফিরল ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দী

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের দ্বিতীয় দফা জিম্মি-বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। এই ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ও আটক অবস্থায় ছিলেন। ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তার আগে, হামাসের হাতে থাকা ৪ ইসরায়েলি নারী সেনাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দী ও সাবেক বন্দীদের অধিকার বিষয়ক কমিশন এবং ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্যমতে, দ্বিতীয় দফায় মুক্তি পাওয়া এই ২০০ বন্দী ও আটক ব্যক্তির অধিকাংশই আজীবন কারাদণ্ড বা দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ছিলেন।

মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের বহনকারী তিনটি বাস পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে পৌঁছালে সেখানে তাদের জন্য বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় জনগণ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করে নেন। বন্দীরা জনতার কাঁধে উঠে বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করেন। পরে এই ২০০ জনের মধ্যে ১৬ জন গাজার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের সেখানে পাঠানো হয়।

মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন—মোহাম্মদ আল-আরিদা। তিনি ‘অপারেশন ফ্রিডম টানেলের’ অন্যতম নেতা ছিলেন। এই অভিযানের মাধ্যমে তিনি এবং অন্যরা ইসরায়েলের কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে মুক্তি পেয়েছেন ইয়াদ জারাদাত। তিনিও একই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

এ ছাড়া, মুক্তি পেয়েছেন জেনিনের বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী থাকা রায়েদ আল-সাআদি। তিনি ৩৬ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুটি আজীবন কারাদণ্ড ও অতিরিক্ত ২০ বছরের সাজা ছিল। আরও মুক্তি পাওয়া বন্দীদের মধ্যে আছেন তাবিত আল-মারদাওয়ি। তিনি ইসরায়েলের শাট্টা কারাগারে একটি টানেল খুঁড়ে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে আটক ছিলেন। বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পেয়েছেন হুসসাম আবেদ। তাঁকে তিনটি আজীবন কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত ৫৫ বছর ছয় মাসের সাজা ভোগ করছিলেন।

রামাল্লায় জনসমাবেশে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বরণ করার সময় উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে পরিবেশ। জনগণ বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন জানায়। এদিকে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীরা গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা জানান, এই আন্দোলনই তাদের মুক্তির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।

এর আগে, গাজায় ১৫ মাস বন্দী থাকার পর চার ইসরায়েলি নারী সেনাকে মুক্তি দেয় হামাস। এই চার সেনা হলেন—কারিনা আরিয়েভ, দানিয়েলা গিলবোয়া, নামা লেভি এবং লিরি আলবাগ। তাদের ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হ্যাগারি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গাজায় রেড ক্রসের একটি দলের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করে হামাস। এরপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নির্ধারিত স্থানে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মুক্তি পাওয়া এই সেনাদের সংবর্ধনার জন্য দক্ষিণ ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানে তাঁরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করবেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চার নারীকে গাজা সিটির এক জনাকীর্ণ চত্বরে হামাস কর্তৃক মঞ্চায়িত এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে হাঁটতে দেখা যায়। তাঁরা সবাই সামরিক পোশাক পরিহিত ছিলেন এবং এ সময় তাদের হাতে ছিল হামাস থেকে দেওয়া ‘উপহারের ব্যাগ’।

যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার বন্দী বিনিময় হলো। প্রথম ধাপে গত সপ্তাহে তিন ইসরায়েলি বন্দী মুক্তি পায়, বিনিময়ে ৯০ জন নারী ও শিশু ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এই চার সেনা গাজার কাছে নাহাল ওজ ঘাঁটি থেকে বন্দী হন। হামাসের হামলায় ওই ঘাঁটিতে ৬০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে গাজায় সংঘাত বন্ধের চেষ্টা চলছে। তবে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত