Ajker Patrika

চলমান অভিযান শেষেই পুরো গাজা কবজা করবে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের গালভরা নাম ‘অপারেশন গিদিওনস চ্যারিয়ট’ শেষ হওয়ার পরপরই তাঁর দেশ পুরো উপত্যকা কবজা করে নেবে। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ভয়াবহ যুদ্ধ অবসানের কিছু চরম শর্তও দিয়েছেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম বোমা হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কেবল গতকাল বুধবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮২ জন নিহত হয়েছেন। তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এবং অবরোধের কারণে ত্রাণবাহী খুব কম ট্রাকই প্রবেশ করতে পারছে অঞ্চলটিতে।

বুধবার নেতানিয়াহু আরও বলেন, যদি ‘সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময়ের সুযোগ আসে, ইসরায়েল তাতে রাজি থাকবে।’ যুদ্ধ অবসানে ইসরায়েলি নেতা কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন সেগুলো হলো—সব বন্দীর মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গোষ্ঠীটির নেতৃত্বকে নির্বাসিত করা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা।

ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অঞ্চলটি পরিচালনা করা এবং এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ রূপান্তরিত করা। যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে নেতানিয়াহু এই প্রথম ট্রাম্পের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করলেন। বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার গোষ্ঠী এই পরিকল্পনাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে আখ্যায়িত করেছে।

গাজায় চলমান গণহত্যার নেতৃত্ব দেওয়া নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের উচিত ‘কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা বজায় রাখতে মানবিক সংকট’ এড়ানো। তিনি গাজায় খুব সীমিত সংখ্যক মানবিক ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৈরি’ একটি বহুল সমালোচিত পরিকল্পনারও কথা বলেন, যার উদ্দেশ্য হামাসের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এই ছিটমহলে খাদ্য বিতরণ করা। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি অবশ্য ত্রাণ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।

গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে এই অবরোধের কারণে কোনো খাদ্য বা ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে ঢুকতে পারেনি। এতে ছিটমহলটিতে মানবিক বিপর্যয় আরও বেড়েছে। জাতিসংঘের সমর্থনপুষ্ট ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গাজার ৯৩ শতাংশের বেশি শিশু, অর্থাৎ প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার শিশু দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক—যাতে আটা, শিশুর খাদ্য এবং চিকিৎসাসামগ্রী ছিল, গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিতরণ সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণই অভাবী মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিব মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘কারেম আবু সালেম দিয়ে অবশেষে সীমিত পরিমাণ যে সরবরাহ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, তা গাজার বিশাল ও ব্যাপক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। আরও অনেক বেশি ত্রাণ প্রবেশ করতে হবে।’ সাহায্য সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরায়েল যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে, তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তারা নেতানিয়াহুর এই প্রচেষ্টাকে ‘অবরোধ শেষ হয়েছে বলে ভান করার একটি ধোঁকা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের খান ইউনিসের জরুরি সমন্বয়ক পাস্কেল কোইসার্ড বলেছেন, ‘কয়েক মাস ধরে কঠোর অবরোধের পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাস্যকরভাবে অপর্যাপ্ত ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তোলে—গাজার মানুষকে অনাহারে রাখার অভিযোগ এড়ানো, যখন প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে।’

নেতানিয়াহুর সংবাদ সম্মেলনের পর সমালোচকেরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, তার ‘আজকের কথাগুলোর অর্থ হলো গাজার বহু বছরের দখল এবং প্রতিদিন সৈন্যদের মৃত্যুর মুখে জেগে ওঠা।’ তিনি আরও বলেন, এতে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান ভেঙে পড়বে এবং অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা ইয়ার গোলান সংবাদ সম্মেলনের পর বলেন, ‘আমি চাপের মুখে থাকা এক আচ্ছন্ন, মিথ্যাবাদী ব্যক্তিকে দেখলাম, যে কোনো কিছুর জন্য দায় নেয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আমার সম্পর্কে যে মিথ্যা ছড়িয়েছেন, তার জন্য আমি আপনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব এবং আমরা খুব শিগগিরই নির্বাচনে আপনাকে পরাজিত করে ইতিহাসের পাতায় পাঠিয়ে দেব।’

নেতানিয়াহু মঙ্গলবার গোলানের সমালোচনা করেছিলেন, যখন বিরোধীদলীয় নেতা বলেছিলেন, ‘একটি সুস্থ দেশ...শখ করে শিশুদের হত্যা করে না।’ নেতানিয়াহু এই মন্তব্যকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত