Ajker Patrika

ইসরায়েলি হামলায় গাজার আরও এক মেয়র নিহত

আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ১০: ৫৬
ইসরায়েলি হামলায় গাজার আরও এক মেয়র নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নুসেইরাতের মেয়র ইয়াদ আল-মাগারি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার এই হামলায় আল-মাগারির পরিবারের কয়েকজন সদস্যও নিহত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। আল-মাগারির মরদেহ মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।

সামাজিক প্ল্যাটফরম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের চেয়ারম্যান রামি আবদুল নিহত মেয়র আল-মাগারিকে ‘গাজার অন্যতম সক্রিয় মেয়র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গাজার গণমাধ্যম দপ্তরও নুসেইরাতের এই জনপ্রিয় মেয়রকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে গণমাধ্যম দপ্তর ইয়াদ আল-মাগারির হত্যাকাণ্ডকে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল-মাগারি ছিলেন ‘নিজের দায়িত্ব ও কাজের প্রতি অনুগত ও নিবেদিত’ ব্যক্তি। যুদ্ধের শুরু থেকে পুরোটা সময় নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের লোকদের সহায়তায় নিযুক্ত ছিলেন আল-মাগারি।

এর আগে ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় আজ-জাহরা এবং মধ্য গাজার মাগাজি পৌরসভার মেয়রও নিহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি পৌরসভার সদর দপ্তরও ধ্বংস হয়ে গেছে।

এদিকে, মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থীশিবিরে একটি আবাসিক বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত এবং আরও ছয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, চলমান ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৬৫৪। এ ছাড়া, আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৩ হাজার ৩০৯।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাজ্যে চলতি ট্রেনে ছুরিকাঘাত, গুরুতর আহত ৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০৬
ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে চলতি ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে চলতি ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের কেমব্রিজের কাছে এক ট্রেনে সিরিজ ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ৯ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ আখ্যা দিয়েছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার পটভূমি ও উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখতে সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট তদন্তে সহায়তা করছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর ‘প্লেটো’ নামে একটি বিশেষ সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। এ সংকেতটি সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা দেখা দিলে দেওয়া হয়। পরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানায়নি পুলিশ।

ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশের প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ক্রিস কেইসি বলেন, ‘ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা জানার জন্য জরুরি তদন্ত চলছে। এ মুহূর্তে কোনো অনুমান করা ঠিক হবে না।’

কেমব্রিজশায়ার পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে হান্টিংডন স্টেশনে জরুরি কল পেয়ে সশস্ত্র পুলিশ সেখানে পৌঁছায়। তারা ট্রেনটি থামিয়ে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ইস্ট অব ইংল্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানায়, ঘটনাস্থলে বড় আকারের উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে বহু অ্যাম্বুলেন্স, কৌশলগত কর্মকর্তা ও বিপজ্জনক এলাকা উদ্ধার দল পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, একাধিক আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি দেখেছেন একজন যাত্রী দৌড়ে সবাইকে সতর্ক করছেন—‘ওদের হাতে ছুরি, আমাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।’ প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ওই ব্যক্তির ‘পুরো শরীর রক্তাক্ত’ ছিল। ট্রেন থামার আগেই তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।

অন্য কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আহত যাত্রীরা ছুরি হাতে থাকা হামলাকারীর কাছ থেকে দৌড়ে পালাচ্ছিলেন। পরে দেখা যায়, সশস্ত্র পুলিশ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বড় ছুরি হাতে এক ব্যক্তির দিকে অস্ত্র তাক করেছে। পরে তাঁকে টেজার গান দিয়ে অচল করে আটক করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, ছয় থেকে আটজন আহত হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ১২ পর্যন্ত হতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাটি ঘটেছে ডনকাস্টার থেকে লন্ডন কিংস ক্রসগামী সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটের ট্রেনে, পিটারবোরো স্টেশন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি লেখেন, ‘হান্টিংডনের কাছে ট্রেনে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগের। আহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই এবং জরুরি সেবাদানকারী সব দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এলাকাবাসীকে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়া ‘আক্রমণের প্রস্তুতি’ নিতে যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে ট্রাম্পের নির্দেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
নাইজেরিয়ায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পেন্টাগণকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পেন্টাগণকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার বলেছেন, তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক আক্রমণের জন্য প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করছেন, দেশটি খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না। নাইজেরিয়া এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, নাইজেরিয়ায় ‘খ্রিষ্টানদের ব্যাপক হারে হত্যা’ করা হচ্ছে। এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ না দিয়েই তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ায় ‘তৎক্ষণাৎ সব সাহায্য ও সহায়তা বন্ধ করে দেবে’। তিনি নাইজেরিয়ার সরকারকে এই সমস্যা সমাধানে ‘দ্রুত কাজ করতে’ সতর্ক করেছেন।

নাইজেরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘সম্ভবত এখনই সেই কলঙ্কিত দেশে অস্ত্র হাতে ঢুকে সেই ইসলামি জঙ্গিদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে, যারা এই ভয়াবহ অপরাধ করছে।’

তবে বাস্তবতা বলছে, দুই ধর্মের মানুষই হামলার শিকার হয়েছে—খ্রিষ্টান ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই। দেশটিতে সহিংসতার কারণ ভিন্ন ভিন্ন। কিছু ঘটনা ধর্মকে ব্যবহার করে সৃষ্ট। কিছু সংঘর্ষ কৃষক ও গবাদি পশুপালকদের মধ্যে সংকুচিত সম্পদের জন্য। এ ছাড়া আছে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত উত্তেজনাও। যদিও খ্রিষ্টানরা লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, তবে স্থানীয় প্রতিবেদনগুলো বলছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিকার মুসলিম। তারা মূলত দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে, যা প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত।

ট্রাম্প আরও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে আমাদের ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার বা যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে সম্ভাব্য পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিচ্ছি। যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, নৃশংস এবং মিষ্টি—ঠিক যেমন জঙ্গিরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টানদের ওপর হামলা করে! সতর্কতা: নাইজেরিয়ার সরকার তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নাও।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের এই মন্তব্যের স্ক্রিনশট পোস্ট করে লিখেছেন, ‘জি, স্যার।’

এর আগে গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান ধর্ম এক অস্তিত্বের সংকটের মুখে। হাজার হাজার খ্রিষ্টানকে হত্যা করা হচ্ছে। কট্টর ইসলামপন্থীরা এই গণহত্যার জন্য দায়ী। আমি এই কারণে নাইজেরিয়াকে একটি “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” ঘোষণা করছি।’

তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৯৮-এর অধীনে এই সিপিসি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছিল ধর্মীয় নিপীড়ন পর্যবেক্ষণ এবং তা বন্ধ করার পক্ষে কথা বলার জন্য। সাধারণত কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দ্বিদলীয় গ্রুপ ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ সুপারিশের ভিত্তিতেই এই তকমা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত না নিয়েই দ্রুত তদন্তের জন্য হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটি এবং দুই রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য—রিপ্রেজেনটেটিভ রাইলি মুর ও টম কোলকে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই অভিযোগগুলো ডানপন্থী আইনপ্রণেতারা বহু দিন ধরে প্রচার করে আসছেন। তাঁদের ভাষ্য, যা নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে কেবল কট্টর ইসলামপন্থীদের দ্বারা খ্রিষ্টানদের ওপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরে।

নাইজেরিয়া মূলত দুটি অংশে বিভক্ত: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর এবং প্রধানত খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ। এক দশকের বেশি সময় ধরে উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের সহিংস আক্রমণের ফলে দেশটি চরম অস্থিরতা ও বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হয়েছে। এর পাশাপাশি পানি ও চারণভূমির মতো সম্পদের সংকট নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। এর ফলে প্রধানত খ্রিষ্টান কৃষক এবং মুসলিম পশুপালকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নাইজেরিয়া সরকার দাবি করে, এই সংঘর্ষগুলোতে প্রাথমিকভাবে ধর্মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চুক্তি ভেঙে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল, চালাচ্ছে হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলি আগ্রাসনে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে গাজাবাসী। তারপরও ত্রাণের আশায় বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই ভিড় করে থাকে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: আনাদোলু
ইসরায়েলি আগ্রাসনে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে গাজাবাসী। তারপরও ত্রাণের আশায় বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই ভিড় করে থাকে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: আনাদোলু

গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত চুক্তিতে নির্ধারিত মানবিক সহায়তার খুব অল্প অংশই গাজায় ঢুকতে দিয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, চুক্তিতে প্রতিশ্রুত পরিমাণের খুব সামান্য অংশ ত্রাণই গাজায় ঢুকতে দিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ, গড়ে দিনে ১৪৫টি ট্রাক ঢুকতে পেরেছে। অথচ, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক প্রবেশের কথা ছিল। অর্থাৎ মাত্র ২৪ শতাংশ সহায়তাই গাজায় ঢুকেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই বাধার কঠোর নিন্দা জানাই। ২৪ লাখের বেশি মানুষের ওপর যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার পূর্ণ দায় ইসরায়েলের।’ গাজার কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মানবিক সহায়তা বিনা শর্তে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও গাজার মানুষ এখনো খাদ্য, পানি, ওষুধসহ জরুরি জিনিসের তীব্র সংকটে ভুগছে। অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়হীন। তাদের বাড়িঘর ও মহল্লা ইসরায়েলের দুই বছরের ধারাবাহিক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বৃহস্পতিবার জানান, ইসরায়েলের নির্দেশে ত্রাণবাহী কনভয়ের রুট পরিবর্তনের কারণে সহায়তা বিতরণ সীমিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন সব কনভয়কে মিসরের সীমান্তঘেঁষা ফিলাডেলফি করিডর দিয়ে যেতে হচ্ছে, তারপর সংকীর্ণ উপকূলীয় সড়ক ধরে গাজায় ঢুকতে হচ্ছে। এই সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত ও অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা।’

জাতিসংঘ বলেছে, ত্রাণ কার্যক্রম বাড়াতে নতুন প্রবেশপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট দরকার। অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েলি সেনারা গাজাজুড়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও কামান দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় গোলাবর্ষণ করে। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের পূর্বে বেশ কিছু আবাসিক ভবনও ধ্বংস করেছে।

আল–জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘নিরবচ্ছিন্ন ভারী গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলার’ কথা বলেছেন, যা এখনো বসতবাড়ি ও কৃষিজমিতে চলছে। তিনি আরও জানান, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলি ড্রোনের কারণে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৫৯৪ জন।

ইসরায়েলি নেতারা বলছে, হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, কারণ তারা সব মৃত ইসরায়েলি বন্দীর মরদেহ ফেরত দেয়নি। হামাসের দাবি, গাজার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও ইসরায়েলের বাধার কারণে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ জটিল হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি জানিয়েছে, তারা হামাসের কাছ থেকে পাওয়া তিনজনের মরদেহ ইসরায়েলে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, পরীক্ষায় দেখা গেছে এই মরদেহগুলো অবশিষ্ট ১১ জন মৃত ইসরায়েলি বন্দীর মধ্যে কারও নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
এপেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে মার্ক কার্নি। ছবি: এএফপি
এপেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে মার্ক কার্নি। ছবি: এএফপি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ হওয়া একটি শুল্কবিরোধী বিজ্ঞাপনের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। এই বিজ্ঞাপন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করেছিল।

আজ শনিবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে কার্নি বলেন, ‘কানাডার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দর-কষাকষির জন্য আমিই দায়ী।’

অন্টারিও রাজ্য সরকারের ওই বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে কার্নি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। প্রেসিডেন্ট এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।’

কার্নি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য আমিই দায়ী এবং মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য ফেডারেল সরকার দায়ী। কিছু ঘটনা ঘটে, কিন্তু ভালো-মন্দ উভয়ই আমাদের মেনে নিতে হয়। আমি এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছি।’

বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছিল কানাডার অন্টারিও রাজ্য সরকার। এতে ১৯৮০-এর দশকের একটি ভাষণ ব্যবহার করা হয়, যেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান সতর্ক করেছিলেন, শুল্কনীতি ‘তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধ’ ও বেকারত্ব ডেকে আনতে পারে।

এই বিজ্ঞাপন প্রচারের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, বিজ্ঞাপনটিতে রিগ্যানের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তা ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ওয়াশিংটন আরও অভিযোগ করে, বিজ্ঞাপনটি ‘ভুলভাবে রিগ্যানকে শুল্কবিরোধী হিসেবে দেখিয়েছে’, অথচ ট্রাম্পের দাবি, ‘রিগ্যান আসলে শুল্কের পক্ষে ছিলেন।’

বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে না নেওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে এবং কানাডার পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে কানাডার পণ্যের ওপর মোট মার্কিন শুল্ক দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ।

গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার সঙ্গে কার্নির সম্পর্ক খুব ভালো, আমি তাঁকে পছন্দ করি, কিন্তু তারা যা করেছে, তা ভুল ছিল। বিজ্ঞাপনটি ভুয়া ছিল। রিগ্যান আসলে শুল্ক সমর্থন করতেন, আর তারা সেটিকে উল্টোভাবে দেখিয়েছে।’

যদিও অন্টারিওর ওই বিজ্ঞাপনে রিগ্যানের ভাষণের বাস্তব অংশই ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে কথাগুলো মূল বক্তব্য থেকে একটু ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত