Ajker Patrika

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন

বাইডেনের আমলে হচ্ছে না গাজায় যুদ্ধবিরতি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৫৫
Thumbnail image
তেল আবিবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্ত করে আনার দাবিতে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে সময় আছে আর মাত্র ২০ দিন। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। বাইডেন তাঁর আমলেই গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আরব মধ্যস্থতাকারীরা। সূত্রগুলো ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা সম্পূর্ণ অচলাবস্থায় পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের মেয়াদকালে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন, আলোচনার প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, উভয় পক্ষ ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির শর্ত বিবেচনা করছিল। এই পরিকল্পনার আওতায় হামাস ৩০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং পরিবর্তে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হতো।

তবে, মধ্যস্থতাকারীদের মতে—আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে উভয় পক্ষই তাদের অবস্থান আরও কঠোর করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা কেবল জীবিত জিম্মিদের মুক্তি মেনে নেবে। একই সঙ্গে, হামাসের প্রস্তাবিত তালিকার কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

অন্যদিকে, হামাস আবারও তাদের পুরোনো দাবিতে ফিরে গিয়ে বলেছে, তারা শুধু যুদ্ধের স্থায়ী সমাধানের দিকেই অগ্রসর হতে আগ্রহী। হামাস দাবি করেছে, বর্তমান সংঘাত—যা গত ৭ অক্টোবর শুরু হয়েছিল—তার একটি রাজনৈতিক সমাধান চাই।

মধ্যস্থতাকারীরা আরও জানিয়েছেন, এই অবস্থায় আলোচনায় আর কোনো সমাধান সম্ভব নয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যকার আস্থার সংকট আরও গভীর হয়েছে। তবে, তারা আশা করছেন, আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পারে। মধ্যস্থতাকারীদের ধারণা, উভয় পক্ষ তখন আবারও আলোচনার টেবিলে বসার প্রয়াস চালাবে।

এই অচলাবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিরসনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করার যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল, তা সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে গাজা ও এর আশপাশের পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।

গাজার মানবিক সংকট ইতিমধ্যে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। মানবিক সহায়তার প্রবাহ অপ্রতুল এবং খাদ্য, পানি, ওষুধের অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন চরম বিপর্যস্ত। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে এমন অচলাবস্থা তাদের জন্য আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন এই অঞ্চলের পরিস্থিতির দিকে। কারণ, যেকোনো স্থায়ী সমাধান অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, হামাস এবং আরব মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে পুনরায় চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই এটি করতে হবে। এর আগেও ট্রাম্প একাধিকবার এ বিষয়ে কঠোর মন্তব্য করেছেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি এই ইস্যুতে কোনো আপস করবেন না।

ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে নতুন বছরের প্রাক্কালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিএনএনের এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং আটক ব্যক্তি মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সম্প্রতি তাঁর কথা হয়েছে কি না—যেগুলো নিয়ে আলোচনা বর্তমানে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়।’ এরপর যোগ করেন, ‘বিষয়টিকে আমি এভাবেই বলতে চাই যে তাদের (হামাস) ভালোই হবে যদি (তারা) আটক ব্যক্তিদের দ্রুত ফেরত দেয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত