Ajker Patrika

ইসরায়েলের সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্ব দোধারি তলোয়ার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ৩৩
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি তাঁর বন্ধুত্বের জন্য নিজেই নিজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা ইসরায়েলের বন্ধু। আমি বলব, ইসরায়েল কোনো দিন যা দেখার কথা ভাবতেও পারেনি, আমি সেই অর্থে শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।’ অনেক ইসরায়েলিই হয়তো তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।

ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল কঠিন প্রতিবেশী দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র এবং ‘আমরা তাদের সাহায্য করছি। একইভাবে তারাও আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।’ এই পারস্পরিক স্বীকৃতির বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হয় এবং ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে স্বাগত জানানোর মতো।

এরপর নেতানিয়াহুও ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের বন্ধুত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি ইসরায়েল রাষ্ট্রের এক অসাধারণ বন্ধু; আপনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সঙ্গে আছেন, আপনি আমাদের জীবনের একজন মহান, মহান সেরা এক বন্ধু।’ এর কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী শনিবার থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এই ঘোষণা প্রশ্ন তোলে, ‘ইসরায়েলের শ্রেষ্ঠ বন্ধু কি এভাবেই আচরণ করেন?’

নেতানিয়াহু আলোচনার খবর শুনে তাঁর সহকারীদের দিকে একবার তাকিয়েছিলেন, তবে কোনো প্রতিবাদ বা উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। এই ঘোষণা এবং নেতানিয়াহুর নীরবতা—দুটোই প্রমাণ করে যে, (বারাক) ওবামার আমলের তুলনায় আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কতটা ভিন্ন। ওবামার সময়ই যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ইরানের সঙ্গে সরাসরি পরমাণু ইস্যুতে আলোচনা শুরু করে।

তবে এই প্রথমবার নয় যে, নেতানিয়াহু ওভাল অফিসে বসে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ইরানের সঙ্গে আলোচনার কথা শুনলেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে নেতানিয়াহু যখন হোয়াইট হাউসে উপস্থিত ছিলেন, তখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রকাশ করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান পাঁচ মাস ধরে আলোচনা করছে। সেই আলোচনা ইসরায়েলের অজান্তেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই গোপনীয়তা একটি বড় পার্থক্য চিহ্নিত করে। ওবামা ইসরায়েলকে অন্ধকারে রেখেছিলেন এবং সেই আলোচনা শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তির দিকে এগিয়ে যায় এবং ইসরায়েলের তীব্র আপত্তির পরও স্বাক্ষরিত হয়।

অন্যদিকে, ট্রাম্প আলোচনার শুরুতে ইসরায়েলকে ইরানের সঙ্গে আলোচনার অভিপ্রায় জানান। ফলে ইসরায়েল কিছু মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়। এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং নেতানিয়াহুর মৃদু প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।

এবার কোনো বেনামি ইসরায়েলি ‘শীর্ষ কর্মকর্তা’ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বলেননি যে, ইরান যখন সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থানে তখন ইরানের সঙ্গে আলোচনা তেহরানকে ‘মুক্ত পানিতে শ্বাস নেওয়ার’ সুযোগ দেবে। কেউ জোর গলায় বলেনি যে, এটি কূটনীতির সময় নয়, বরং চাপ বাড়ানোর মুহূর্ত। ‘শীর্ষ কর্মকর্তারা’ সতর্ক করে বলেননি যে, ইরান আলোচনার সুযোগ নিয়ে পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ পৌঁছানো পর্যন্ত বা গত বছর ইসরায়েলি বিমান হামলা তেহরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছিল তা পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত কালক্ষেপণ করবে।

নেতানিয়াহু বা তাঁর আশপাশে কেউই এই যুক্তিগুলো দেননি। কেন দেননি? কারণ ট্রাম্প, জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অসংখ্য পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেকে এক অকৃত্রিম ইসরায়েল সমর্থক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তবে সেই সমর্থনের মূল্যও আছে। এ ক্ষেত্রে, সেই মূল্য হলো ইসরায়েলের কিছুটা স্বায়ত্তশাসন হারানো। ট্রাম্প ইসরায়েলের জন্য যা কিছু করেছেন, তাতে এই প্রেসিডেন্টের কাছে ‘না’ বলা জেরুজালেমের পক্ষে এখন রাজনৈতিকভাবে অকল্পনীয়।

যদি ওবামা বা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ঘোষণা করতেন, তাহলে নেতানিয়াহু এবং তাঁর মিত্ররা সেই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করতেন, কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, উষ্ণতম বন্ধুত্বেও কিছু শর্ত থাকে। এ ক্ষেত্রে, সেই শর্তটি হলো আপত্তি জানাতে না পারা।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে এই কারণে যে, ওবামার বছরগুলোর বেশির ভাগ সময় বিরোধী দল রিপাবলিকানরা হাউস, সিনেট বা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য তৈরি করেছিল। কিন্তু আজকের দিনে রিপাবলিকানরা হোয়াইট হাউস এবং কংগ্রেস উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করছে। নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্টের নীতি উল্টে দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের মিত্রদের কাছে যেমন ওবামার সময় গিয়েছিলেন, তেমনটা এখন আর করতে পারবেন না। কারণ রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্সি ও আইনসভা উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করছে।

সোমবার ওভাল অফিসে একটি নতুন বাস্তবতা দেখা গেল—প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের জন্য অকুণ্ঠ বন্ধুত্ব, তবে সেই বন্ধুত্ব কিছুটা হলেও স্বাধীনতার বিনিময়ে অর্জিত। ওবামার অধীনে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে, উচ্চ স্বরে এবং বারবার বিরোধিতা করেছিলেন। ট্রাম্পের অধীনে সেই বিরোধিতা উধাও এবং সেই নীরবতা অনেক কথা বলে। ওয়াশিংটনে এক শক্তিশালী সমর্থনকারী প্রেসিডেন্ট থাকাটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সুবিধা। তবে সেই সুবিধার একটি মূল্য আছে—ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ কমে যাওয়া এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতপার্থক্য হলে ইসরায়েলের নিজস্ব রেডলাইনগুলো তুলে ধরার পরিসর সংকুচিত হয়ে যাওয়া।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের সম্পাদকীয় থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গলাধাক্কার পর ছোট্ট মেয়েটিকে লাঠি দিয়ে পেটালেন কফিশপের কর্মচারী

বিশ্বব্যাংকে সিরিয়ার ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছে সৌদি আরব

মাত্র তিনজনের জন্য লাখ লাখ মানুষ মরছে, কাদের কথা বললেন ট্রাম্প

জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচার: আলোচিত টিকটকার জান্নাতের স্বামী তোহা কারাগারে

‘চরিত্র হননের চেষ্টা’: গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর দুদককে পাল্টা আক্রমণ টিউলিপের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত