Ajker Patrika

ইসরায়েলের সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্ব দোধারি তলোয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ৩৩
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি তাঁর বন্ধুত্বের জন্য নিজেই নিজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা ইসরায়েলের বন্ধু। আমি বলব, ইসরায়েল কোনো দিন যা দেখার কথা ভাবতেও পারেনি, আমি সেই অর্থে শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।’ অনেক ইসরায়েলিই হয়তো তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।

ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল কঠিন প্রতিবেশী দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র এবং ‘আমরা তাদের সাহায্য করছি। একইভাবে তারাও আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।’ এই পারস্পরিক স্বীকৃতির বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হয় এবং ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে স্বাগত জানানোর মতো।

এরপর নেতানিয়াহুও ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের বন্ধুত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি ইসরায়েল রাষ্ট্রের এক অসাধারণ বন্ধু; আপনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সঙ্গে আছেন, আপনি আমাদের জীবনের একজন মহান, মহান সেরা এক বন্ধু।’ এর কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী শনিবার থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এই ঘোষণা প্রশ্ন তোলে, ‘ইসরায়েলের শ্রেষ্ঠ বন্ধু কি এভাবেই আচরণ করেন?’

নেতানিয়াহু আলোচনার খবর শুনে তাঁর সহকারীদের দিকে একবার তাকিয়েছিলেন, তবে কোনো প্রতিবাদ বা উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। এই ঘোষণা এবং নেতানিয়াহুর নীরবতা—দুটোই প্রমাণ করে যে, (বারাক) ওবামার আমলের তুলনায় আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কতটা ভিন্ন। ওবামার সময়ই যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ইরানের সঙ্গে সরাসরি পরমাণু ইস্যুতে আলোচনা শুরু করে।

তবে এই প্রথমবার নয় যে, নেতানিয়াহু ওভাল অফিসে বসে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ইরানের সঙ্গে আলোচনার কথা শুনলেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে নেতানিয়াহু যখন হোয়াইট হাউসে উপস্থিত ছিলেন, তখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রকাশ করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান পাঁচ মাস ধরে আলোচনা করছে। সেই আলোচনা ইসরায়েলের অজান্তেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই গোপনীয়তা একটি বড় পার্থক্য চিহ্নিত করে। ওবামা ইসরায়েলকে অন্ধকারে রেখেছিলেন এবং সেই আলোচনা শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তির দিকে এগিয়ে যায় এবং ইসরায়েলের তীব্র আপত্তির পরও স্বাক্ষরিত হয়।

অন্যদিকে, ট্রাম্প আলোচনার শুরুতে ইসরায়েলকে ইরানের সঙ্গে আলোচনার অভিপ্রায় জানান। ফলে ইসরায়েল কিছু মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়। এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং নেতানিয়াহুর মৃদু প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।

এবার কোনো বেনামি ইসরায়েলি ‘শীর্ষ কর্মকর্তা’ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বলেননি যে, ইরান যখন সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থানে তখন ইরানের সঙ্গে আলোচনা তেহরানকে ‘মুক্ত পানিতে শ্বাস নেওয়ার’ সুযোগ দেবে। কেউ জোর গলায় বলেনি যে, এটি কূটনীতির সময় নয়, বরং চাপ বাড়ানোর মুহূর্ত। ‘শীর্ষ কর্মকর্তারা’ সতর্ক করে বলেননি যে, ইরান আলোচনার সুযোগ নিয়ে পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ পৌঁছানো পর্যন্ত বা গত বছর ইসরায়েলি বিমান হামলা তেহরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছিল তা পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত কালক্ষেপণ করবে।

নেতানিয়াহু বা তাঁর আশপাশে কেউই এই যুক্তিগুলো দেননি। কেন দেননি? কারণ ট্রাম্প, জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অসংখ্য পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেকে এক অকৃত্রিম ইসরায়েল সমর্থক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তবে সেই সমর্থনের মূল্যও আছে। এ ক্ষেত্রে, সেই মূল্য হলো ইসরায়েলের কিছুটা স্বায়ত্তশাসন হারানো। ট্রাম্প ইসরায়েলের জন্য যা কিছু করেছেন, তাতে এই প্রেসিডেন্টের কাছে ‘না’ বলা জেরুজালেমের পক্ষে এখন রাজনৈতিকভাবে অকল্পনীয়।

যদি ওবামা বা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ঘোষণা করতেন, তাহলে নেতানিয়াহু এবং তাঁর মিত্ররা সেই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করতেন, কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, উষ্ণতম বন্ধুত্বেও কিছু শর্ত থাকে। এ ক্ষেত্রে, সেই শর্তটি হলো আপত্তি জানাতে না পারা।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে এই কারণে যে, ওবামার বছরগুলোর বেশির ভাগ সময় বিরোধী দল রিপাবলিকানরা হাউস, সিনেট বা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য তৈরি করেছিল। কিন্তু আজকের দিনে রিপাবলিকানরা হোয়াইট হাউস এবং কংগ্রেস উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করছে। নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্টের নীতি উল্টে দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের মিত্রদের কাছে যেমন ওবামার সময় গিয়েছিলেন, তেমনটা এখন আর করতে পারবেন না। কারণ রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্সি ও আইনসভা উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করছে।

সোমবার ওভাল অফিসে একটি নতুন বাস্তবতা দেখা গেল—প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের জন্য অকুণ্ঠ বন্ধুত্ব, তবে সেই বন্ধুত্ব কিছুটা হলেও স্বাধীনতার বিনিময়ে অর্জিত। ওবামার অধীনে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে, উচ্চ স্বরে এবং বারবার বিরোধিতা করেছিলেন। ট্রাম্পের অধীনে সেই বিরোধিতা উধাও এবং সেই নীরবতা অনেক কথা বলে। ওয়াশিংটনে এক শক্তিশালী সমর্থনকারী প্রেসিডেন্ট থাকাটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সুবিধা। তবে সেই সুবিধার একটি মূল্য আছে—ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ কমে যাওয়া এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতপার্থক্য হলে ইসরায়েলের নিজস্ব রেডলাইনগুলো তুলে ধরার পরিসর সংকুচিত হয়ে যাওয়া।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের সম্পাদকীয় থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তোষামোদ: ট্রাম্পকে তুষ্ট করার অব্যর্থ হাতিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তুষ্ট করতে চাইলে প্রশংসা বা তোষামোদই সেরা অস্ত্র। দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের সময় যেভাবে বিভিন্ন দেশের নেতারা আচরণ করছেন, তাতে এমনটাই মনে হচ্ছে। এমনকি, পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতারা যেভাবে আচরণ করেছেন তা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট।

আত্মগরিমা ও দাম্ভিকতায় যার তুলনা মেলা ভার, সেই ট্রাম্পকে তাঁর পাঁচ দিনের এশিয়া সফরজুড়ে স্তুতি ও শ্রদ্ধার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে রেখেছেন আঞ্চলিক নেতারা। সফরের শেষদিন বৃহস্পতিবার তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

তার আগে, মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ট্রাম্পের ‘অদম্য সাহস’ ও ‘দৃঢ়তার’ প্রশংসা করে বলেছেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতির মতো ‘প্রায় অসম্ভব’ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন তিনি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টায় ‘মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এমনকি তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে উপহার দিয়েছেন একটি স্বর্ণমুকুট, যা প্রাচীন সিলা রাজ্যের নিদর্শনের প্রতিরূপ, সঙ্গে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গ্র্যান্ড অর্ডার অব মুগুংহওয়া।’

এই প্রশংসা ও উপহার বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে এমন এক সময়, যখন মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। চীনও পিছিয়ে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যার সম্পর্ক ট্রাম্পের সময় বিশেষ করে টানাপোড়েনে ছিল, সেই বেইজিং-ও এবার প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিয়েছে। সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ট্রাম্প ও সি দুজনই ‘বিশ্বমানের নেতা’, যারা ‘দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

এর আগে, গত আগস্টে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তিচুক্তিতে ভূমিকা রাখেন ট্রাম্প। এরপর দুই দেশের শীর্ষ নেতাই ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, ‘ট্রাম্প মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মিরাকল ঘটিয়ে দিয়েছেন।’ তারও আগে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। এমনকি তিনিও ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত করার কথা দিয়েছেন।

কূটনীতির ক্ষেত্রে হাসি আর করমর্দন নতুন কিছু নয়। কিন্তু সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশনের সিনিয়র ফেলো হেনরি গাওয়ের মতে, এশীয় নেতারা এবার যেন ট্রাম্পের মন জয় করতে বাড়তি উদ্যম দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়ায় রাজা ও সম্রাটদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, তার দীর্ঘ ইতিহাস আছে এবং নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা প্রদর্শনের এই ঐতিহ্য সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত।’

শুধু এশিয়ায় নয়, অন্য জায়গাতেও ট্রাম্পকে খুশি করতে নেতারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। গত জুনে ন্যাটো সম্মেলনে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা প্রশমনের ভূমিকাকে তুলনা করেছেন ‘স্কুলের মাঠে মারামারি থামাতে এগিয়ে আসা এক অভিভাবকের’ সঙ্গে।

ট্রাম্পের আত্মগরিমা বরাবরই তার সমালোচকদের নিশানায় থেকেছে, বিশেষ করে যারা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। ট্রাম্পের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার ২০২৩ সালে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে সব সময় নিজের স্বার্থ ও নিজের অহংকার পূরণের বিষয়টাকেই অগ্রাধিকার দেবে—এমনকি দেশের স্বার্থেরও আগে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

আল–জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সির সঙ্গে ‘অসাধারণ বৈঠক’ শেষে চীনের ওপর শুল্ক ৪৭ শতাংশে নামানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ০৩
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হবে। তবে শর্ত হলো—চীন আবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা শুরু করবে, বিরল খনিজ রপ্তানি অব্যাহত রাখবে এবং অবৈধ ফেন্টানিল-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকের পর তিনি এই ঘোষণা দেন। ২০১৯ সালের পর এটাই ছিল দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। ট্রাম্পের ঝোড়ো এশিয়া সফরের শেষ প্রান্তে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সফরে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্যিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।

বুসান ছাড়ার পর প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি এটা ছিল এক অসাধারণ বৈঠক।’ এ সময় তিনি জানান, চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হবে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ওঠানামা শুরু হয়। প্রধান এশীয় সূচকগুলো ও ইউরোপের ফিউচার মার্কেট লাভ-ক্ষতির মধ্যে দোদুল্যমান ছিল। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১০ বছরের উচ্চতা থেকে কিছুটা নেমে আসে, আর যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন ফিউচার দুর্বল হয়ে পড়ে।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানের আশায় ওয়াল স্ট্রিট থেকে শুরু করে টোকিও পর্যন্ত শেয়ারবাজারগুলো বৈঠকের আগে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে নড়িয়ে দিয়েছে এবং ব্যবসায়ী আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।

এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত দুই নেতার বৈঠক প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠক শেষে ট্রাম্প সি চিন পিংয়ের সঙ্গে করমর্দন করে তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন। পরে বিমানবন্দরে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকেরা জানান, চীনের সঙ্গে একটি কাঠামোগত সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে, যা চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এড়াবে এবং চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখবে—এই খাতে চীনই বিশ্বের প্রধান সরবরাহকারী। তবে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় উভয় দেশই যে এখন আরও কড়া অবস্থান নিতে প্রস্তুত, তা স্পষ্ট। ফলে এই নতুন বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি কত দিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ধরে ফেলবে’ চীন, নতুন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বহু বছরের নীরবতা ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার যুগে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
বহু বছরের নীরবতা ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার যুগে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার রাতে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরছে। ১৯৯২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। ট্রাম্প যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন, তবে তা নতুন করে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আগুন জ্বালাতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসার মাত্র এক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। আমার প্রথম মেয়াদকালে এসব অস্ত্রের সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন ও সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘বিশাল ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে আমি এটি করতে ঘৃণা করতাম, কিন্তু কোনো বিকল্প ছিল না! রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে, আর চীন অনেক পেছনে তৃতীয়—তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা আমাদের ধরে ফেলবে, সমান হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য দেশের পরীক্ষামূলক কর্মসূচির কারণে আমি যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রগুলোও সমানভাবে পরীক্ষা শুরু করতে। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হবে।’

এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, দেশটি সফলভাবে ‘পসাইডোন’ নামক একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডো পরীক্ষা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই টর্পেডো উপকূলীয় অঞ্চল ধ্বংস করতে সক্ষম, কারণ এটি বিশাল রেডিওঅ্যাকটিভ সমুদ্র-স্রোত তৈরি করতে পারে।

অপরদিকে, ট্রাম্প যখন রাশিয়া বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ও অবস্থান আরও কঠোর করেছেন, তখন পুতিন প্রকাশ্যে তাঁর পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন করছেন। গত ২১ অক্টোবর নতুন ‘বুরেভেসনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা এবং ২২ অক্টোবর পারমাণবিক হামলার মহড়া তারই প্রমাণ।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল। পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে জানা যায়, নতুন অস্ত্র কতটা কার্যকর হবে এবং পুরোনো অস্ত্রগুলো এখনো কাজ করছে কি না। প্রযুক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি, এমন পরীক্ষা রাশিয়া ও চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক যুগের সূচনা করেছিল ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্দোতে ২০ কিলোটন ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়ে। সেই বছরের আগস্টে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যার মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানে ফের ভাঙনের আশঙ্কা, দারফুরে ৩ দিনে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা বিদ্রোহীদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিদ্রোহে জর্জরিত সুদানের এল–ফাশের শহরের একটি বাজার পুড়িয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্রোহে জর্জরিত সুদানের এল–ফাশের শহরের একটি বাজার পুড়িয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। ছবি: সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিম দারফুরের এল-ফাশের শহর দখলের সময় আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) বহু মানুষকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে এক চিকিৎসক সংগঠন ও কয়েকজন গবেষক। সুদান ডক্টর্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশের নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে থাকা আরএসএফ গত ৩ দিনে অন্তত দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। সংগঠনটি একে ‘সত্যিকারের গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সুদান ডক্টর্স নেটওয়ার্কের ভাষায়, ‘আজ বিশ্বের সামনে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা আসলে সেই হত্যারই ধারাবাহিকতা যা দেড় বছর আগে এল-ফাশেরে ঘটেছিল। সে সময় বোমা হামলা, অনাহার ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় ১৪ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল।’

তাদের দাবি, এসব হামলা ‘পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে মানুষ হত্যার একটি অভিযানের অংশ।’ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব থেকে প্রকাশিত নতুন তথ্যও এই হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, আরএসএফের দখলের পর তোলা স্যাটেলাইট চিত্রে মানুষের মৃতদেহের আকারের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন বহু বস্তু দেখা গেছে। পাশাপাশি, মাটিতে বড় বড় লালচে দাগও ধরা পড়েছে, যা রক্তপাতের ইঙ্গিত দেয়।

এর আগে, ২০২৩ সাল থেকে আরএসএফ ও সুদানি সেনাবাহিনীর মধ্যে চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। ১৭ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর গত রোববার এল-ফাশের দখল করে নেয় আরএসএফ। এটি দারফুর অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল।

বুধবার সুদান সরকার জানায়, শহরটিতে অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলোও জানিয়েছে, তারা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে খবর পেয়েছে যে শহরে গণহত্যা, পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা, এবং ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যার মতো ভয়াবহ নৃশংসতা চলছে।

এল-ফাশের শহরে নারী ও কিশোরীদের ওপর ব্যাপক যৌন সহিংসতার খবরও পাওয়া গেছে। এই শহর দখলের মধ্য দিয়ে দারফুরের প্রায় পুরোটাই আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এতে আবারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এক দশকেরও বেশি আগে দক্ষিণ সুদানের মতো, সুদান হয়তো আবারও বিভক্ত হবে।

সুদানের সেনা-সমর্থিত সরকার আরও অভিযোগ করেছে, এল-ফাশের দখলের সময় আরএসএফ মসজিদে অবস্থানরত সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা মোনা নুর আল-দাইম বলেন, ‘মিলিশিয়ারা এল-ফাশেরে প্রবেশের সময় দুই হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্য।’

খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মর্গান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরএসএফের ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের যোদ্ধারা পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হলো—আরএসএফ যোদ্ধারা এল-ফাশেরের সৌদি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে রোগীদের গুলি করে হত্যা করছে।’

বেঁচে ফেরা প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই হাসপাতালে অন্তত ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। নিহতদের মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস জানান, শুধু সৌদি ম্যাটারনিটি হাসপাতালেই ৪৬০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

সুদান ডক্টর্স নেটওয়ার্ক জানায়, মঙ্গলবার আরএসএফ যোদ্ধারা ‘সৌদি হাসপাতালের ভেতরে যাকে পেয়েছে তাকেই ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে—রোগী, তাদের স্বজন, এমনকি হাসপাতালে উপস্থিত অন্য সবাইকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত