Ajker Patrika

দুই হাজারের বেশি লোককে বাংলাদেশে পুশ ইন ভারতের, অপেক্ষায় আরও ২০০০: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর

অনলাইন ডেস্ক
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের আটক করছে বিজিবি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের আটক করছে বিজিবি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে ভারত। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি লোককে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করেছে ভারত। ভারত সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। অবশ্য, ভারত এই লোকদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ বলে আখ্যা দিচ্ছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই। ভারত এই প্রক্রিয়াকে তাদের তরফ থেকে ‘পুশ ব্যাক’ বলছে।

ভারতের সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরুর পর থেকে ২ হাজারের বেশি লোককে ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে। ভারত সরকারের দাবি, দেশব্যাপী পরিচয় যাচাই অভিযানের অংশ হিসেবে এটি পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি সূত্র দাবি করেছে, একই সময়ে অভিযানের ভয়ে আরও প্রায় ২ হাজার লোক ‘স্বেচ্ছায়’ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড়ো হয়েছেন ‘সীমান্ত পার হওয়ার জন্য।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযান ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসামে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় চালানো হচ্ছে। গুজরাট এই অভিযান শুরুর দিককার রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এখান থেকেই প্রায় অর্ধেক লোককে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে বাংলাদেশে। দিল্লি ও হরিয়ানা থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোককে ‘ফেরত পাঠানো হয়েছে’ বলে দাবি তাদের। বাকিদের আসাম, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান থেকে আটক করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ রয়েছে সেখানকার শহরগুলো থেকে নথি যাচাইয়ের পর এমন (তথাকথিত) অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এপ্রিলের পেহেলগাম হামলার পর এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রচেষ্টা শুরু হয়। অপারেশন সিন্দুর এর পর এটি আরও গতি পেয়েছে। গুজরাট প্রথম শুরু করে, এরপর দিল্লি ও হরিয়ানা। আরও অনেক রাজ্য দ্রুতই শুরু করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এই বিষয়ে স্পষ্ট এবং রাজ্যগুলোও সহযোগিতা করছে।’

ওই কর্মকর্তার মতে, এসব কথিত ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানে বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর বিএসএফ তাদের গ্রহণ করে সীমান্তের অস্থায়ী শিবিরে রাখছে। তাদের খাবার ও প্রয়োজনে কিছু বাংলাদেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে এবং কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার পর তাদের বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে।

ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম সীমান্তে অভিযান প্রসঙ্গে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘ধারণা আছে যে, এই রাজ্যগুলো বিজেপিশাসিত হওয়ায় বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। মেঘালয়ে বিজেপি ছোট সংখ্যালঘু দল। এই রাজ্যগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ, এখান থেকে (বাংলাদেশে) পুশ ইন করা সহজ। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে, গ্রামের মাঝখান দিয়ে বা এমনকি বাড়ির মাঝখান দিয়েও সীমান্ত চলে যাওয়ায় এবং উভয় পাশে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা ছিল।’

অন্য এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় ২ হাজারের মতো লোক ‘স্বেচ্ছায় সীমান্ত পার হওয়ার জন্য এসেছেন।’ তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে অভিযানের ব্যাপক প্রচারের কারণে অনেক (তথাকথিত) অবৈধ অভিবাসী আটকের ভয়ে স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ছেন।’

আরেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এর কারণ হলো, যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই নির্বাসনে যেতে বাধা দিচ্ছেন না। যারা কয়েক দশক আগে ভারতে এসেছিলেন, তাদের বাদে বেশির ভাগই ফিরে যেতে রাজি। একবার আটক হয়ে সীমান্তে নিয়ে আসার পর তারা “বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়দের” ফোন করেন, যারা তাদের নিতে আসেন। তাদের বেশির ভাগই জানেন যে, একবার আটক হলে তাদের আটককেন্দ্রে বা জেলে যেতে হবে। তাদের বেশির ভাগই দরিদ্র শ্রমিক এবং আইনি লড়াই করার মতো কোনো সামর্থ্য নেই। তারা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতেই পছন্দ করেন।’

সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে এই সংখ্যা ১০ বা ২০ হাজারে পৌঁছালে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি কেবল অস্থায়ী সমাধান। এর আগেও এমন অভিযান—যদিও অনেক ছোট পরিসরে—এমনকি ইউপিএ সরকারের আমলেও পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু এই অবৈধ অভিবাসীরা প্রায়শই পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ফিরে আসে। তাই সরকার বাংলাদেশে পুশ ইন করানো সকল অভিবাসীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ এবং বৃহত্তর অভিবাসন তথ্যের সঙ্গে তা সংযুক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত