Ajker Patrika

ইতিহাসের এই দিনে /দুই শ বছরের রক্তক্ষয়ী ক্রুসেডের সূত্রপাত হলো যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফিলিস্তিন (বর্তমানে যার অনেক অংশই ইসরায়েল ও জর্ডানের অংশ)–এর অনেক ঐতিহাসিক স্থান শত শত বছর ধরে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি—তিন ধর্মের মানুষদের কাছেই পবিত্র হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে অন্যতম জেরুজালেম। এই জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় ২০০ বছর ধরে যুদ্ধ করেছে মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা, যা ইতিহাসে ‘ক্রুসেড’ নামে পরিচিত।

বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, যিশুখ্রিষ্টকে জেরুজালেমেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। ফলে, এই স্থানের আলাদা ধর্মীয় গুরুত্ব আছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে। আবার খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে যিনি যিশুখ্রিষ্ট, মুসলমানদের কাছে তিনি নবী ঈসা (আ.)। পাশাপাশি এই শহর থেকেই ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। যেই ঘটনাকে ইসলামে মিরাজ বলা হয়। ফলে মুসলমানদের কাছেও শহরের ধর্মীয় গুরুত্ব কম নয়।

৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেম দখল করে ডোম অব দ্য রক এবং আল আকসা মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেয় মুসলমানরা। আজকের এই দিনে (১৭ মার্চ) মুসলমানদের হাতে জেরুজালেমের পতন ঘটে।

মুসলমানদের শাসনে খ্রিষ্টানদের তীর্থযাত্রায় বাধা ছিল না, তবে ১০৭৭ সালে সেলজুক শাসকেরা কড়াকড়ি আরোপ করেন। এতে খ্রিষ্টান তীর্থযাত্রীরা হয়রানির শিকার হন বলে প্রচারিত হয়। বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম আলেক্সিস কমনেনুস সেলজুকদের হুমকি ঠেকাতে পোপের সহায়তা চান।

১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান ক্লেরমন্টে ঘোষণা দেন, খ্রিষ্টান ধর্ম বিপদে, তাই যোদ্ধারা যদি জেরুজালেম উদ্ধারে যায়, তাহলে তাদের সব অপরাধ ক্ষমা করা হবে। ফলে হাজারো যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল হয়, যা প্রথম ক্রুসেড নামে পরিচিত। ১০৮৯ সালে ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি থেকে শুরু হয় প্রথম ক্রুসেড। প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা কনস্টান্টিনোপলে জড়ো হন, যারা ক্রুসেডার নামে পরিচিত। কনস্টান্টিনোপলের সম্রাট যোদ্ধাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন যে, তাঁরা যেসব অঞ্চল দখল করবে সেগুলো তাদের অধীনে থাকবে।

ক্রুসেডাররা বসফরাস প্রণালি অতিক্রম করে মুসলমানদের আক্রমণ করে। তবে, তাদের প্রথম আক্রমণ তুর্কি বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়। পরে তারা ক্রমে নিকায়া, দরিলিয়াম, এডেসা ও অ্যান্টিয়ক দখল করে এবং ১০৯৯ সালে জেরুজালেম অবরোধ করে। অবশেষে ১৫ জুলাই তারা শহরটি দখল করে এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেসময় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছিল এতদিন। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি নয়।

জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ হারানো মুসলমানদের জন্য বড় আঘাত ছিল। ফলে তারা সুসংগঠিত হয়ে জিহাদ শুরু করে। ১১৪৪ সালে মসুলের গভর্নর ইমাদ আল দীন জেঙ্গির নেতৃত্বে মুসলমানরা এডেসা পুনর্দখল করেন। এই খবর খ্রিষ্টানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ১১৪৭ সালে তারা দ্বিতীয় ক্রুসেড শুরু করে। কিন্তু সেই যুদ্ধে মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয় তারা।

এরপর দামেস্কের শাসক নুর আল-দ্বীনের সেনাপতি শিরকুহ এবং তাঁর ভাতিজা সালাহউদ্দিন ক্ষমতা সংহত করে ১১৮৭ সালে হাতিমের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে তাদের কাছ থেকে জেরুজালেমের দখল নিয়ে নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ১১৮৯ সালে শুরু হয় তৃতীয় ক্রুসেড।

জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের জন্য তখনকার পোপ অষ্টম গ্রেগরি তৃতীয় ক্রুসেডের ঘোষণা দেন। তৃতীয় ক্রুসেডে ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড দ্য লায়নহার্টের বাহিনী আরসুফের যুদ্ধে জয়ী হলেও জেরুজালেম অবরোধ করতে ব্যর্থ হন।

১১৯২ সালে রিচার্ড ও সালাহউদ্দিনের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়, যেখানে জেরুজালেম শহর মুসলমানদের হাতে থাকলেও খ্রিষ্টানদের তীর্থযাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়।

এরপর আরও কয়েকটি ক্রুসেড হয়, তবে এগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়, বরং বাইজেন্টাইন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেই সংঘটিত হয়। ১২৯১ সালে মামলুক শাসকদের হাতে ক্রুসেডারদের শেষ দুর্গ আর্ক পতনের মধ্য দিয়ে ক্রুসেড যুগের সমাপ্তি ঘটে।

ইতিহাসবিদদের মতে, দুই শ বছরের এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পশ্চিমারা পুরোপুরি সফল হতে পারেনি, বরং মুসলিম সাম্রাজ্য আরও সংহত হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার পথে দিল্লির বাধা চীনের উত্থান: ভারতীয় সেনাপ্রধান

আসামির জবানবন্দি: মাগুরার শিশুটির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধর্ষণ করা হয়

ইউএনওর ফেসবুক পেজ হ্যাক করে পোস্ট, ‘করলাম না এই প্রশাসনের চাকরি’

মামলা করতে যাওয়া নারীর কাছ থেকে টাকা ‘কেড়ে নিলেন’ এসআই

ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে হাতাহাতি: ১২ ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারচেষ্টার নিন্দা মির্জা ফখরুলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত