Ajker Patrika

রাহুল ও সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের নতুন ‘ষড়যন্ত্র’ মামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৩
রাহুল ও সোনিয়া গান্ধীর নামে নতুন করে মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। ছবি: এএফপি
রাহুল ও সোনিয়া গান্ধীর নামে নতুন করে মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। ছবি: এএফপি

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে নতুন করে একটি ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশর ইকোনমিক অফেন্সেস উইং কংগ্রেসের মুখপাত্র ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা মামলায় কংগ্রেসের এই শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। মোট ছয়জন ব্যক্তি এবং তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মামলার অভিযোগপত্রে রাহুল ও সোনিয়া ছাড়াও নাম রয়েছে স্যাম প্রিতোদা, সুমন দুবে, সুনীল ভান্ডারি এবং এক অজ্ঞাত ব্যক্তির। একই সঙ্গে বিবাদী করা হয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড, ইয়ং ইন্ডিয়ান এবং ডোটেক্স মার্চেন্ডাইজার প্রাইভেট লিমিটেডকে। অভিযোগে বলা হয়েছে, কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার মূল প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড দখলের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।

ডোটেক্স মার্চেন্ডাইজার নামে কথিত কলকাতাভিত্তিক একটি শেল কোম্পানি ইয়ং ইন্ডিয়ানকে ১ কোটি টাকা দেয়। এই ইয়ং ইন্ডিয়ানের ৭৬ শতাংশ শেয়ার ছিল রাহুল ও সোনিয়ার হাতে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই অর্থের মাধ্যমে ইয়ং ইন্ডিয়ান কংগ্রেসকে ৫০ লাখ টাকা দেয় এবং বিনিময়ে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড—এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। আর সেই অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড-এর সম্পদের মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

এই এফআইআরটি দায়ের করা হয়েছে গত ৩ অক্টোবর। এর ভিত্তি, ভারতের অর্থনৈতিক দুর্নীতি তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডির করা অভিযোগপত্র। ইডি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিল্লি পুলিশের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৬৬ (২) ধারার অধীনে ইডি যেকোনো সংস্থাকে নির্দিষ্ট অপরাধে মামলা নিতে ও তদন্তে নামতে অনুরোধ করতে পারে।

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় দিল্লির একটি আদালত রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ঠিক করার পরদিনই এফআইআরটি সামনে এল।

বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, কংগ্রেস মানেই ‘আমরা দুর্নীতি চাই’ এবং ‘আমরা চুরি করতে চাই।’ গান্ধী পরিবারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের এই পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবার। তারা দুর্নীতিকে নিজের অধিকার মনে করে। আর যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়, সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিম কার্ড খেলতে শুরু করে।’

এর আগে, ২০১২ সালে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী স্থানীয় আদালতে অভিযোগ করেন—রাহুল ও সোনিয়াসহ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড অধিগ্রহণ করেছেন। অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড ছিল ১৯৩৮ সালে জওহরলাল নেহরু ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার প্রকাশক।

২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের কারণে ন্যাশনাল হেরাল্ড প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। তখন অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের ঋণ ছিল ৯০ কোটি টাকা। এই ঋণের বোঝা কাটাতে কংগ্রেস টানা ১০ বছরে প্রায় ১০০ কিস্তিতে ৯০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। কংগ্রেসের দাবি, অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড ঋণ শোধ করতে পারেনি, তাই ঋণকে ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তর করা হয়। যেহেতু রাজনৈতিক দল সরাসরি শেয়ার রাখতে পারে না, তাই শেয়ার বরাদ্দ করা হয় ইয়ং ইন্ডিয়ানকে, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে।

ইয়ং ইন্ডিয়ানে রাহুল ও সোনিয়া ৩৮ শতাংশ করে শেয়ার রাখেন। বাকি শেয়ার ছিল মতিলাল ভোরা, অস্কার ফার্নান্দেজ, স্যাম প্রিতোদা ও সুমন দুবের হাতে। এভাবেই ইয়ং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে এবং দুই গান্ধী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হন।

ইডি দাবি করছে, এই মামলায় মোট সন্দেহজনক অর্থপ্রবাহ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের সম্পদের মূল্য ২ হাজার কোটি টাকার মতো। ইতিমধ্যে সংস্থাটি ৬৬১ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি এবং ৯০ দশমিক ২ কোটি টাকার অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের শেয়ার সংযুক্ত করেছে। ২০১৭ সালে আয়কর দপ্তরের এক আদেশে ইয়ং ইন্ডিয়ানে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের সম্পদ স্থানান্তরের ঘটনায় ৪১৪ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ উঠে। ইডি তার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে।

ইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—

  • ১৮.১২ কোটি টাকার জাল অনুদান, যা দিয়ে ইয়ং ইন্ডিয়ানের ট্যাক্স দায় শোধ করা হয়
  • ৩৮ কোটি টাকার ভুয়া ‘অগ্রিম ভাড়া’
  • ২৯ কোটি টাকার ভুয়া বিজ্ঞাপন

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, কর্ণাটকের নেতা ডিকে শিবকুমার এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি ইয়ং ইন্ডিয়ানে অনুদান সংগ্রহে ভূমিকা রেখেছিলেন। শিবকুমারের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে ২৫ লাখ ও একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা এসেছে বলে অভিযোগ। রেড্ডি নাকি কয়েকজনকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা দান করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বিজ্ঞাপনদাতাদের কেউ কেউ ইডিকে জানিয়েছেন, ব্যবসায়িক কারণে নয়, কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধে তাঁরা অধিকাংশ সময়েই শুভেচ্ছাবার্তা-ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ