Ajker Patrika

‘এত সরকারি ছুটির কারণে ঠিকমতো কাজই হচ্ছে না’, সিইওর ক্ষোভ, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ১৫
ছুটির কারণে কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন এক প্রতিষ্ঠানের সিইও। ছবি: পেক্সেলস
ছুটির কারণে কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন এক প্রতিষ্ঠানের সিইও। ছবি: পেক্সেলস

ভারতের চলতি এপ্রিল মাসের ক্যালেন্ডারে দেখা যায়, সরকারি ও ঐচ্ছিক ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ১৫ দিনের বেশি ছুটি রয়েছে। ৩০ দিনের মাসের মধ্যে ১৫ দিনের বেশি ছুটিতেই কেটে যাচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হায়দরাবাদভিত্তিক একটি কোম্পানির সিইও (প্রধান নির্বাহী)।

ভারতে কর্মদক্ষতার মান এবং ঘন ঘন ছুটির প্রভাব নিয়ে ক্লিনরুমস কনটেইনমেন্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রবি কুমার তুম্মালাচারলারের দেওয়া এই পোস্ট লিংকডইনে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তবে রবি কুমার দাবি করছেন, ভারতে সরকারি ও ঐচ্ছিক ছুটির সংখ্যা এত বেশি যে ব্যবসার গতি থমকে যাচ্ছে এবং দক্ষতা কমে যাচ্ছে।

রবি কুমার লিখেছেন, ‘অতিরিক্ত ছুটি, কাজ এগোচ্ছে না! সরকারি ও ঐচ্ছিক ছুটি, তার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে কাজ প্রায় থেমে আছে। শুধু এপ্রিল ২০২৫-এ ১০টির বেশি ছুটি হয়েছে, আর বেশির ভাগ অফিসে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফাইল পড়ে আছে, নড়াচড়াই করছে না।’

পোস্টের সঙ্গে এপ্রিল মাসের ছুটির একটি তালিকাও জুড়ে দেন তিনি। ভারতের ছুটির ক্যালেন্ডার নতুন করে ভাবার আহ্বান জানান রবি কুমার।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের চেয়ে প্রায় ৬০ বছর এগিয়ে। কারণ, তারা আর্থিক অগ্রগতিকে অগ্রাধিকার দেয়। ভারতে আমরা প্রায়ই বিদেশে চলে যাই আরও সহজ ও দ্রুত কাজ করে নেওয়ার জন্য। এখন সময় এসেছে আমাদের ছুটির সংস্কৃতি নতুন করে ভাবার এবং ছুটি ও কাজের ভারসাম্য তৈরি করার।’

রবি কুমারের এই পোস্টের কমেন্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লিঙ্কডইন ব্যবহারকারীরা। অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, তিনি ঐচ্ছিক ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিকে একসঙ্গে গণনা করেছেন, ফলে প্রকৃত ‘কর্মহীন’ দিনের সংখ্যা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

এই পোস্টের মাধ্যমে কাজ ও জীবনের ভারসাম্য এবং ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

ছুটির কারণে কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন এক প্রতিষ্ঠানের সিইও। ছবি: পেক্সেলস
ছুটির কারণে কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন এক প্রতিষ্ঠানের সিইও। ছবি: পেক্সেলস

একজন মন্তব্য করেন, ‘তাহলে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সমাধান হচ্ছে দীপাবলি, ঈদ আর গুড ফ্রাইডে বাতিল করা? শুনে মনে হচ্ছে, আপনি ই-মেইলের উত্তর না পেয়ে বিরক্ত, ছোট ব্যবসাগুলোর প্রতি কোনো আসল উদ্বেগ নেই। ছুটি উৎপাদনশীলতা মেরে ফেলে না, মারে দুর্বল সিস্টেম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আর ২৪/৭ কাজ মানেই উন্নতি—এই ভান। চীন ইস্টার বাদ দিয়ে এগোয়নি, তারা লজিস্টিকস, প্রযুক্তি আর দক্ষতায় বিনিয়োগ করেছে। ক্যালেন্ডারকে দোষ না দিয়ে সেদিকে নজর দিন।’

আরেকজন লেখেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, সিইও সাহেবের অফিস ২৪ ঘণ্টা খোলা! ভালো করে দেখুন, আপনি পুরো মাসের সব শনিবার-রোববারকে ছুটি ধরে নিয়েছেন। অনেক প্রাইভেট অফিসেই তো ৫ দিন কাজ হয়।’

আরেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘ভারত ও চীনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এক নয়, তাই সরাসরি তুলনা করা অন্যায্য। ভারতের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী সমাধান দরকার। ছুটিকে বাধা হিসেবে না দেখে, কীভাবে সেগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।’

এসব প্রতিক্রিয়ার জবাবে রবি কুমার তুম্মালাচারলা পরে আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘যখন আপনি নিজে কোনো প্রতিষ্ঠান চালান, তখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা খাবার আর আশ্রয়ের জন্য লড়াই করেছেন। আমরা এখন আরাম চাই, তবু অভিযোগ করি। আমরা বলি চাকরি নেই, অথচ যখন সুযোগ আসে, তখন কতজন সময় আর ৮ ঘণ্টার কর্মদিবসের সম্মান রাখে?’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি ৭০ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহ চান না; বরং ‘অতিরিক্ত আরামের’ যে প্রবণতা ভারতীয়দের মধ্যে, সেটি নিয়ে সতর্ক করছেন। যা তাঁর মতে, লক্ষ্যহীনতা বাড়াচ্ছে এবং উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে।

অনেকে কমেন্টে ছুটির দিনগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অটোমেশন ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। তার জবাবে রবি কুমার বলেন, ‘এআই রাস্তাঘাট বানাতে পারে না, সীমান্ত পাহারা দিতে পারে না, রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারে না। ভারতে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা ছুটির দিনেও কাজ করেন, যাতে অন্যরা বিশ্রাম নিতে পারেন।’

পোস্টের শেষে তিনি পাঠকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, “আমরা কি ছুটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি? আমরা কি কখনো ভাবি, এই ছুটির পেছনে কী মূল্য আছে, নাকি শুধু লম্বা উইকেন্ড উপভোগ করি? শুধু ‘আমি কী পাচ্ছি?’ না ভেবে, ‘আমি কী দিচ্ছি?’ সেটা ভাবুন। ভারতের সমালোচকের চেয়ে অবদানকারীর বেশি প্রয়োজন। ”

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত