Ajker Patrika

সেনাপতি বিপিন ভারতের কী ছিলেন

বিভাস রায় চৌধুরী
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ২৯
সেনাপতি বিপিন ভারতের কী ছিলেন

ভারতের অন্যতম সম্মানীয় সেনাপতি জেনারেল বিপিন রাওয়াত, যিনি ৪৩ বছরের সেনাজীবনে দেশের প্রায় সব প্রান্তে কাজ করেছেন। সঙ্গে এক বছর কঙ্গোতে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি সেনাবাহিনীতে ভারতীয় সেনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর পাওয়া পদকের মধ্যে আছে পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল, উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেল, যুদ্ধ সেবা মেডেল, সেনা মেডেল, বিশিষ্ট সেনা মেডেল ইত্যাদি। 

স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো ভারতে কখনোই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ ছিল না। বরং তিন বাহিনীর তিন প্রধানের মধ্যে সিনিয়র ব্যক্তি চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান হতেন। কিন্তু কার্গিলের পর থেকেই একজন সর্বাধিনায়কের প্রয়োজন ভারত অনুভব করছিল। বেশ কয়েক বছরের টালবাহানার পরে বর্তমান সরকার এই পদের মঞ্জুরি দেয়। তত দিনে তিন বাহিনীর আলাদা আলাদা কমান্ড ভাগ থেকে সরে এসে চীন বা আমেরিকার স্টাইলে থিয়েটার কমান্ড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে আর্মি, এয়ারফোর্স, নেভি সম্মিলিতভাবে একই কমান্ডের অধীনে মুখ্যত আর্মি কমান্ডারের আদেশানুযায়ী কাজ করবে বলে ঠিক হয়। 

সেই অবস্থায় একজনকে দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে আসীন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। আর সে ক্ষেত্রে সাবেক আর্মি চিফ জেনারেল রাওয়াত ছিলেন একমাত্র পছন্দের ব্যক্তি। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, সরকার, প্রশাসন, সেনাকাঠামো, বৈদেশিক সেনানায়কদের সঙ্গে সম্পর্ক—সব মিলিয়ে তাঁর চেয়ে দক্ষ সেনাপতি ২০১৯ সালের শেষে ভারতে আর কেউ ছিলেন না বললেই চলে। তাই ১ জানুয়ারি ২০২০ সালে তাঁকেই ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। 

উত্তর ভারতের গাড়োয়ালিরা এমনিতেই যোদ্ধা জাতি। তাতে জেনারেল রাওয়াত নিজে ছিলেন চতুর্থ প্রজন্মের ভারতীয় সেনা। উত্তর ভারতে সেনাবাহিনীতে ‘সেবা’ করা অত্যন্ত গর্বের বলে মনে করা হয়। জেনারেল রাওয়াতের বাবা ছিলেন গোর্খা রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তাঁর পিতামহ ও প্রপিতামহ দুজনেই কাজ করেছেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে। ওদিকে তাঁর মামাদাদু ছিলেন উত্তরকাশীর বিধায়ক। রাজনীতি আর যুদ্ধনীতি একসঙ্গে তাঁর ধমনিতে বইছিল। ফলে যথারীতি বিপিন রাওয়াত নিজেও ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি (যা ভারতের প্রায় সমস্ত চিফের প্রথম ট্রেনিং অ্যাকাডেমি) থেকে পাস করে এবং পরে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে ট্রেনিং নিয়ে তাঁর বাবা যে রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন, সেই ১১ গোর্খা রেজিমেন্টে যোগ দেন।

পরে জেনারেল বিপিন ৫/১১ গোর্খা রাইফেলস কমান্ড করেন। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, কঙ্গোতে ভারতীয় শান্তি সেনাবাহিনী, নম্বর ৩ কোর, দক্ষিণ সেনা কমান্ড ইত্যাদিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ আর চিফ অব আর্মি স্টাফে উন্নীত হন তিনি। 

বিপিন রাওয়াতের শিক্ষাগত যোগ্যতা যেকোনো শিক্ষাবিদকে লজ্জায় ফেলবে। জেনারেল রাওয়াত ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ‘সোর্ড অব অনার’ পেয়েছিলেন। তারপর ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন, তিনি সেই কলেজেই বক্তৃতা দিতে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া ডিফেন্স স্টাডিজে এমফিল করেছিলেন মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ডক্টরেট করেন মিলিটারি-মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ওপরে চরণ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয় মীরাট থেকে। আমেরিকান আর্মি কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজ থেকে হায়ার কমান্ড কোর্স করেন তিনি। নিজে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন অনেক দিন। ফিল্ড মার্শাল মানেকশ ও জেনারেল সুহাগের পরে ভারতীয় গোর্খা রেজিমেন্ট থেকে উঠে আসা বিপিন রাওয়াত ছিলেন তৃতীয় সেনাপ্রধান। 

১৯৮৭ সালে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমা নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে সুমদরং ছু ভ্যালিতে। যেখানে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ভারতীয় সেনাকে ম্যাকমোহন লাইন থেকে এক ইঞ্চিও নড়াতে পারেনি। সেখানে তখন পাহাড়া দিচ্ছিল রাওয়াতের ব্যাটালিয়ন। কঙ্গোতে ভারতীয় শান্তি সেনা বেশ কয়েকবার অসীম সাহস ও কুশলতা দেখিয়ে সেই দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচায়। ২০১৫ সালে মিয়ানমারে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, তাঁর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন নম্বর ৩ কোরের কোর কমান্ডার লে. জেনারেল বিপিন রাওয়াত। 

৮ ডিসেম্বর সকালে জেনারেল রাওয়াত দিল্লি থেকে ভিআইপি ফ্লাইটে দক্ষিণ ভারতের কোয়েমাবটুরে আসেন। এখানে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বানানো রানওয়ে ও ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৪৩ নম্বর উয়িং। এখান থেকে শুরু হয় নীলগিরি পাহাড়। তাঁর গন্তব্য ছিল সেই পাহাড়ের গায়ে ওয়েলিংটনে অবস্থিত ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ। সেখানে তাঁকে বর্তমান ট্রেনি অফিসারদের সম্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু নিয়তির ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। 

সুলুরের ১০৯ নম্বর হেলিকপ্টার ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার একটি মি-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টার নিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিতে টেক অফ করেন। ওয়েলিংটনে পৌঁছানোর আগেই পাহাড়ের গায়ে হেলিকপ্টার এক অজানা কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়ে। হেলিকপ্টারে আগুন ধরে যায় এবং ১৪ জন যাত্রীর মধ্যে একজন বাদে সবাই মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে জেনারেল বিপিওন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা আছেন। 

উটির উচ্চতা ২২৪০ মিটার। এই উচ্চতায় মেঘ ও কুয়াশার এক অসাধারণ প্রাকৃতিক খেলা দেখা যায়। দুর্ঘটনার কারণ এখনই বলা মুশকিল। তবে পাহাড়ের খাঁজে দুপুরের দিকে বাতাসের ঘনত্ব হঠাৎ পালটে যাওয়া বা মেঘ কুয়াশার ফলে দৃশ্যমানতার অভাব ঘটতে পারে। তার মধ্য দিয়ে হেলিকপ্টারের উড়ে যাওয়া পাহাড়ি খাদে অবশ্যই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি করে। অনেকেই অবশ্য সন্দেহ করছেন কোনো অন্তর্ঘাতমূলক কাজের। তবে সেই আশঙ্কা একবারে উড়িয়ে না দিলেও জেনারেল রাওয়াতের ওপরে এতটা হুমকি ছিল বলে মনে হয় না। 

একজন সেনানায়কের যে ভূমিকা থাকা দরকার, তিনি ঠিক সেই ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে এই দুর্ঘটনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বের সেনা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

লেখক: প্রাক্তন ভারতীয় বিমান সেনা। বর্তমানে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের জ্যেষ্ঠ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লি গাড়ি বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িতরা রেহাই পাবে না, মোদির কড়া হুঁশিয়ারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লির লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই ঘটনার ষড়যন্ত্রকারীরা রেহাই পাবে না। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার ওই বিস্ফোরণে নয়জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। মোদি বলেন, ‘আমাদের সংস্থাগুলো এই ষড়যন্ত্রের মূলে পৌঁছাবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, কেউই রেহাই পাবে না। সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে হাজির হয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লিতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, তা পুরো দেশকে মর্মাহত করেছে। নিহতদের পরিবারের শোক আমি বুঝতে পারছি। পুরো দেশ আজ তাদের পাশে।’

এর আগে, গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে এক ট্রাফিক সিগন্যালে একটি ধীর গতির গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। সাদা রঙের হুন্দাই আই–২০ গাড়িটিতে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে নয়জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকা ছিল রাজধানীর ব্যস্ততম জায়গাগুলোর একটি।

সূত্র জানায়, গাড়িটির মালিক ছিলেন জম্মু–কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা উমর মোহাম্মদ। তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উমর পেশায় চিকিৎসক। তবে তিনি টেলিগ্রাম অ্যাপে সক্রিয় ‘এক উগ্রপন্থী চিকিৎসক দলের’ সদস্য ছিলেন। ওই দলটির সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানার ফরিদাবাদ পুলিশ এক কাশ্মীরি চিকিৎসকের ভাড়া করা দুটি ঘর থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, ওই চিকিৎসকের নাম মুজাম্মিল শাকিল। তাঁর সঙ্গে আরেক কাশ্মীরি চিকিৎসক আদিল আহমদ রাথারসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের সঙ্গে যুক্ত একটি ‘হোয়াইট-কলার টেরর মডিউলের’ সদস্য। এই নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ছিল কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশজুড়ে।

উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলোর মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির লাল কেল্লা সংলগ্ন বিস্ফোরণের সঙ্গেও এই ‘হোয়াইট-কলার মডিউলের’ যোগ পাওয়া গেছে। উমরও ওই নেটওয়ার্কের সদস্য ছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।

এর আগে, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর মোদি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। হামলার দুদিন পর বিহারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বের কাছে বলতে চাই—ভারত প্রতিটি জঙ্গি, তাদের সহযোগী ও মদদদাতাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাদের তাড়া করব। ভারতের মনোবল ভাঙা যাবে না। সন্ত্রাসবাদের কোনো পরিণতি ছাড়া যাবে না। বিচার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। গোটা দেশ এই অঙ্গীকারে একতাবদ্ধ, আর মানবতার পক্ষের সবাই আমাদের সঙ্গে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্ষেপণাস্ত্রসহ মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান চুরির চেষ্টা করেছিল ইউক্রেন–যুক্তরাজ্য, দাবি রাশিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান চুরি করতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন। ছবি: সংগৃহীত
কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান চুরি করতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) জানিয়েছে, ইউক্রেন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের এক পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে তারা। ওই পরিকল্পনায় রুশ এক পাইলটকে ৩০ লাখ ডলারের প্রলোভন দেখিয়ে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মঙ্গলবার এই তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রুশ বার্তা সংস্থা রিয়া নাভোস্তি জানিয়েছে, এফএসবি বলেছে—চুরি করা ওই যুদ্ধবিমানটি রোমানিয়ার কনস্টান্টা শহরের একটি ন্যাটো ঘাঁটির দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে যুদ্ধবিমানটিকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে গুলি করে নামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল।

সোভিয়েত আমলের ডাকসাইটে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির উত্তরসূরি এফএসবি জানিয়েছে, ইউক্রেন ও ব্রিটেন ওই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে বড় ধরনের ‘উসকানিমূলক অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দারা রুশ পাইলটদের ৩০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়ে বিমান চুরির চেষ্টা চালিয়েছিল বলেও সংস্থাটি দাবি করে।

রিয়া নাভোস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এফএসবির গৃহীত পদক্ষেপে ইউক্রেন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার বড় ধরনের উসকানিমূলক পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।’

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কিছু বার্তা ও রেকর্ডিং দেখানো হয়। যেখানে দেখা যায় এক ব্যক্তি ইউক্রেন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হয়ে কাজ করছিল। সে একজন রুশ পাইলটকে ৩০ লাখ ডলার প্রস্তাব দেয় মিগ যুদ্ধবিমানটি ইউরোপে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওই পাইলটকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে রয়টার্স এই ঘটনার স্বাধীনভাবে সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

রাশিয়ার কিনঝাল হলো আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। মস্কো দাবি করে এটি হাইপারসনিক অস্ত্র, যার গতি অত্যন্ত বেশি এবং এটি এমনভাবে উড়ে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে শনাক্ত বা আটকানো কঠিন।

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিটেনকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে আসছে। মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধকে উসকে দিতে ব্রিটেন ভূমিকা রাখছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে নানা অভিযান চালাতে সহায়তা করছে। অন্যদিকে, ব্রিটেন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে। লন্ডনের দাবি, রুশ গোয়েন্দারা ইচ্ছে করে ব্রিটেন ও ইউরোপজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, যাতে গণতন্ত্র দুর্বল হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হোয়াইট হাউসে আল–শারার ঐতিহাসিক সফর, সিরিয়াকে সফল করার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪১
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল–শারা। ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল–শারা। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার জানিয়েছেন, সিরিয়াকে সফল রাষ্ট্রে পরিণত করতে তিনি সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর এ কথা বলেন ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শারার ওয়াশিংটন সফর তাঁর জন্য অসাধারণ এক সফল বছর শেষের প্রতীক। বিদ্রোহী থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠা শারা গত বছর দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই তিনি বিশ্ব সফরে গিয়ে নিজেকে মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে পরিচয় করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা দূর করতে চান।

ওয়াশিংটনে শারার প্রধান লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। বৈঠকের সময়ে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, সিজার অ্যাক্ট-এর আওতায় থাকা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার স্থগিতাদেশ আরও ১৮০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের।

শারার ওয়াশিংটন সফর ছিল কোনো সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর। ছয় মাস আগে সৌদি আরবে ট্রাম্প ও শারার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সেখানেই ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার ইঙ্গিত দেন। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, শারা আর ‘বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ নন।

হোয়াইট হাউসে শারাকে স্বাগত জানানোর পরিবেশ ছিল অস্বাভাবিকভাবে নীরব। একসময় যার মাথার দাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ডলার, তিনি প্রবেশ করেন পাশের দরজা দিয়ে। অর্থাৎ, হোয়াইট হাউসের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেননি তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, শারা একজন ‘শক্তিশালী নেতা’। তিনি শারার প্রতি আস্থা রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যা কিছু পারি, তা করব, যাতে সিরিয়া সফল হয়।’ তবে শারার অতীত প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সবারই কঠিন অতীত আছে।’

শারা গত বছর ক্ষমতায় আসেন। এরপর সিরিয়া দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। আসাদের পুরোনো মিত্র ইরান ও রাশিয়ার দিক থেকে দেশটি সরে এসেছে। নতুনভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তুরস্ক, উপসাগরীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।

নিরাপত্তা আলোচনাও বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার নাজুক রাজনৈতিক পরিবর্তনে সহায়তা করতে চায়। দেশটি ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘গ্লোবাল কোয়ালিশন টু ডিফিট আইএস’-এর সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দামেস্কের এক বিমানঘাঁটিতে সামরিক উপস্থিতি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারের শাটডাউন অবসানের বিল সিনেটে পাস, নিম্নকক্ষে অনুমোদনের অপেক্ষা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটির সরকারের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাটডাউন বা অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে গতকাল সোমবার এক সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন করেছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই অচলাবস্থায় লাখো মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী বেতন পাননি, আর বিমান চলাচল ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

৬০–৪০ ভোটে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে প্রায় সব রিপাবলিকান সিনেটর ও আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর সমর্থন দেন। যদিও ডেমোক্র্যাটরা সরকারে অর্থায়নের সঙ্গে বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্য ভর্তুকি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেটি গৃহীত হয়নি। সমঝোতা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে এই ভর্তুকি নিয়ে ভোট হবে, তবে তা বহাল থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ১ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেল সংস্থাগুলোর অর্থায়ন পুনরায় চালু হবে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মীসংখ্যা কমানোর পরিকল্পনাও অন্তত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। বিলটি এখন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে যাবে। স্পিকার মাইক জনসন জানিয়েছেন, তিনি বুধবারের মধ্যেই এটি পাস করিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠাতে চান। ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব ভালো’ বলে প্রশংসা করেছেন।

এই সমঝোতায় সরকারের অর্থায়ন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বছরে প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যোগ করে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পথে এগিয়ে যাবে।

চুক্তিটি এমন এক সময় হলো, যখন ডেমোক্র্যাটরা নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে। তবে এই সমঝোতায় ডেমোক্র্যাটদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এতে স্বাস্থ্য ভর্তুকি চালু রাখার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা ডিক ডারবিন বলেন, ‘আমরা আরও কিছু করতে চেয়েছিলাম। সরকার বন্ধ হওয়াকে আমরা ভালো নীতির পথে নেওয়ার সুযোগ ভেবেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি।’

রয়টার্স–ইপসসের অক্টোবরের শেষ দিকের এক জরিপে দেখা যায়, ৫০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করেন, আর ৪৩ শতাংশ দায় দেন ডেমোক্র্যাটদের।

এর আগে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় বাতিল করেছেন এবং লক্ষাধিক ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই করেছেন, যা কংগ্রেসের আর্থিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। এতে পূর্বে কংগ্রেস অনুমোদিত ব্যয় আইনও ভঙ্গ হয়েছে। তাই অনেক ডেমোক্র্যাট এখন প্রশ্ন তুলছেন, ভবিষ্যতে এমন কোনো ব্যয় চুক্তিতে তারা কেন ভোট দেবেন।

চুক্তিতে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ ঠেকানোর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে এতে স্ন্যাপ (SNAP) খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অর্থায়ন আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সরকার আবার বন্ধ হলেও এই সহায়তা ব্যাহত না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত