অনলাইন ডেস্ক
ভারতের সড়ক নিরাপত্তা সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ। চলমান এই সমস্যা প্রতিদিন বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ২০২৩ সালে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। জানা গেছে, সে বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতে ১ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর অর্থ প্রতিদিন ৪৭৪ জন বা প্রতি তিন মিনিটে প্রায় একজন মারা গেছেন।
ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গাদকারি সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি একে ‘নীরব সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সড়কে এই প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। মৃতদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজারই শিশু। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১০ হাজার মানুষ। ৩৫ হাজার পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের মৃত্যুসংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ‘অতিরিক্ত গতি।’
মৌলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেও বহু মৃত্যু ঘটেছে। প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ হেলমেট না পরার কারণে মারা গেছেন। সিটবেল্ট ব্যবহার না করায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ হাজার জন। অতিরিক্ত মাল বহনও একটি বড় কারণ, এতে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর কারণে ৩৪ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভুল দিক দিয়ে গাড়ি চালানোও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ শতাংশ দুর্ঘটনায় চালকের কাছে লার্নার্স লাইসেন্স ছিল বা কোনো লাইসেন্সই ছিল না। পুরোনো যানবাহনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম, যেমন—সিটবেল্ট ও এয়ারব্যাগ না থাকাও ঝুঁকির কারণ।
ভারতের বিশৃঙ্খল ট্র্যাফিক পরিস্থিতি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখানকার রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলে। এর মধ্যে আছে—মোটরগাড়ি, বাইসাইকেল, রিকশার মতো অ-মোটর চালিত যান, গরুর গাড়ি, পথচারী এবং রাস্তার পশু। হকারদের রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করার কারণে পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে আসেন। এটি যান চলাচলে বাধা দেয় এবং বিপদ বাড়ায়।
চলমান প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ সত্ত্বেও ভারতের রাস্তাগুলো বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট শুধু রাস্তার অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে নয়। এর জন্য দায়ী মানুষের সমস্যাযুক্ত আচরণ, আইনের অপর্যাপ্ত প্রয়োগ এবং সার্বিক অব্যবস্থাপনাও। এই দুর্ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ভারতের বার্ষিক জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ক্ষতি হয়।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক নেটওয়ার্কের দেশ। ভারতের সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৬৬ লাখ কিলোমিটার। জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলো এই নেটওয়ার্কের প্রায় ৫ শতাংশ। দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি। মন্ত্রী গাদকারি দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয়ের অভাবকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার অনেক কারণ আছে, তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো মানুষের আচরণ।’ তবে তিনি অবকাঠামোগত ত্রুটির কথাও স্বীকার করেছেন।
গত মাসেই মন্ত্রী নিম্নমানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুশীলনের বিষয়টি তুলে ধরেন। সড়কের ত্রুটিপূর্ণ নকশা, নিম্নমানের নির্মাণকাজ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অপর্যাপ্ত সাইন ও মার্কিংকে তিনি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধী হলেন ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা।’ এমনকি রাস্তার সাইন ও মার্কিংয়ের মতো ছোট বিষয়গুলোও দেশে অত্যন্ত নিম্নমানের বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
তাঁর মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে জাতীয় সড়কগুলোতে ৫৯টি বড় ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৩ হাজার ৭৯৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা বা ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে, মাত্র ৫ হাজার ৩৬ টিতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)—দিল্লির ট্রান্সপোর্টেশন রিসার্চ অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেনশন সেন্টারের (টিআরআইপিপি) সড়ক সুরক্ষা নিরীক্ষাতেও ধারাবাহিকভাবে গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়েছে। ক্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলো সঠিকভাবে বসানো হয় না। এগুলো অনেক সময় উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। রাস্তায় বেশি উঁচু মিডিয়ান (১০ সেমি-এর বেশি) টায়ার ফেটে যাওয়া বা গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। গ্রামীণ সড়কগুলোতে বারবার সংস্কারের ফলে রাস্তা উঁচু হয়ে গেছে। এর ফলে বিপজ্জনক ঢাল তৈরি হয়েছে যা বিশেষ করে দুই চাকার যানবাহনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ভারতের সড়ক নকশার মান কাগজে-কলমে ভালো হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ খুবই দুর্বল। আইআইটি দিল্লির অধ্যাপক গীতম তিওয়ারি উল্লেখ করেছেন, ‘একটি প্রধান সমস্যা হলো নিরাপত্তা মান না মানলে শাস্তি খুবই সামান্য হয়।’ এ ছাড়া, ঠিকাদারদের চুক্তিতে প্রায়শই এই প্রয়োজনীয়তাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় না। পেমেন্ট সাধারণত কত কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে তার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলার ভিত্তিতে নয়।
মন্ত্রী গাদকারি ২৫ হাজার কিলোমিটার দুই লেনের মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এটি দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করবে। তবে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর শিক্ষক কাভি ভাল্লার মতো বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সন্দিহান।
ভাল্লার যুক্তি, ‘রাস্তা চওড়া করলে মৃত্যুর সংখ্যা কমবে এমন কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘প্রমাণ আছে যে, রাস্তার মানোন্নয়ন করলে গাড়ির গতি বাড়ে, যা পথচারী, বাইসাইকেল চালক এবং মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য মারাত্মক। তিনি আরও বলেন, নতুন রাস্তা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নকশা অনুকরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানকার ট্র্যাফিক পরিস্থিতি ভারতের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মতো হাইওয়ে অবকাঠামো তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো হাইওয়ে নিরাপত্তা প্রকৌশল গবেষণা এবং দুর্ঘটনা ডেটা সিস্টেমে বিনিয়োগ করছে না।’
এই সংকট মোকাবিলায় সরকার ‘ফাইভ ই’ বা ‘৫ ই’ কৌশল বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে—সড়কের ইঞ্জিনিয়ারিং, যানবাহনের ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষা, আইন প্রয়োগ এবং জরুরি পরিষেবা। ইন্টারন্যাশনাল রোড ফেডারেশনের কর্মকর্তা কেকে কপিলা বলেন, ‘সঠিক সময়ে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে ৫০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানো সম্ভব।’
কপিলা ভারত সরকারকে একটি সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করছেন। তিনি জানান, সাতটি প্রধান রাজ্যে ‘৫ ই’ কাঠামোর ভিত্তিতে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপের ফলে আগে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো এখন সেই রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা একমত যে, ভারতের উন্নয়নের জন্য আরও সড়ক তৈরি করা জরুরি। তবে তারা টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারীদের জীবনের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন।
কাভি ভাল্লা বলেন, ‘উন্নয়নের মূল্য যেন সমাজের দরিদ্রতম অংশকে বহন করতে না হয়।’ তিনি একটি পুনরাবৃত্তিমূলক পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কীভাবে নিরাপদ রাস্তা তৈরি করতে হয়, তা শেখার একমাত্র উপায় হলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা করা, সেগুলো কতটা কার্যকর তা মূল্যায়ন করা। যদি ফল না পাওয়া যায় তবে সেগুলো পরিবর্তন করে আবার মূল্যায়ন করা। এটি না করা হলে মসৃণ রাস্তা, দ্রুতগামী গাড়ি এবং ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর চক্র চলতেই থাকবে।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ভারতের সড়ক নিরাপত্তা সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ। চলমান এই সমস্যা প্রতিদিন বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ২০২৩ সালে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। জানা গেছে, সে বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতে ১ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর অর্থ প্রতিদিন ৪৭৪ জন বা প্রতি তিন মিনিটে প্রায় একজন মারা গেছেন।
ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গাদকারি সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি একে ‘নীরব সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সড়কে এই প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। মৃতদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজারই শিশু। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১০ হাজার মানুষ। ৩৫ হাজার পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের মৃত্যুসংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ‘অতিরিক্ত গতি।’
মৌলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেও বহু মৃত্যু ঘটেছে। প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ হেলমেট না পরার কারণে মারা গেছেন। সিটবেল্ট ব্যবহার না করায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ হাজার জন। অতিরিক্ত মাল বহনও একটি বড় কারণ, এতে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর কারণে ৩৪ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভুল দিক দিয়ে গাড়ি চালানোও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ শতাংশ দুর্ঘটনায় চালকের কাছে লার্নার্স লাইসেন্স ছিল বা কোনো লাইসেন্সই ছিল না। পুরোনো যানবাহনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম, যেমন—সিটবেল্ট ও এয়ারব্যাগ না থাকাও ঝুঁকির কারণ।
ভারতের বিশৃঙ্খল ট্র্যাফিক পরিস্থিতি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখানকার রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলে। এর মধ্যে আছে—মোটরগাড়ি, বাইসাইকেল, রিকশার মতো অ-মোটর চালিত যান, গরুর গাড়ি, পথচারী এবং রাস্তার পশু। হকারদের রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করার কারণে পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে আসেন। এটি যান চলাচলে বাধা দেয় এবং বিপদ বাড়ায়।
চলমান প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ সত্ত্বেও ভারতের রাস্তাগুলো বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট শুধু রাস্তার অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে নয়। এর জন্য দায়ী মানুষের সমস্যাযুক্ত আচরণ, আইনের অপর্যাপ্ত প্রয়োগ এবং সার্বিক অব্যবস্থাপনাও। এই দুর্ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ভারতের বার্ষিক জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ক্ষতি হয়।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক নেটওয়ার্কের দেশ। ভারতের সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৬৬ লাখ কিলোমিটার। জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলো এই নেটওয়ার্কের প্রায় ৫ শতাংশ। দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি। মন্ত্রী গাদকারি দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয়ের অভাবকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার অনেক কারণ আছে, তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো মানুষের আচরণ।’ তবে তিনি অবকাঠামোগত ত্রুটির কথাও স্বীকার করেছেন।
গত মাসেই মন্ত্রী নিম্নমানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুশীলনের বিষয়টি তুলে ধরেন। সড়কের ত্রুটিপূর্ণ নকশা, নিম্নমানের নির্মাণকাজ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অপর্যাপ্ত সাইন ও মার্কিংকে তিনি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধী হলেন ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা।’ এমনকি রাস্তার সাইন ও মার্কিংয়ের মতো ছোট বিষয়গুলোও দেশে অত্যন্ত নিম্নমানের বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
তাঁর মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে জাতীয় সড়কগুলোতে ৫৯টি বড় ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৩ হাজার ৭৯৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা বা ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে, মাত্র ৫ হাজার ৩৬ টিতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)—দিল্লির ট্রান্সপোর্টেশন রিসার্চ অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেনশন সেন্টারের (টিআরআইপিপি) সড়ক সুরক্ষা নিরীক্ষাতেও ধারাবাহিকভাবে গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়েছে। ক্র্যাশ ব্যারিয়ারগুলো সঠিকভাবে বসানো হয় না। এগুলো অনেক সময় উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। রাস্তায় বেশি উঁচু মিডিয়ান (১০ সেমি-এর বেশি) টায়ার ফেটে যাওয়া বা গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। গ্রামীণ সড়কগুলোতে বারবার সংস্কারের ফলে রাস্তা উঁচু হয়ে গেছে। এর ফলে বিপজ্জনক ঢাল তৈরি হয়েছে যা বিশেষ করে দুই চাকার যানবাহনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ভারতের সড়ক নকশার মান কাগজে-কলমে ভালো হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ খুবই দুর্বল। আইআইটি দিল্লির অধ্যাপক গীতম তিওয়ারি উল্লেখ করেছেন, ‘একটি প্রধান সমস্যা হলো নিরাপত্তা মান না মানলে শাস্তি খুবই সামান্য হয়।’ এ ছাড়া, ঠিকাদারদের চুক্তিতে প্রায়শই এই প্রয়োজনীয়তাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় না। পেমেন্ট সাধারণত কত কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে তার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলার ভিত্তিতে নয়।
মন্ত্রী গাদকারি ২৫ হাজার কিলোমিটার দুই লেনের মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এটি দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করবে। তবে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর শিক্ষক কাভি ভাল্লার মতো বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সন্দিহান।
ভাল্লার যুক্তি, ‘রাস্তা চওড়া করলে মৃত্যুর সংখ্যা কমবে এমন কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘প্রমাণ আছে যে, রাস্তার মানোন্নয়ন করলে গাড়ির গতি বাড়ে, যা পথচারী, বাইসাইকেল চালক এবং মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য মারাত্মক। তিনি আরও বলেন, নতুন রাস্তা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নকশা অনুকরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানকার ট্র্যাফিক পরিস্থিতি ভারতের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মতো হাইওয়ে অবকাঠামো তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো হাইওয়ে নিরাপত্তা প্রকৌশল গবেষণা এবং দুর্ঘটনা ডেটা সিস্টেমে বিনিয়োগ করছে না।’
এই সংকট মোকাবিলায় সরকার ‘ফাইভ ই’ বা ‘৫ ই’ কৌশল বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে—সড়কের ইঞ্জিনিয়ারিং, যানবাহনের ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষা, আইন প্রয়োগ এবং জরুরি পরিষেবা। ইন্টারন্যাশনাল রোড ফেডারেশনের কর্মকর্তা কেকে কপিলা বলেন, ‘সঠিক সময়ে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে ৫০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানো সম্ভব।’
কপিলা ভারত সরকারকে একটি সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করছেন। তিনি জানান, সাতটি প্রধান রাজ্যে ‘৫ ই’ কাঠামোর ভিত্তিতে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপের ফলে আগে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো এখন সেই রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা একমত যে, ভারতের উন্নয়নের জন্য আরও সড়ক তৈরি করা জরুরি। তবে তারা টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারীদের জীবনের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন।
কাভি ভাল্লা বলেন, ‘উন্নয়নের মূল্য যেন সমাজের দরিদ্রতম অংশকে বহন করতে না হয়।’ তিনি একটি পুনরাবৃত্তিমূলক পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কীভাবে নিরাপদ রাস্তা তৈরি করতে হয়, তা শেখার একমাত্র উপায় হলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা করা, সেগুলো কতটা কার্যকর তা মূল্যায়ন করা। যদি ফল না পাওয়া যায় তবে সেগুলো পরিবর্তন করে আবার মূল্যায়ন করা। এটি না করা হলে মসৃণ রাস্তা, দ্রুতগামী গাড়ি এবং ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর চক্র চলতেই থাকবে।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে সারা বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন দেশ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। ভারত সরকার তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান তাঁর মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেহাওয়াইয়ে ভ্রমণে গিয়ে মার্কিন সীমান্তরক্ষীদের হাতে দেহ তল্লাশি ও রাতভর আটকের শিকার হয়েছেন দুই জার্মান কিশোরী। পর্যাপ্ত সময়ের জন্য হোটেল বুকিং না থাকায় তাদের সন্দেহজনক মনে করে এই ব্যবস্থা নেয় যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)।
৫ ঘণ্টা আগেপ্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল প্রায় চার বছরের পুরোনো একটি মামলায় ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন তথা সিসিআই-এর সঙ্গে নিষ্পত্তিতে পৌঁছেছে। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভির বাজারে গুগল অনৈতিক ও প্রতিযোগিতাবিরোধী ব্যবসায়িক চর্চা করছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই নিষ্পত্তি হয়েছে। গুগল,
৬ ঘণ্টা আগে২০১৩ সালে, ৩৪ বছর বয়সে থর পেডারসেন এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তটি শুধু ব্যতিক্রম নয়, এক কঠিন সংকল্পও বটে। কারণ তিনি কোনো উড়োজাহাজে না চড়েই পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ঘুরে দেখার পণ করেন। প্রায় এক দশকের ব্যবধানে এভাবেই পৃথিবীর ২০৩টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন পেডারসেন।
৮ ঘণ্টা আগে