Ajker Patrika

এবার বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আলোচনায় বাংলাদেশ

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৮
বিহারের বিজেপি দলীয় মন্ত্রী নিতিন নবীন। ছবি: সংগৃহীত
বিহারের বিজেপি দলীয় মন্ত্রী নিতিন নবীন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ ইস্যুকে কেন্দ্র করে ফায়দা তোলার অভ্যাস যেন বিজেপি কোনোভাবেই ছাড়তে পারছে না। ঝাড়খণ্ডের পর এবার বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশকে ইস্যু করেছে দলটি। বিহারের মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা নিতিন নবীন গতকাল রোববার বিহারেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রী নিতিন নবীন দাবি করেছেন, সীমাঞ্চল অঞ্চলে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বিহার সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তিনি দাবি করেন, বিহারের সীমান্ত অঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা ৪৭ শতাংশেরও বেশি।

ঝাড়খণ্ডে বিজেপি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করলেও তা উল্টো ফল দিয়েছে এবং দলটি ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় কম আসন পেয়ে একটি বিব্রতকর পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। তারপরও আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিহার বিধানসভা নির্বাচন মাথায় রেখে বিজেপি আবারও এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে।

বিহারের রাজধানী পাটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নবীন বলেন, ‘বিহারে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমাঞ্চল অঞ্চলে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। বিহার ও ভারতের সম্পদ এখানে অবস্থানরত মানুষের জন্যই ব্যবহৃত হওয়া উচিত, বাংলাদেশিদের জন্য নয়। এই মানুষদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

উত্তর বিহারে অবস্থিত সীমাঞ্চল চারটি জেলা নিয়ে গঠিত। সেগুলো হলো—পূর্ণিয়া, কাটিহার, কিষানগঞ্জ এবং আরারিয়া। এই চার জেলায় ২৪টি বিধানসভা আসন আছে। তাই ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সীমাঞ্চল বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার জন্য এবং বিজেপির জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যখন বিহারে জাতিভিত্তিক সমীক্ষা চালানো হয়, তখন বিজেপি ওই সমীক্ষার পদ্ধতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছিল এবং অভিযোগ করেছিল যে, এটি ‘নাগরিকত্বের নিবন্ধনে গরমিল সৃষ্টি করতে পারে।’ সে সময় অবশ্য বিজেপি নিতীশ কুমারের জনতা দলের (ইউনাইটেড) জোট সঙ্গী ছিল না। সেই সমীক্ষার পর মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার ডিগাবাজি দেন এবং বিজেপি-বিরোধী জোট থেকে সরে গিয়ে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধেন।

বিজেপি সে সময় দাবি করেছিল, এই প্রক্রিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ও রোহিঙ্গাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণনা করার ঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। সীমাঞ্চল নামের একটি এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। এটি বিহারে বিরোধী মহাগাঠবন্ধনের (গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স) শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। সীমাঞ্চল নেপালের সীমান্তবর্তী এবং বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।

সম্প্রতি সমাপ্ত ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে ৮১টি আসনের মধ্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট ৫৬টি আসনে জয়লাভ করেছে, আর বিজেপির এনডিএ জোট পেয়েছে ২৪টি আসন। ঝাড়খণ্ডে প্রচারণার সময় বিজেপি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, জনসংখ্যার পরিবর্তন এবং দুর্নীতির মতো প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরেছিল।

তবে বিজেপি এই ইস্যু ঝাড়খণ্ডে তুললেও তা কাজে আসেনি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নবীন বলেন, ‘এটি কোনো ইস্যু নয়, এটি তদন্তের বিষয় এবং বিহারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ আমরা সহ্য করতে পারি না।’ তবে বিজেপির জোটসঙ্গী নিতীশ কুমারের দল বিজেপি মন্ত্রীর এই মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

নিতীশের মুখপাত্র আনজুম আরা বলেছেন, ‘নিতীশ কুমারজি এরই মধ্যে জাতিভিত্তিক সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন এবং এর রিপোর্ট জনসমক্ষে রয়েছে। তার পরও কেউ যদি মনে করে যে অন্য দেশ থেকে মানুষ বিহারে অবস্থান করছে, তবে এটি কেন্দ্র সরকারের বিষয় এবং কেন্দ্রই এটি দেখবে।’

বিরোধী রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) বিজেপিকে এই ইস্যু তোলার জন্য আক্রমণ করেছে এবং একে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে অভিহিত করেছে। আরজেডি মুখপাত্র শক্তি যাদব বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে, বিজেপি এ ধরনের ইস্যু তুলতে শুরু করে। সীমান্ত ইস্যু কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে আসে, তাই কেন্দ্রই এটি দেখুক।’

শক্তি যাদব আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে বিজেপি। তারা ঝাড়খণ্ডেও একই কাজ করেছিল, কিন্তু কিছুই পায়নি। বিহারেও একই ফল দেখা যাবে। বিজেপি কখনো কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলে না; বরং তারা হিন্দু-মুসলিম ইস্যু তুলে ধরে ভাগ করে শাসন করতে চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত