Ajker Patrika

জেলেনস্কির ‘সমালোচনা করায়’ যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত বরখাস্ত

জেলেনস্কির ‘সমালোচনা করায়’ যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত বরখাস্ত

জনসমক্ষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা করেছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টিয়াকো। আজ শুক্রবার এক প্রেসিডেনশিয়াল আদেশে তাঁকে বরখাস্ত করেন জেলেনস্কি। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির সমালোচনা করেছিলেন ভাদিম। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে পাঠানো এক নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ভাদিম প্রিস্টিয়াকোকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে নির্দেশে ভাদিমকে কেন অপসারণ করা হলো তার কোনো কারণ দেয়নি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়।

গত সপ্তাহে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিস্টিয়াকোর কাছে বিদায়ী ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের মন্তব্য—রাশিয়ার দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কিয়েভকে তার মিত্ররা যে সহায়তা দিচ্ছে তার জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত—বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে বলা হয়েছিল।

এর আগে, বেন ওয়ালেসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেন সব সময় একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ব্রিটেনের কাছে কৃতজ্ঞ।’ সে সময় জেলেনস্কি বেন ওয়ালেসকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, কীভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তা ওয়ালেস তাঁকে (জেলেনস্কি) শেখাতে পারেন।

জেলেনস্কির মন্তব্যের বিষয়ে স্কাই নিউজ জানতে চায়, এমন মন্তব্যের মাধ্যমে জেলেনস্কি ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করেছেন কিনা। জবাবে প্রিস্টিয়াকো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যখন বলেছিলেন যে, প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানাব—এর মাধ্যমে তিনি মূলত ব্যঙ্গই করেছিলেন।’ তিনি বলেন, আমার কাছে এই মন্তব্যকে খুব বেশি ইতিবাচক মনে হয়নি।

যাই হোক, ৫৩ বছর বয়সী এই সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ প্রিস্টিয়াকোর পর কে ব্রিটেনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তা বলা হয়নি। উল্লেখ্য, প্রিস্টিয়াকো তিন বছর ধরে ব্রিটেনে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ধরে ফেলবে’ চীন, নতুন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বহু বছরের নীরবতা ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার যুগে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
বহু বছরের নীরবতা ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার যুগে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার রাতে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরছে। ১৯৯২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। ট্রাম্প যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন, তবে তা নতুন করে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আগুন জ্বালাতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসার মাত্র এক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। আমার প্রথম মেয়াদকালে এসব অস্ত্রের সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন ও সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘বিশাল ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে আমি এটি করতে ঘৃণা করতাম, কিন্তু কোনো বিকল্প ছিল না! রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে, আর চীন অনেক পেছনে তৃতীয়—তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা আমাদের ধরে ফেলবে, সমান হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য দেশের পরীক্ষামূলক কর্মসূচির কারণে আমি যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রগুলোও সমানভাবে পরীক্ষা শুরু করতে। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হবে।’

এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, দেশটি সফলভাবে ‘পসাইডোন’ নামক একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডো পরীক্ষা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই টর্পেডো উপকূলীয় অঞ্চল ধ্বংস করতে সক্ষম, কারণ এটি বিশাল রেডিওঅ্যাকটিভ সমুদ্র-স্রোত তৈরি করতে পারে।

অপরদিকে, ট্রাম্প যখন রাশিয়া বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ও অবস্থান আরও কঠোর করেছেন, তখন পুতিন প্রকাশ্যে তাঁর পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন করছেন। গত ২১ অক্টোবর নতুন ‘বুরেভেসনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা এবং ২২ অক্টোবর পারমাণবিক হামলার মহড়া তারই প্রমাণ।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল। পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে জানা যায়, নতুন অস্ত্র কতটা কার্যকর হবে এবং পুরোনো অস্ত্রগুলো এখনো কাজ করছে কি না। প্রযুক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি, এমন পরীক্ষা রাশিয়া ও চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক যুগের সূচনা করেছিল ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্দোতে ২০ কিলোটন ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়ে। সেই বছরের আগস্টে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যার মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানে ফের ভাঙনের আশঙ্কা, দারফুরে ৩ দিনে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা বিদ্রোহীদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিদ্রোহে জর্জরিত সুদানের এল–ফাশের শহরের একটি বাজার পুড়িয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্রোহে জর্জরিত সুদানের এল–ফাশের শহরের একটি বাজার পুড়িয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। ছবি: সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিম দারফুরের এল-ফাশের শহর দখলের সময় আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) বহু মানুষকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে এক চিকিৎসক সংগঠন ও কয়েকজন গবেষক। সুদান ডক্টর্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশের নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে থাকা আরএসএফ গত ৩ দিনে অন্তত দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। সংগঠনটি একে ‘সত্যিকারের গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সুদান ডক্টর্স নেটওয়ার্কের ভাষায়, ‘আজ বিশ্বের সামনে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা আসলে সেই হত্যারই ধারাবাহিকতা যা দেড় বছর আগে এল-ফাশেরে ঘটেছিল। সে সময় বোমা হামলা, অনাহার ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় ১৪ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল।’

তাদের দাবি, এসব হামলা ‘পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে মানুষ হত্যার একটি অভিযানের অংশ।’ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব থেকে প্রকাশিত নতুন তথ্যও এই হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, আরএসএফের দখলের পর তোলা স্যাটেলাইট চিত্রে মানুষের মৃতদেহের আকারের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন বহু বস্তু দেখা গেছে। পাশাপাশি, মাটিতে বড় বড় লালচে দাগও ধরা পড়েছে, যা রক্তপাতের ইঙ্গিত দেয়।

এর আগে, ২০২৩ সাল থেকে আরএসএফ ও সুদানি সেনাবাহিনীর মধ্যে চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। ১৭ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর গত রোববার এল-ফাশের দখল করে নেয় আরএসএফ। এটি দারফুর অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল।

বুধবার সুদান সরকার জানায়, শহরটিতে অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলোও জানিয়েছে, তারা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে খবর পেয়েছে যে শহরে গণহত্যা, পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা, এবং ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যার মতো ভয়াবহ নৃশংসতা চলছে।

এল-ফাশের শহরে নারী ও কিশোরীদের ওপর ব্যাপক যৌন সহিংসতার খবরও পাওয়া গেছে। এই শহর দখলের মধ্য দিয়ে দারফুরের প্রায় পুরোটাই আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এতে আবারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এক দশকেরও বেশি আগে দক্ষিণ সুদানের মতো, সুদান হয়তো আবারও বিভক্ত হবে।

সুদানের সেনা-সমর্থিত সরকার আরও অভিযোগ করেছে, এল-ফাশের দখলের সময় আরএসএফ মসজিদে অবস্থানরত সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা মোনা নুর আল-দাইম বলেন, ‘মিলিশিয়ারা এল-ফাশেরে প্রবেশের সময় দুই হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্য।’

খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মর্গান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরএসএফের ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের যোদ্ধারা পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হলো—আরএসএফ যোদ্ধারা এল-ফাশেরের সৌদি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে রোগীদের গুলি করে হত্যা করছে।’

বেঁচে ফেরা প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই হাসপাতালে অন্তত ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। নিহতদের মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস জানান, শুধু সৌদি ম্যাটারনিটি হাসপাতালেই ৪৬০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

সুদান ডক্টর্স নেটওয়ার্ক জানায়, মঙ্গলবার আরএসএফ যোদ্ধারা ‘সৌদি হাসপাতালের ভেতরে যাকে পেয়েছে তাকেই ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে—রোগী, তাদের স্বজন, এমনকি হাসপাতালে উপস্থিত অন্য সবাইকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অর্থনৈতিক সংঘাত’ স্বাভাবিক সির কাছে, বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানে আশাবাদী ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫১
বুসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ছবি: এএফপি
বুসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিমানঘাঁটিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে এই বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প। আর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের সম্পর্কের এক দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলার ব্যাপারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে এই বৈঠক হচ্ছে। ২০১৯ সালের পর এটিই ট্রাম্প ও সির প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। এটি ট্রাম্পের এশিয়া সফরের শেষ ধাপ। এর আগে এই সফরে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে একাধিক বাণিজ্যিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরেছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের বৈঠক অত্যন্ত সফল হবে, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিনি (সি চিন পিং) খুব কঠিন আলোচক।’ সির সঙ্গে করমর্দনের সময় সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প আরও জানান, বৃহস্পতিবারই হয়তো তাঁরা ‘একটি বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর’ করতে পারেন। সেই সময় সির মুখচ্ছবি ছিল বরাবরের মতোই প্রায় নিরাবেগ।

দুই দেশের প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসলে দোভাষীর মাধ্যমে সি ট্রাম্পকে বলেন, ‘বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে মাঝেমধ্যে কিছু সংঘাত স্বাভাবিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমাদের আলোচকেরা উভয় পক্ষের মূল উদ্বেগ দূর করার বিষয়ে একটি মৌলিক ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চাই, যাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে ওঠে।’

বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ডলারের বিপরীতে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মান এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, বাণিজ্য উত্তেজনা কমলে বিশ্ববাজার স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে। ওয়াল স্ট্রিট থেকে টোকিও পর্যন্ত শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রেকর্ড উচ্চতা দেখা গেছে।

এপেক (এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন) সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প বারবার আশাবাদী মন্তব্য করেছেন। গত রোববার কুয়ালালামপুরে দুই দেশের আলোচকেরা সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর থেকে তিনি এটি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে আসছেন।

তবে অর্থনীতি ও ভূরাজনীতির নানা ক্ষেত্রে দুই দেশই ক্রমে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। তাই এই অস্থায়ী সমঝোতা কত দিন টিকবে, সে বিষয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ মাসেই বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন করে তীব্র হয়, যখন বেইজিং বিরল ধাতু রপ্তানিতে বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তাব দেয়। এই খনিজগুলো উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পে অপরিহার্য, আর চীন এই খাতের প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

জবাবে ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার ব্যবহার করা পণ্যের চীনে রপ্তানিতেও সীমাবদ্ধতা আনার হুমকি দেন, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারত।

এর আগে গত সপ্তাহের শেষ দিকে দুই দেশের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচকদের মধ্যে জোরদার যোগাযোগের পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, বেইজিং এক বছরের জন্য বিরল ধাতুর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত করতে পারে এবং মার্কিন কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সয়াবিন কেনা আবার শুরু করতে পারে। এ বিষয়ে ট্রাম্প ও শির মধ্যে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো চুক্তি’ হতে যাচ্ছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সম্মেলনের আগে চীন কয়েক মাস পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কিনেছে বলে বুধবার রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়। হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে, এই বৈঠক বছরের মধ্যে ট্রাম্প ও শির মধ্যে আরও কয়েকটি বৈঠকের সূচনা হতে পারে, এমনকি একে অপরের দেশে সফরও হতে পারে। অর্থাৎ আলোচনা দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিতে পারে।

তবে ট্রাম্প দ্রুত কিছু ফল চান। বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ী মহলও তাই গভীর মনোযোগে এই বৈঠক পর্যবেক্ষণ করছে। বুধবার ট্রাম্প বলেন, ফেন্টানিল নামের প্রাণঘাতী সিনথেটিক মাদকের উপকরণ সরবরাহ কমাতে চীনের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক কমাতে পারে।

ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা টিকটকের বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতেও সির সঙ্গে তিনি স্বাক্ষর করতে পারেন, যদি চীনা মালিকেরা অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্যক্রম বিক্রি করতে সম্মত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন করে ‘কার্যকর’ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ফের ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৩৬
ফাইল ছবি। ছবি: এএফপি
ফাইল ছবি। ছবি: এএফপি

এক দিন আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা চালিয়ে প্রায় ১০০ জনকে হত্যা করে ইসরায়েল। তারপর তারাই আবার যুদ্ধবিরতি ‘কার্যকর’ করার ঘোষণা দেয়। এবার সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবারও হামলা চালিয়েছে। এতে দুজন নিহত হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় নতুন করে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যদিও তারা দাবি করেছে—সংবেদনশীল যুদ্ধবিরতি ‘আবারও কার্যকর’ হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমাবর্ষণের পর থেকেই এই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। সেই হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়।

এদিকে মঙ্গলবারের হামলার পর ইসরায়েলের দাবি করা ‘কার্যকর হওয়া’ যুদ্ধবিরতি ভেঙে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গাজার বাইত লাহিয়ায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-শিফা হাসপাতাল। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল একটি অস্ত্রভান্ডার, যা সেনাদের জন্য ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ হয়ে উঠেছিল।

এই হামলায় গাজার নাজুক যুদ্ধবিরতি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাতের ভয়াবহ বোমাবর্ষণ ছিল ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর এই যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে তীব্র হামলা। দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় মঙ্গলবার এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ‘প্রচণ্ড প্রতিশোধমূলক হামলা’ চালানোর নির্দেশ দেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ওই হামলায় ১০৪ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলায় বহু সিনিয়র হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে। পরে তারা ঘোষণা দেয়, বুধবার মধ্যাহ্ন থেকে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক হামলার পরও যুদ্ধবিরতি ‘বিপদের মুখে নেই’। আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারী কাতার এই সহিংসতায় হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ, বিশেষ করে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

গাজা শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, নতুন করে হামলা শুরু হওয়ায় দুই বছরের যুদ্ধের ক্লান্ত জনগণের মনে আবারও ভয় ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, ‘এক মুহূর্তের জন্য শান্তির যে আশা দেখা দিয়েছিল, তা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। অনেকের জন্য এটা গণহত্যার শুরুর দিকের সেই ভয়ংকর দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যখন বিশাল বোমার আঘাতে গাজা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।’

শাতি শরণার্থীশিবিরের একটি স্কুলে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মা খাদিজা আল-হুসনি বলেন, ‘মানুষ একটু করে শ্বাস নিচ্ছিল, আবার জীবন গুছিয়ে নিতে চাইছিল, ঠিক তখনই এই হামলা শুরু হলো।’ তিনি বলেন, ‘এটা অপরাধ। হয় যুদ্ধবিরতি থাকবে, নয় যুদ্ধ—দুটি একসঙ্গে হতে পারে না। শিশুরা রাতভর ঘুমাতে পারেনি; তারা ভেবেছিল যুদ্ধ শেষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত