Ajker Patrika

মস্কোতে সি-পুতিনের ২০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষর, আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রত্যয়

অনলাইন ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ছবি: রুশ বার্তা সংস্থা তাস
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ছবি: রুশ বার্তা সংস্থা তাস

কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীন। গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর স্বাক্ষরিত হয় চুক্তিটি। এটিকে দুই দেশের আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে উভয় পক্ষ।

দুই নেতা একসঙ্গে ২০টিরও বেশি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে—আন্তর্জাতিক আইন, জৈব নিরাপত্তা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, কোয়ারেন্টিন ইনস্পেকশন (সঙ্গনিরোধ পরিদর্শন) এবং চলচ্চিত্র শিল্পে সহযোগিতা। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

মস্কোয় যৌথ বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও ভূরাজনৈতিক চাপের মধ্যে রাশিয়া-চীন সম্পর্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে কাজ করছে। পুতিন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে আরও ন্যায়সংগত ও গণতান্ত্রিক বহুপক্ষীয় বিশ্বব্যবস্থা গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সি চিনপিংয়ের বক্তব্য— রাশিয়া ও চীন আন্তর্জাতিক সমাজে স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও অগ্রসরমাণ শক্তি এবং বিশ্ব শাসনব্যবস্থাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করবেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আমরা একতরফা সিদ্ধান্ত ও বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিশেষ দায়িত্ব পালন করছি।’

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে বলে জানান পুতিন, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়। তিনি জানান, বর্তমানে চীনা গাড়ির প্রধান আমদানিকারক হয়ে উঠেছে রাশিয়া এবং রাশিয়ায় চীনা শিল্প স্থাপনেও তারা আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের যৌথ বিবৃতিতে বেশ কিছু ‘সাহসী লক্ষ্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ‘উল্লেখযোগ্য মানগত উন্নয়ন’ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা। বাণিজ্য সম্পর্কের ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে কাজ চলছে। রাশিয়া এখন চীনা গাড়ির সবচেয়ে বড় আমদানিকারকে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে চীনা শিল্পপ্রযুক্তির রাশিয়ায় স্থানান্তরকে স্বাগত জানাই।’

গত বছর দুই দেশের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য হয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার জন্য চীন বড় বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, চীন রাশিয়াকে দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য পণ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে সহযোগিতা করছে, যদিও বেইজিং তা অস্বীকার করেছে।

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত বুধবার রাশিয়া পৌঁছান সি। তিনি পুতিনের আমন্ত্রণে রাশিয়ার বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন। এই দিনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয় ও মিত্রদের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি হিসেবে উদ্‌যাপন করছে রাশিয়া।

বিদেশি অতিথিদের মধ্যে তাঁকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করছে রুশ গণমাধ্যমগুলো। সির আগমনের আগেই খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে বিজয় দিবসের প্রধান অতিথি বলে উল্লেখ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ক্রেমলিনে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সিকে স্বাগত জানান পুতিন। বৈঠকের শুরুতে দুই নেতা একে অপরকে ‘বন্ধু’ বলেও সম্বোধন করেন।

গত এক দশকে দুই নেতা ৪০ বারেরও বেশি বৈঠক করেছেন। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বিরোধের মুখে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক যে আরও গভীর হচ্ছে এটি তারই নিদর্শন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে বিশ্ব ব্যবস্থায় যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই সি-পুতিনের এই ঐক্য প্রদর্শন। তাদের ভাষ্য— বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি দোলাচলে, তখন চীন ও রাশিয়া সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের মাঝেও চীন রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হয়ে উঠেছে।

বিজয় দিবসের আয়োজনে বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের নেতা মস্কোতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। কুচকাওয়াজে অংশ ১৩টি দেশের সেনাবাহিনীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে, এই সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া আন্তর্জাতিক নেতাদের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, যারা বিজয় দিবস উপলক্ষে রাশিয়ায় যাচ্ছেন, ইউক্রেন তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবে না।

৯ মে’র বিজয় দিবস রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জাতীয় উৎসব। এটি ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে নাৎসি জার্মানির আত্মসমর্পণের স্মরণে উদ্‌যাপিত হয়।

অন্যদিকে ইউরোপে ৮ মে পালিত হয় ‘ভিই ডে’ বা ‘ভিক্টরি ইন ইউরোপ ডে’—যেদিন জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে সব মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে।

উল্লেখ্য, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের এই বৈঠকটি হয়েছে এমন এক সময়, যখন ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। গত মাসে একতরফাভাবে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। রুশ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানায়, এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয় স্থানীয় সময় বুধবার রাত ১২টায়। তবে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী দাবি করেছে, এই সময়ের মধ্যেই রাশিয়া উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সামি শহরের ওপর গাইডেড বোমা হামলা চালিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত