Ajker Patrika

চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের গবেষক গ্রেপ্তার

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩: ০০
চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের গবেষক গ্রেপ্তার

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের এক গবেষককে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

পুলিশ জানিয়েছে, এই আইনের অধীনে গত মার্চ মাসে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের একজনের বয়স ২০ বছর ও অপরজনের ৩০। 

একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, দুজনের মধ্যে একজন আন্তর্জাতিকবিষয়ক ইস্যুতে জড়িত সংসদীয় গবেষক। 

সানডে টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে, রক্ষণশীল দলের বেশ কয়েকজন এমপির সঙ্গে ওই গবেষকের সম্পর্ক ছিল। 

আজ রোববার সকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে জানানো হয়েছে, একজন সিনিয়র কর্মকর্তার ওপর চীনের হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঋষি সুনাক। 

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভারতে জি-২০ সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঋষি সুনাক। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রে চীনা হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

সানডে টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী টম তুগেন্ডহাট এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারওম্যান অ্যালিসিয়া কার্নসসহ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ওই গবেষকের। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকটি সরকারি সূত্র নিরাপত্তাজনিত কারণে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, অক্সফোর্ডশায়ারে ৩০ বছর বয়সী একজনকে এবং এডিনবার্গ থেকে ২০ বছর বয়সী আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের স্থাবর সম্পত্তির পাশাপাশি পূর্ব লন্ডনের আরেকটি ঠিকানার বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তারের পর দুজনকেই দক্ষিণ লন্ডনের একটি পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয় এবং অক্টোবরের শুরুতে পুলিশি জামিন দেওয়া হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম কমান্ড এ ঘটনার তদন্ত করছে। 

জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তুগেন্ডহাট নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে ওই গবেষকের যোগাযোগ ছিল। মন্ত্রী হওয়ার আগেই ওই গবেষকের সঙ্গে তুগেন্ডহাটের সীমিত যোগাযোগ ছিল। তবে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

ওই গবেষকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে সানডে টাইমস বলেছে, তিনি কিছুদিন চীনে বসবাস করেছিলেন। 

কনজারভেটিভ দলের এমপি অ্যালিসিয়া কার্নস এই বিষয়ে অবগত ছিলেন। তবে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘যেহেতু আমি জনস্বার্থকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিই, তাই কর্তৃপক্ষের কোনো কাজ যাতে বিপন্ন না হয় তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার কর্তব্য।’ 

এ বিষয়ে বিচারসচিব অ্যালেক্স চাক বিবিসিকে বলেন, তিনি নির্দিষ্ট কোনো মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না। 

অ্যালেক্স চাক চীনের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের বর্তমান সম্পর্কের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেছেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক গভীর করার সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু ঋষি সুনাক সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। 

চীনা গুপ্তচরবৃত্তির উদ্বেগ

এই গ্রেপ্তার বেইজিংয়ের সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্কের বিতর্ককে নতুন করে ঘি ঢালবে। চীনা গুপ্তচরবৃত্তি এবং পার্লামেন্টে হস্তক্ষেপের বিষয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ রয়েছে। ঝুঁকি হ্রাসে আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

অন্য দেশগুলো বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা চীনা গুপ্তচরবৃত্তি বা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিষয়গুলো যাচাই করে দেখেছে। তবে চীন সরকার এই ধরনের কোনো কার্যকলাপ জড়িত না বলে জানিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি এবং বৃহত্তর নিরাপত্তা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলেও গত কয়েক মাসে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে ওয়াশিংটন ও লন্ডনের প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লেভারলি দুই সপ্তাহেরও কম আগে বেইজিং সফর করেছেন। সফরের পর তিনি বিবিসিকে বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা উচিত হবে না।

গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় কনজারভেটিভ এমপি ইয়ান ডানকান স্মিথ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সির অধীনে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) যেই হুমকির পরিবেশ সৃষ্টি করছে, তা স্বীকার করার সময় এসেছে।

তিনি চীনের প্রতি যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘ক্লেভারলির বেইজিং সফরের মূল্য কি এই ছিল?’

যুক্তরাজ্যর পার্লামেন্টের এমপি টিম লফটন বলেছেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে সিসিপির তাঁবু ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলোর কত গভীরে পৌঁছেছে। সংসদের নিরাপত্তার বিষয়েও আপস করা হয়েছে। এ অবস্থায় সিসিপিকে আমরা বিদেশি হুমকি ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে দেখতে পারি না।’

পার্লামেন্টের ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কমিটি জুলাইয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বেইজিং-লন্ডন সম্পর্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ধীর গতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্য সরকারে হস্তক্ষেপ করার তীব্র অভিপ্রায় রয়েছে চীনের। দেশটি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ভাবনা এবং চীনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করতে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত