Ajker Patrika

ভূমিকম্প: তুরস্কে তীব্র ঠান্ডায় উদ্ধার ব্যাহত, বাড়ছে ক্ষোভ

ভূমিকম্প: তুরস্কে তীব্র ঠান্ডায় উদ্ধার ব্যাহত, বাড়ছে ক্ষোভ

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুর মিছিল কেবলই বাড়ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৫৮৭ জন মানুষের। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। অনেক স্থানেই উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতেই পারেনি। স্বজনহারা ও নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ অপ্রতুল উদ্যোগ নিয়েছে, উদ্ধারকাজ চলছে ধীর গতিতে। 

আরজু দেদেওগ্লু নামের এক নারী গত রাতে দক্ষিণ তুরস্কের ইস্কেন্দেরুনের নুমুনে জেলায় বিবিসির এক প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের দুই মেয়ে আয়েসেগুল এবং ইলায়দা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা আছে। একদিন পার হলেও কোনো উদ্ধারকর্মী আসেননি। আমি নিশ্চিত, দুই বুকের মানিক আর বেঁচে নেই। উদ্ধারকর্মীরা কেন আগে এল না?’ 

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্তাক্যায় বেঁচে যাওয়া ৬৪ বছর বয়সী নারী মেলেক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তাঁবুগুলো কোথায়, খাবারের ট্রাকগুলো কোথায়?’ 

উদ্ধারকারীরা সতর্ক করে বলছেন, আটকে পড়া ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে বুধবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, তীব্র ঠান্ডায় উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

দক্ষিণ তুরস্কের গাজিয়ানটেপ থেকে বিবিসিকে দাতব্য সংস্থার এক ব্যক্তি বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় যানবাহন নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।’ 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা থেকে দাতব্য সংস্থার সেই ব্যক্তি বলেন, এ ধরনের একটি দুর্ঘটনার পর ‘সর্বদা বিশৃঙ্খলা’ দেখা দিয়ে থাকে। কিন্তু বিষয়গুলো ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে। স্থানীয় মানুষ, সরকার, পুলিশ, মিলিটারি, এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে বিষয়গুলোর উন্নতি হবে। 

ভূমিকম্পের পর ঠান্ডা ও ক্ষুধায় মানবেতর জীবনযাপন করছে তুরস্কের মানুষ। হাতায় প্রদেশের আনতাকইয়ার ৬৪ বছর বয়সী এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ভূমিকম্পে প্রাণে বেঁচে গেছি। কিন্তু আমরা এখানে এখন ঠান্ডা ও ক্ষুধার কারণে মারা যাব।’ 

তুরস্কের পূর্ব আনাতোলিয়া অঞ্চলের শহর মালত্যার বাসিন্দা মুরাত আলিনাকের বাড়িটি ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত তাঁর স্বজনেরা নিখোঁজ ছিলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘সাহায্যের জন্য একজনও নেই। আমরা বরফের মধ্যে। গৃহহীন; বলতে গেলে কিছুই নেই। আমি কী করব। কোথায় যাব?’ 

মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, উদ্ধার তৎপরতা এতটাই ধীর গতির যে নিরুপায় হয়ে স্বজনদের খোঁজে ধ্বংসাবশেষে তারাই তল্লাশি শুরু করেছেন। 

সমালোচনার জেরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল বুধবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কাহরামানমারাস প্রদেশে ত্রাণ তৎপরতা দেখতে সফর করেছেন। তিনি এ সময় ভূমিকম্পের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নানা অসুবিধা হয়েছে, তা স্বীকার করেন। তবে এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়কপথ ও বিমানবন্দরকে দায়ী করেন এরদোয়ান। 

আর তুরস্কের রেড ক্রিসেন্টের প্রধান উদ্ধার কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এমন জায়গা নেই যেখান উদ্ধারকারীরা যেতে পারবেন না। 

উল্লেখ্য, তুরস্ক ও সিরিয়ার গত সোমবার ভোরের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে গুঁড়িয়ে যায় দুই দেশের হাজার হাজার হাসপাতাল, স্কুল ও অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে দেশ দুটির বিপুলসংখ্যক লোক। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১০ প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ঘটা এই ভূমিকম্পে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি লোকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত