Ajker Patrika

ফ্রান্সের প্রত্যন্ত গ্রামে ব্রিটিশ দম্পতির রহস্যময় মৃত্যু ঘিরে হাজারো প্রশ্ন

অ্যান্ড্রু সার্ল ও তাঁর স্ত্রী ডোন। ছবি: সংগৃহীত
অ্যান্ড্রু সার্ল ও তাঁর স্ত্রী ডোন। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এক ব্রিটিশ দম্পতির রহস্যজনক মৃত্যু তাঁদের পরিবার ও স্থানীয়দের হতবাক করে দিয়েছে। ৬২ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু সার্ল এবং তাঁর ৫৬ বছর বয়সী স্ত্রী ডোন সার্লের মৃতদেহ গত বৃহস্পতিবার তাঁদের বাসস্থানে পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রুর বাবা ৮৮ বছর বয়সী ফ্রেড সার্ল ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট সাসেক্সের বাসিন্দা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের হাজারো প্রশ্ন আছে, কিন্তু উত্তর খুব কম।’

রোববার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমস জানিয়েছে, অ্যান্ড্রুর বাবা তাঁর পুরো পরিবারকে একত্রিত করতে ফ্রান্সের টুলুজ শহরে উড়ে গেছেন। এই শহর থেকে খুব কাছেই একটি গ্রামে তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। লেস প্যাসকুইজ নামের সেই গ্রামটিতে মাত্র শ খানেক মানুষ বসবাস করেন। শান্তিপ্রিয় গ্রামটিতে এমন ঘটনা ছিল অকল্পনীয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোন সার্লের মৃতদেহ বাড়ির বাইরে পায়জামা পরা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর কিছু গয়নাও পাওয়া গেছে, যা ডাকাতির সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে। অন্যদিকে, অ্যান্ড্রুর দেহটি বাড়ির ভেতরেই পাওয়া যায়। তিনি ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন।

হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গ্রামটি এতটাই শান্ত যে, সাধারণ ফল চুরির ঘটনাকেই সেখানে সবচেয়ে বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

লেস প্যাসকুইজ গ্রামে ৪৬ বছর ধরে বাস করছেন ৭০ বছর বয়সী অ্যালান। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই নিরিবিলি একটি জায়গা। আমরা এত পুলিশ দেখে অভ্যস্ত নই।’

তদন্তকারীরা সুইমিং পুল, গ্যারেজ ও বাড়ির আশপাশে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মৃত্যুর একদিন আগে কুকুর নিয়ে হাঁটার সময় অ্যান্ড্রু সার্লকে কারও সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময়ে লিপ্ত হতে দেখা গিয়েছিল। তিনি তাঁর গ্যারেজের দরজা খোলা দেখে উদ্বিগ্ন ছিলেন বলেও জানা গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এই ঘটনাকে একটি ডাকাতি হিসেবেই ধারণা করছেন। আবার আর্থিক অপরাধ তদন্তকারী হিসেবে ২১ বছর কাজ করেছেন অ্যান্ড্রু। এই বিষয়টিও তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত হতে পারে। কিছু তদন্তকারী হত্যা ও আত্মহত্যা দুই সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন।

অ্যান্ড্রু ও ডোন দুজনেরই আগের সম্পর্ক থেকে সন্তান রয়েছে। মৃত্যুর খবর শুনে অ্যান্ড্রুর ৩৪ বছর বয়সী ছেলে টম ভারত থেকে ফ্রান্সে যাচ্ছেন। আর ডোনের ৩০ বছর বয়সী ছেলে ক্যালাম কের একজন কান্ট্রি মিউজিক গায়ক এবং ‘হলিইয়োকস’ টিভি সিরিজের অভিনেতা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনিও রওনা দিয়েছেন।

অ্যান্ড্রু ও ডোন ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে চলে এসেছিলেন। পরে এই গ্রামেই ২০২৩ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। লেস প্যাসকুইজ গ্রামটিতে তাঁরা নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। অ্যান্ড্রু গ্রামের ব্রেড ফেস্টিভ্যাল কমিটির সদস্য ছিলেন। এই দম্পতি প্রতিবছরই গ্রামবাসীদের জন্য ড্রিংকস পার্টির আয়োজন করতেন। তাঁদের বাড়ির পাশে থাকা একটি ঘর পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিতেন।

অ্যান্ড্রু ও ডোনের বিয়ে পড়িয়েছিলেন স্থানীয় মেয়র জ্যাঁ-সেবাস্তিয়ান ওরসিবাল। মৃত্যুর খবরে বিস্মিত মেয়র বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটি কোনো পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা সাধারণ ডাকাতির ঘটনা। এখনো কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।’

জানা গেছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক জার্মান দম্পতির সঙ্গে অ্যান্ড্রু ও ডোনের মধ্যাহ্নভোজের কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা সেখানে যাননি। বারবার ফোন করে সাড়া না পেয়ে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে সার্ল দম্পতির বাড়িতে যান জার্মান দম্পতি। সেখানে গিয়ে তাঁরাই প্রথম ডোনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে অ্যান্ড্রুর মৃতদেহ বাড়ির ভেতর খুঁজে পায়।

অ্যান্ড্রু সার্ল স্ট্যান্ডার্ড লাইফ ব্যাংকে আর্থিক প্রতারণা ও অর্থপাচার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর লিংকডিন প্রোফাইলে লেখা আছে—গ্রামের জীবন উপভোগ করছি, বাড়ি সংস্কার করছি!

তিনি ইউরোপের সন্দেহভাজন অপরাধীদের ওপর নজরদারির কাজ করতেন এবং পুলিশ, ফ্রড অফিস, রাজস্ব ও শুল্ক বিভাগের সঙ্গে কাজ করতেন।

হৃদয়বিদারক ও রহস্যময় এই ঘটনার প্রকৃত কারণ কী—তা তদন্তকারীদের জন্য এখনো ধোঁয়াশা। একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওডিল মারিয়ান বলেন, ‘অ্যান্ড্রু ও ডোন খুবই সুখী দম্পতি ছিলেন। তাঁরা কখনো কোনো হুমকির কথা বলেননি। এমন কিছু হতে পারে, আমি তা কল্পনাও করতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত