Ajker Patrika

প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে এক বাংলাদেশি বালকের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ২২: ১৮
প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে এক বাংলাদেশি বালকের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা

সময়টা ২০০২ সাল। লন্ডনে ইয়ুথ ক্লাবের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। জীবদ্দশায় যুক্তরাজ্য ও কমনওলেথভুক্ত অনেক দেশেই কিশোর–তরুণদের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। শিশু–কিশোর–তরুণদের সঙ্গে সময় কাটাতেও পছন্দ করতেন।

তবে ইয়ুথ ক্লাবে প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতাটা ভালো ছিল না বাংলাদেশি শাহীন উল্লাহর। এশীয় ও আফ্রিকানদের সম্পর্কে ফিলিপের দৃষ্টিভঙ্গিটা আর দশটা সাধারণ শ্বেতাঙ্গর মতো বলেই মনে করেন অনেকে। এসব অঞ্চলের মানুষের চেহারা, পোশাক, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে এমনসব মন্তব্য তিনি করেছেন যা নিয়ে শেষ পর্যন্ত বাকিংহাম প্যালেস থেকে বিবৃতি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো বরাবরই বলে এসেছে, ডিউক অব এডিনবরার কূটনৈতিক জ্ঞানে খামতি আছে।

২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরকালে প্রিন্স ফিলিপের মন্তব্যে রীতিমতো হকচকিয়ে গিয়েছিলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক ব্যবসায়ী। ফিলিপ আচমকাই তাকে জিজ্ঞেস করে বসেন, তোমরা এখনও তীর ছোঁড়াছুঁড়ি করো নাকি?

ব্রিটেনকে সবচেয়ে বিপদে ফেলেছিলেন চীন সফরে। ১৯৮৬ সালে রানির সঙ্গে ছিলেন ফিলিপ। সেখানে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের এক আয়োজনে তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তোমরা যদি এখানে খুব বেশি দিন থাক, তাহলে তোমাদের চোখও কিন্তু ওই চীনাদের মতো কুঁতকুঁতে হয়ে যাবে!

২০০৩ সালে কমনওয়েলথ সরকারদের বৈঠক উদ্বোধন করতে নাইজেরিয়াতে যান প্রিন্স ফিলিপ। সেখানে নাইজেরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওলুসেগুন ওবাসানজোর জুব্বার মতো ঐতিহ্যবাহী ঢিলেঢালা পোশাকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি বিছানায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছো! প্রেসিডেন্ট খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিলেন।

২০০৯ সালে চারশ ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিককে দাওয়াত দিয়েছিল বাকিংহাম প্যালেস। বাকিংহাম প্যালেসের কর্মী অতুল পাতিল ডেকে ফিলিপ বলেছিলেন, আজ রাতে তো তোমার পরিবারের অনেকেই এখানে আছেন।

এমন আরও বহু মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছেন প্রিন্স ফিলিপ। বিবিসি এমন ৭৮টি বাছাই করা মন্তব্য নিয়ে একটি প্রতিবেদনও করেছে।

তবে প্রিন্সের মন্তব্যে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন বাংলাদেশি কিশোর শাহীন উল্লাহ। ২০০২ সালে ইয়ুথ ক্লাবের ওই আয়োজনে এসে তাদের সঙ্গে ফিলিপ হাসিঠাট্টা দিয়ে আলাপ শুরু করেন। কিন্তু দ্রুতই সেটি তাচ্ছিল্যে রূপ নেয়। তিনি বলতে শুরু করেন, এখানে কেউ মাদকাসক্ত আছে? তিনি সোজা শাহীন উল্লাহর দিকে আঙ্গুল তাক করেন বলেন, এই যে এই ছেলেটাকে মনে হচ্ছে মাদকাসক্ত।

প্রিন্স ফিলিপের এমন আচরণে প্রচণ্ড কষ্ট পান ১৪ বছরের শাহীন। তার বন্ধুরাও হঠাৎ করে গুঁটিসুটি মেরে যায়। শাহীন লজ্জায় মুখ লুকানোর জন্য মরিয়া হয়ে পেছনে ছুটে যান।

ওই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শাহীন উল্লাহ বলেন, তিনি আমাকে মাদকাসক্ত বলেছিলেন। আমার এটা ভালো লাগেনি। আমার বন্ধুদেরও ভালো লাগেনি। আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল। তিনি বড়লোক বলে যেকাউকে যা খুশি বলতে পারেন না!

এই ঘটনার পর শাহীন আর কখনোই প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে কথা বলেননি।

প্রিন্স ফিলিপের এসব আচরণকে অনেকে স্পষ্ট বর্ণবাদী বলেই মনে করেন। আবার ব্রিটিশরা এটিকে স্রেফ রসিকতা বলে এড়িয়ে যেতে চান। এইসব ‘কালো’ ‘গরিবদের’ প্রতি কথাবার্তায় তাচ্ছিল্যের বিষ মাখা থাকলেও ডিউক অব এডিনবরা কিন্তু সবার জন্যই কাজ করেছেন।

প্রিন্স ফিলিপের আরেকটি বহুবিতর্কিত মন্তব্য ছিল ১৯৯৬ সালে স্কটল্যান্ডের ডানব্লেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তখন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, একজন ক্রিকেটার হঠাৎ একটি স্কুলে ঢুকে পড়ল, এরপর ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে অনেককে হত্যা করলো। তাহলে কি ক্রিকেট ব্যাট নিষিদ্ধ করবেন?

ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ গত শুক্রবার ৯৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোক জানাচ্ছে মানুষ। সেই সঙ্গে আলোচনায় আসছে তার অতীত বিতর্কিত মন্তব্যগুলোও।

বর্ণবাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গত বছর বই লেখেন মার্কিন লেখ ফ্রেডেরিক জোসেফ।  প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর পর একটি টুইট বার্তায় তিনি বলেন, অনেকেই আছেন যারা প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বর্ণবাদী এবং উপনিবেশবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। এখন তারাই বলছেন যে ফিলিপের জন্য শোক করা উচিত!

তবে যাই হোক, স্পষ্টভাষী, অসতর্ক ফিলিপের বেফাঁস মন্তব্য রাজপরিবারকে বহুবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

২০১১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন অবশ্য তার পক্ষ সমর্থন করে বলেন, রসিকতা ব্রিটিশদের জীবনের একটি বড় অংশ। এই ক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রিন্স ফিলিপকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত