Ajker Patrika

দিল্লির উপকণ্ঠে ভুয়া দূতাবাস: বেরিয়ে আসছে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ২৩: ১৬
উত্তর প্রদেশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে আটক হর্ষবর্ধন জৈন। ছবি: সংগৃহীত
উত্তর প্রদেশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে আটক হর্ষবর্ধন জৈন। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদে আট বছর ধরে একটি ভুয়া দূতাবাস চালাচ্ছিলেন হর্ষবর্ধন জৈন। তাঁর বিষয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় ৩০০ কোটি রুপির কেলেঙ্কারি, গত ১০ বছরে ১৬২টি বিদেশ ভ্রমণ ও একাধিক বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য যোগসূত্র মিলেছে। পুলিশের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

গত সপ্তাহে গাজিয়াবাদের একটি ভাড়া করা দোতলা বাড়ি থেকে জৈন গ্রেপ্তার হন। ওই বাড়িকেই তিনি দূতাবাস বলে দাবি করেছিলেন। উত্তর প্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) তদন্তে জানা গেছে, জৈন চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং হাওয়ালা রুটের মাধ্যমে অর্থ পাচারেও যুক্ত ছিলেন।

গাজিয়াবাদের ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ভুয়া কূটনৈতিক নম্বরপ্লেটযুক্ত চারটি গাড়ি, জাল নথি ও একটি বিলাসবহুল ঘড়ির সংগ্রহ জব্দ করেছে। পুলিশ আগামীকাল সোমবার আদালতে জৈনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানাবে। পুলিশ জানিয়েছে, জৈন প্রায় ৩০০ কোটি রুপির কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

গাজিয়াবাদের বিলাসবহুল দোতলা ভবনের বাইরে একটি নেমপ্লেটে লেখা ছিল, ‘গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়েস্টার্কটিকা’ ও ‘এইচ ই এইচভি জৈন অনারারি কনসাল’। এই প্রাঙ্গণে ভারত ও ওয়েস্টার্কটিকার পতাকা ছিল। এই দেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের একটি মাইক্রোনেশন (ছোট দ্বীপ দেশ), বিশ্বের কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত কোনো দেশ নয়।

তদন্তকারীদের মতে, জৈন এই ভুয়া দূতাবাসকে নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করতেন। এর মাধ্যমে বিদেশে চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রতারিত করতেন। তদন্তে জানা গেছে, এই ভুয়া দূতাবাস ২০১৭ সাল থেকে চলছিল। জৈন লোকদেখানোর জন্য ‘দূতাবাসের’ বাইরে দাতব্য অনুষ্ঠান, এমনকি ভান্ডারার (সম্প্রদায় ভোজ) আয়োজন করতেন। তিনি ছয় মাস আগে ভবনটি ভাড়া নিয়েছিলেন। যদিও তিনি প্রায় আট বছর ধরে একটি ভুয়া দূতাবাস চালাচ্ছিলেন।

এক রহস্যময় ধর্মগুরুর যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
এক রহস্যময় ধর্মগুরুর যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া দূতাবাসে তল্লাশির সময় পুলিশ জৈনের বিতর্কিত ‘গডম্যান’ চন্দ্রস্বামী ও সৌদি অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির সঙ্গে ছবি খুঁজে পায়। স্বঘোষিত গডম্যান চন্দ্রস্বামী ৮০ ও ৯০-এর দশকে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে তাঁকে তিন প্রধানমন্ত্রী—পিভি নরসীমা রাও, চন্দ্র শেখর ও ভিপি সিংয়ের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৯৬ সালে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁর আশ্রমে তল্লাশি চালিয়ে খাশোগির সঙ্গে তাঁর লেনদেনেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। চন্দ্রস্বামীর বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য অর্থায়নের অভিযোগও ছিল।

ইউপি এসটিএফ জানতে পেরেছে, চন্দ্রস্বামীই জৈনকে খাশোগি ও প্রতারক আহসান আলী সাঈদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। অভিযোগ করা হয়েছে যে, সাঈদ জৈনের সঙ্গে ২৫টি শেল কোম্পানি খুলতে কাজ করেছিলেন। এ ধরনের কোম্পানি অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণকারী সাঈদ পরে তুর্কি নাগরিকত্ব নেন।

সাঈদ সুইজারল্যান্ডে ‘ওয়েস্টার্ন অ্যাডভাইজরি গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানি চালাতেন। এই কোম্পানি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং ব্রোকারেজের বিনিময়ে ঋণ পেতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিত। অভিযোগ রয়েছে, এই কোম্পানি প্রায় ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড—প্রায় ৩০০ কোটি রুপি—ব্রোকারেজ সংগ্রহ করে সুইস অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়। আহসান ২০২২ সালে লন্ডনে গ্রেপ্তার হন। পুলিশ এখন এই বিশাল কেলেঙ্কারিতে জৈনের জড়িত থাকার মাত্রা তদন্ত করছে। এর আগে পুলিশ জানতে পেরেছিল, জৈন ভুয়া দূতাবাস ও কূটনৈতিক ছদ্মবেশ ব্যবহার করে নেটওয়ার্কিং করতেন এবং মানুষকে চাকরির লোভ দেখাতেন।

জৈনের গ্রেপ্তারের পর ওয়েস্টার্কটিকা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০১৬ সালে এইচ ভি জৈন ওয়েস্টার্কটিকাকে একটি বড় অনুদান দিয়েছিলেন। পরে আমাদের আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকদের দলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। এই স্বেচ্ছাসেবক দল নিজ নিজ দেশে আমাদের পরিবেশগত ও দাতব্য মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর আনুষ্ঠানিক পদবি ছিল ‘ভারতের অনারারি কনসাল’। তাঁকে কখনই রাষ্ট্রদূতের পদ বা ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রতারণা ও অন্যান্য অপরাধের জন্য তাঁর সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের সময়, জৈনের কাছে কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট, পাসপোর্ট ও ওয়েস্টার্কটিকার সিলমোহরযুক্ত অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। একজন অনারারি কনসাল হিসেবে এই জিনিসগুলো তৈরি করার কোনো অনুমোদন ছিল না। ওয়েস্টার্কটিকা নিজেই নম্বরপ্লেট বা পাসপোর্ট ব্যবহার করে না এবং আমরা কখনোই আমাদের প্রতিনিধিদের এটি করতে অনুমতি বা উৎসাহিত করিনি। তাঁর বাড়িকে ‘‘দূতাবাস’’ বলে অভিহিত করে জৈন আমাদের প্রতিনিধিদের জন্য ওয়েস্টার্কটিকার প্রোটোকল লঙ্ঘন করেছেন।’

ওয়েস্টার্কটিকা কী

মার্কিন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি ২০০১ সালে ওয়েস্টার্কটিকা মাইক্রোনেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে এর গ্র্যান্ড ডিউক নিযুক্ত করেন। অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত ওয়েস্টার্কটিকার আয়তন ৬ লাখ ২০ হাজার বর্গমাইল। ম্যাকহেনরি অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার একটি ফাঁক ব্যবহার করে নিজেকে সেখানকার শাসক নিযুক্ত করেন। যদিও চুক্তিটি দেশগুলোকে অ্যান্টার্কটিকার অংশ দাবি করতে বাধা দেয়। তবে এই চুক্তি ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিষয়ে কিছু বলে না।

ওয়েস্টার্কটিকা দাবি করে, তাদের ২ হাজার ৩৫৬ জন নাগরিক রয়েছে। তবে তাঁদের কেউই সেখানে বাস করেন না। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়েস্টার্কটিকা একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও অ্যান্টার্কটিকা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করে। তাদের নিজস্ব পতাকা, মুদ্রা ও টাইটেলও রয়েছে। তবে কোনো সরকার তাদের স্বীকৃতি দেয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কট্টরপন্থী টিএলপিকে নিষিদ্ধ করল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের লাহোরে টিএলপির বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। ছবি: এএফপি
১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের লাহোরে টিএলপির বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। ছবি: এএফপি

কট্টরপন্থী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানকে (টিএলপি) আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। আজ শুক্রবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের কাছে এই প্রজ্ঞাপনের একটি কপি এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ফেডারেল সরকার বিশ্বাস করে, টিএলপি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত এবং এ-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাই সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৯৭-এর ধারা ১১বি (১)(এ) অনুযায়ী টিএলপিকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পাঞ্জাব প্রদেশ সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী টিএলপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় ফেডারেল মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এই সিদ্ধান্ত একযোগে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভাকে জানায়, টিএলপি বারবার সহিংসতা উসকে দিয়েছে এবং দেশব্যাপী অস্থিরতা তৈরি করেছে।

২০১৫ সালে টিএলপি একটি আন্দোলনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৬ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। টিএলপি পাকিস্তানে বিতর্কিত একটি ইসলামপন্থী দল, যারা প্রায়ই সহিংস বিক্ষোভের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টিএলপি আলোচনায় আসে দেশের ধর্ম অবমাননা আইনের (ব্লাসফেমি আইন) পক্ষে প্রচার চালিয়ে। এর পর থেকে দলটি বেশ কয়েকবার সহিংস বিক্ষোভ করেছে, বিশেষত বিদেশে কোরআন অবমাননার ঘটনায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২১ সালের নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস পর তুলে নেওয়া হয়েছিল—শর্ত ছিল, দলটি আর সহিংসতায় জড়াবে না। কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ইমরান খানের তৎকালীন সরকার সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় টিএলপিকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৩
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

ভারতের মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় একটি হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এক নারী চিকিৎসক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। গত পাঁচ মাসে পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) তাঁকে চারবার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করে গেছেন তিনি।

ওই চিকিৎসক এসআই গোপাল বাদনের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ বাঁ হাতের তালুতে লিখে গেছেন।

ওই চিকিৎসক লিখেছেন, বাদনের লাগাতার হয়রানিই তাঁকে নিজের জীবন দিতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া আরও এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রশান্ত বাংকারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ হাতে লিখে যান ওই নারী।

তাঁর হাতে লেখা ছিল, ‘পুলিশ ইন্সপেক্টর গোপাল বাদনেই আমার মৃত্যুর কারণ। সে আমাকে চারবার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে সে আমাকে ধর্ষণ করেছে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সাতারা জেলায় ফাল্টান মহকুমা হাসপাতালে মেডিকেল কর্মকর্তা ছিলেন ওই চিকিৎসক। আত্মহত্যার কয়েক মাস আগে গত ১৯ জুন ফাল্টান সাবডিভিশনাল অফিসের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশকে (ডিএসপি) লেখা এক চিঠিতে একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

চিঠিতে ওই চিকিৎসক ফাল্টান গ্রামীণ পুলিশ বিভাগের দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ আনেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।

চিঠিতে তিনি গোপাল বাদনে, সাবডিভিশনাল পুলিশ ইন্সপেক্টর পাটিল ও অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ ইন্সপেক্টর লাদপুত্রের নাম উল্লেখ করেন।

চিঠিতে ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘চরম মানসিক চাপের মধ্যে আছি। অনুরোধ করছি, গুরুতর বিষয়টি তদন্ত করা হোক এবং দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

একাধিক সূত্র বলছে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নির্দেশে গোপাল বাদনেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাতের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ মহারাষ্ট্রজুড়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

রাজ্য কংগ্রেস নেতা বিজয় নামদেভরাও ওয়াদেত্তিবার এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বিজয় নামদেভরাও বলেন, ‘যখন রক্ষকই ভক্ষক হয়! পুলিশের কাজ হলো সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু তারাই যদি একজন নারী চিকিৎসককে নির্যাতন করে, ন্যায়বিচার তাহলে কীভাবে হবে? মেয়েটি যখন অভিযোগ করেছিল, তখন কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? রাজ্য সরকার বারবার পুলিশকে আড়াল করছে। ফলে পুলিশের নৃশংসতা বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেষ হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মহাসম্মেলন, ইশতেহারে তিন বিষয়ে জোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বৃহস্পতিবার শেষ হলো চার দিনব্যাপী মহাসম্মেলন। ছবি: সিনহুয়া
বৃহস্পতিবার শেষ হলো চার দিনব্যাপী মহাসম্মেলন। ছবি: সিনহুয়া

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) চার দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির প্লেনাম (পূর্ণাঙ্গ সভা) শেষ হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।

সভা শেষে প্রকাশিত ইশতেহারে চীনের পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই ইশতেহার থেকে চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সামরিক শুদ্ধি অভিযান এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান বার্তা পাওয়া যায়।

ধারণার চেয়েও বড় হতে পারে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান

প্লেনাম বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির ২০৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৬৮ জনের উপস্থিতি চীন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জল্পনা বাড়িয়েছে। প্লেনামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সভায় গুরুতর কারণ ছাড়া এতো নেতার অনুপস্থিতি স্বাভাবিক নয়। জানা গেছে, একজন সদস্যের মৃত্যু এবং ১০ জন বহিষ্কারের পরও ২৬ জন ক্যাডার অনুপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, অনুপস্থিত ছিলেন কয়েক ডজন ‘বিকল্প’ প্রতিনিধি। এই বৃহৎ অনুপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, পার্টির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পরিদর্শন দলগুলোর সর্বশেষ ‘দুর্নীতি বিরোধী’ অভিযানে সরকারিভাবে ঘোষিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অপসারিত হয়েছেন।

সেনাবাহিনীতেও চিত্রটি অত্যন্ত স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদমর্যাদার ৩৩ জন জেনারেলের মধ্যে ২২ জন প্লেনামে যোগ দেননি। যদিও ৮ জনের অপসারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, বাকি ১৪ জনের অনুপস্থিতি রহস্যজনক।

এই ঘটনাকে সি চিনপিংয়ের শক্তি না দুর্বলতা হিসেবে দেখা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। এটি কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন একজন নেতার পদক্ষেপ, নাকি পদমর্যাদা নির্বিশেষে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত একজন দৃঢ় নেতার ইঙ্গিত? তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—পার্টির পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে এই অভিযান থামবে না। কেন্দ্রীয় নীতি গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক জিয়াং জিনকুয়ান জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবিচল দৃঢ়তা বজায় রাখা হবে, এর কোনো শেষ সীমা নেই।

প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে চীনের ঝোঁক

ইশতেহারে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো ‘বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি’ অর্জন করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে চীন বিশেষত কম্পিউটার চিপ এবং উন্নত সফটওয়্যার-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছে। সিপিসি-র এই পদক্ষেপের মূল কথা হলো: কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে, তা নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।

সিপিসি নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াও এটিকে স্পষ্ট করে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ শব্দ উল্লেখ করে বলেছে, ‘দেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বৃহত্তর স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও শক্তি অর্জন করতে হবে এবং নতুন গুণগত উৎপাদনশীল শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে।’ সি চিনপিংয়ের এই ‘নতুন গুণগত উৎপাদনশীল শক্তি’ সামরিক প্রয়োগসহ উচ্চ-স্তরের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে বোঝায়, যা বেসরকারি খাত, রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গড়ে উঠবে। এর মূল লক্ষ্য হলো—আমেরিকান নির্ভরতা ছাড়াই উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করা।

আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা। ছবি: সিনহুয়া
আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা। ছবি: সিনহুয়া

স্থানীয় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের আরেকটি বড় প্রভাব হলো রপ্তানি বাজার হারানো। চীন ঐতিহ্যগতভাবে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এটি অর্থনীতির জন্য একটি কঠিন ধাক্কা। অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিচ্ছিলেন যে চীনকে অভ্যন্তরীণ ভোগ বা ব্যয়ের ওপর বেশি জোর দিয়ে অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে হবে।

আমেরিকান শুল্কের কারণে চীনে তৈরি পণ্যের রপ্তানি কিছুটা কমেছে। এই ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে, চীন এখন তার বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছে। ইশতেহার অনুযায়ী, দেশে একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে হবে এবং উন্নয়নের একটি নতুন প্যাটার্ন তৈরি করতে দ্রুত কাজ করতে হবে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আবাসন সংকট এবং উচ্চ বেকারত্বের কারণে যখন জনগণ সঞ্চয় করতে বেশি আগ্রহী, তখন তাদের কীভাবে বেশি ব্যয় করতে উৎসাহিত করা হবে—সে বিষয়ে এই বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট নতুন ধারণা উঠে আসেনি। একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরির কথা বলা হলেও, বাস্তবে তা কার্যকর করতে কী পদক্ষেপের প্রয়োজন সেটি স্পষ্ট নয়।

সূত্র: বিবিসি

বিষয়:

চীন
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

একসঙ্গে দুই চাকরি: যুক্তরাষ্ট্রে ৪৯ লাখ রুপি আয়ের পর ধরা খেলেন ভারতীয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেহুল গোস্বামী। ছবি: এনডিটিভি
মেহুল গোস্বামী। ছবি: এনডিটিভি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গোপনে ঠিকাদার হিসেবে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিযোগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী মেহুল গোস্বামী নামের ওই নাগরিকের বিরুদ্ধে করদাতাদের অর্থ অপচয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পুলিশের মহাপরিদর্শকের কার্যালয় এবং সারাটোগা কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়ের যৌথ তদন্তে জানা গেছে, মেহুলের এই অবৈধ কার্যকলাপের ফলে করদাতাদের ৫০ হাজার ডলার (প্রায় ৪০ লাখ রুপি) অপব্যবহার হয়েছে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেসের জন্য দূর থেকে কাজ করতেন মেহুল। এটিই ছিল তাঁর মূল চাকরি। কিন্তু পাশাপাশি ২০২২ সালের মার্চ থেকে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি গ্লোবালফাউন্ড্রিজে ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

একটি বেনামি ই-মেইল থেকে বিষয়টি ফাঁস হলে মেহুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

পুলিশের মহাপরিদর্শক লুসি ল্যাং বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সততার সঙ্গে জনগণের সেবা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেহুল গোস্বামীর এহেন আচরণ সেই আস্থার গুরুতর লঙ্ঘন। সরকারি চাকরিতে থাকার সময় দ্বিতীয় পূর্ণকালীন চাকরি করা সরকারি সম্পদ ও করদাতার অর্থের অপব্যবহার।

১৫ অক্টোবর সারাটোগা কাউন্টি শেরিফ কার্যালয় মেহুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত