Ajker Patrika

দক্ষিণ এশিয়ায় সাপে কাটার হার বাড়ছে যে কারণে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪, ১৭: ২৩
Thumbnail image

সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাপে কামড়ানোর হার অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে এই সংখ্যাটা বেশি। বিভিন্ন গবেষণা উঠে এসেছে, এসব দেশে সাপে কামড়ানোর হার বাড়ার অন্যতম বড় কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। এ বিষয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে, ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানে সাপে কামড়ানোর কোনো সরকারি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সে বছর দেশটিতে অন্তত ৪০ হাজার সাপে কামড়ানোর ঘটনা ঘটেছে এবং অন্তত ৮ হাজার ২০০ মানুষ মারা গেছে। নেপাল সরকারের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে প্রতিবছর গড়ে ৪০ হাজার সাপে কামড়ানোর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অন্তত ৩ হাজার ব্যক্তি মারা যায়। 

শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, দেশটিতে ২০১২-১৩ সালে অন্তত ৩৩ হাজার সাপে কাটার ঘটনা ঘটেছে এবং এর ফলে অন্তত ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একই সংস্থার ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৭০ হাজার সাপে কাটার ঘটনা ঘটে এবং এতে অন্তত ৬ হাজার ব্যক্তি মারা যান। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা ভারতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে, দেশটিতে প্রতিবছর গড়ে ৪৫ হাজার ৯০০ মানুষ মারা যায়। 

এই দেশগুলোতে যেসব সাপ বেশি কাটে, সেগুলোর মধ্যে প্রধান চারটি হলো—শঙ্খিনী বা কালনাগ, চন্দ্রবোড়া, রাসেল ভাইপার ও খৈয়া গোখরো। এ ছাড়া কিং কোবরা বা শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরো, গ্রিন পিট ভাইপার বা সবুজবোড়া, ঢ়োঁড়া এবং নেপালি কুকরি সাপও কামড়ায় বেশ। শ্রীলঙ্কায় ও ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভারতীয় পাইথন বা অজগর বা ময়াল সাপে কাটার ঘটনাও ঘটেছে। 

শ্রীলঙ্কার ইউনিভার্সিটি অব কেলানিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ বছর আগের তুলনায় দেশটিতে সাপের কামড় অনেক বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পরিচালিত এই গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, আগামী ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দেশটি সাপে কাটার ঘটনা অন্তত ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এমোরি ইউনিভার্সিটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে একটি গবেষণা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, দৈনন্দিন তাপমাত্রা যত বাড়বে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাপে কাটার হারও বাড়বে। তবে সব সাপের ক্ষেত্রে এই ধারণা প্রযোজ্য নয়। কারণ, প্রতিটি সাপের জীবন ধারণের শর্ত আলাদা আলাদা; তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও প্রতিটি সাপেরও ওপর আলাদা প্রভাবই ফেলবে। 

সাপ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য স্নেকের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল স্টারকি বলেছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক সময় সাপের বর্তমান আবাসস্থলকে অনুপযুক্ত করে তুলতে পারে। ফলে সেগুলো নতুন আবাসের জন্য হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করতে পারে। অনেক সময়ই সাপের পছন্দসই এলাকা আর মানুষের বাসস্থান একই জায়গায় হওয়ার কারণে সাপে কাটার সংখ্যা বেড়ে যায়। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু সাপ পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও কিছু সাপ পারে না। এগুলোর আচরণ বেশি বিপজ্জনক হয় এবং একপর্যায়ে এই সাপগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। আবার অতি বৃষ্টি, বন্যার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতাও সাপে কাটার হার বাড়ানোর একটি অন্যতম কারণ। কারণ, জলাবদ্ধ জায়গা তুলনামূলকভাবে সাপকে আকৃষ্ট করে বেশি। 

স্টারকি বলছেন, বিশ্বজুড়ে নগরায়ণের প্রবণতা সাপের বাসস্থান বিপন্ন করে তুলেছে। আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, তারাও চাপে পড়েছে এবং এ কারণে তারা উদ্‌ভ্রান্তের মতো আচরণ করে। ফলে মানুষকে কাটার হারও বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেছেন, এসব বিষয়ই সাপের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত