Ajker Patrika

রাখাইনে জান্তার শেষ বড় নৌঘাঁটিতে আরাকান আর্মির হামলা

রাখাইন রাজ্যে অবস্থিতি জান্তাবাহিনীর দান্যাওয়াদ্দি নৌঘাঁটি। ছবি: দ্য ইরাবতী
রাখাইন রাজ্যে অবস্থিতি জান্তাবাহিনীর দান্যাওয়াদ্দি নৌঘাঁটি। ছবি: দ্য ইরাবতী

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বন্দরনগরী কায়াকফিউকে হামলা চালিয়েছে। আরাকান আর্মি কায়াকফিউতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নৌঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কায়াউকফিউ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলেই চীনা অর্থায়নে পরিচালিত একাধিক বৃহৎ প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে তেল ও গ্যাস পাইপলাইন, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। রাখাইনে জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর মধ্যে কায়াউকফিউ, রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে এবং মানআংই অন্যতম। আর বাদবাকি ১৪টি টাউনশিপ আরাকান আর্মি দখল করেছে।

স্থানীয়দের মতে, এক বছরেরও বেশি সময় পর আবারও এই অঞ্চলে আক্রমণ করছে আরাকান আর্মি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি আরাকান আর্মি দান্যাওয়াদ্দি নৌঘাঁটিতে হামলা শুরু করে এবং একইসঙ্গে আশপাশের সামরিক চৌকি ও একটি পুলিশ ব্যাটালিয়নেও হামলা চালায়।

স্থানীয়র আরও জানিয়েছে, সংঘর্ষ মাঝে থেমে গিয়ে গত সোমবার ও মঙ্গলবার শান্ত ছিল। তবে গতস সপ্তাহের বুধবার থেকে তা আবার শুরু হয় এবং এখনও চলছে। উভয় পক্ষের মধ্যে ভারী গোলাবর্ষণ চলছে এবং জান্তা বাহিনী ওই অঞ্চলের প্রায় ১০টি গ্রামে বিমান হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বহু বাসিন্দা ঘরছাড়া হয়েছে।

কায়াকফিউ অঞ্চলে সি মাউ গ্রামের ৫২ বছর বয়সী উ ন্যো তাঁর পরিবারসহ তাউংউপ টাউনশিপের মা-ঈ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০ ফেব্রুয়ারি আমাদের গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছি। আরও অনেকেই ছেড়েছেন। এই শহরে আমাদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত কেউ নেই, ফলে আশ্রয় পাওয়া কঠিন। আমরা আতঙ্কে আছি যে সংঘর্ষ আরও তীব্র হবে।’

রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নৌঘাঁটির আশপাশের উ কিন, কিয়ান চাই, সাইং চং, সাইং চং দন, শৌক চাং, সি মাউ, কাট থাবিয়ে এবং প্যা তে গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তাবাহিনী।

এদিকে, কায়াউকফিউতে যখন সংঘর্ষ শুরু হয়েছে ঠিক তখনই মিয়ানমারের জান্তা সরকার একটি নতুন আইন পাশ করেছে। এই আইনের মাধ্যমে সশস্ত্র চীনা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রাইভেট সিকিউরিটি সার্ভিসেস আইন অনুযায়ী, চীনের বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন দেশটিতে অবস্থান করে বেইজিংয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে, বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পগুলোর। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে কায়াউকফিউও আছে।

গত বৃহস্পতিবার জান্তাবাহিনী যুদ্ধবিমান ও ওয়াই-১২ এয়ারক্রাফট ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রামে ৫০০-পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে বলে জানা গেছে। রাখাইন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার ফলে বহু বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবার দান্যাওয়াদ্দি নৌঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল আরাকান আর্মি।

স্থানীয়দের দাবি, কায়াউকফিউ ও মানআংয়ে জান্তা বাহিনী অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে এবং উপকূলে আরও নৌযান পাঠানো হয়েছে। কেবল কায়াকফিউ নয়, আরাকান আর্মি রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতেও হামলা চালাচ্ছে। শহরটিতে আরাকান আর্মির গোলাবর্ষণের কারণে সব বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জান্তাবাহিনী শহর থেকে সড়ক ও জলপথে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং রাজধানীর আশপাশের ২০ টিরও বেশি গ্রামে প্রতিরক্ষা বাঙ্কার নির্মাণ করছে।

আরাকান আর্মি ও তার মিত্রদের সঙ্গে জান্তাবাহিনীর সংঘর্ষ বৃহস্পতিবার থেকে আয়েওয়ারওয়াদি অঞ্চলের থাবাউং টাউনশিপের একাধিক গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত