Ajker Patrika

ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ

অনলাইন ডেস্ক
ভিয়েতনামের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে মার্কিন রপ্তানি থেকে। ছবি: সংগৃহীত
ভিয়েতনামের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে মার্কিন রপ্তানি থেকে। ছবি: সংগৃহীত

গত বুধবার রোজ গার্ডেনে বিশ্বব্যাপী আমদানি পণ্যের ওপর ‘রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ বা পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ। এর মধ্যে ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ায় ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৭ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে ১০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল এসব অঞ্চলের জন্য এটি একটি বড় আঘাত। গত তিন দশকে এসব অঞ্চলের প্রশংসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য বিক্রির সাফল্যের ওপর নির্ভর করেছে। তবে এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল ভিয়েতনাম। দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে মার্কিন রপ্তানি থেকে। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধির গল্প এখন ওয়াশিংটনের শাস্তিমূলক শুল্কের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে।

শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে থাকলে এর প্রভাব ভিন্ন হবে। তবে এটি ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ভিয়েতনামের ‘বাঁশের কূটনীতি’—যেখানে তারা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখে, বিশেষত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই সম্পর্ক এখন পরীক্ষার মুখে।

নতুন কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল তো লামের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম ২০৪৫ সালের মধ্যে একটি উচ্চ আয়ের, জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর জন্য বার্ষিক ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল, যার মূল ভিত্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে বেশি রপ্তানি। ২০২৩ সালে দুই দেশের সম্পর্ক ‘ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত হওয়ার পেছনেও এটি বড় কারণ। কিন্তু এই শুল্কে সেই পরিকল্পনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে চীন পাল্টা শুল্ক দিয়ে জবাব দিলেও, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলোর বার্তা হলো—আতঙ্কিত না হয়ে আলোচনার চেষ্টা। ভিয়েতনাম তাদের উপপ্রধানমন্ত্রী হো ডুক ফককে ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছে এবং মার্কিন আমদানির ওপর সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। থাইল্যান্ড তাদের অর্থমন্ত্রীকে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে এবং শুল্ক কমানোর পাশাপাশি মার্কিন খাদ্য ও বিমান কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও ওয়াশিংটন যাচ্ছেন, যদিও তাদের রপ্তানির মাত্র ১১ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তাই প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন আপসের মেজাজে নেই। ট্রাম্পের বাণিজ্য ও উৎপাদনবিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেছেন, ভিয়েতনামের শূন্য শুল্কের প্রস্তাব ‘অর্থহীন’। তিনি দাবি করেন, ভিয়েতনাম প্রতি ১ ডলারের আমদানির বিপরীতে ১৫ ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করে এবং অ-শুল্ক বাধার মাধ্যমে মার্কিন আমদানি আটকে রাখে। তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামের এক-তৃতীয়াংশ রপ্তানি আসলে চীনা পণ্য, যা ভিয়েতনাম হয়ে পাঠানো হয়। তবে বাণিজ্য গবেষণায় এই হার ৭ থেকে ১৬ শতাংশ বলা হয়।

কম্বোডিয়াও শুল্ক স্থগিতের আবেদন জানিয়েছে। স্থানীয় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ৪৯ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, পোশাকশিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু কোনো শুল্কই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক উৎপাদন ফিরিয়ে আনবে না।

মিয়ানমারের জন্য ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরেকটি বিস্ময়। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত এই দেশের জিডিপির ১ শতাংশেরও কম মার্কিন রপ্তানি থেকে আসে। তবে পোশাকশিল্প এখানেও দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস।

এশিয়ার এই দেশগুলোতে ট্রাম্প এত দিন বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ভিয়েতনামে তাঁর কঠোর ও লেনদেনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি প্রশংসিত হয়েছে। কম্বোডিয়ার সাবেক শক্তিশালী নেতা হুন সেন, যিনি এখনো পর্দার আড়ালে ক্ষমতায়, তিনি ২০১৭ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে সেলফি তুলে গর্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন। গত মাসেও কম্বোডিয়া ট্রাম্পের ভয়েস অব আমেরিকা ও রেডিও ফ্রি ইউরোপ বন্ধ করার প্রশংসা করেছিল। কিন্তু এখন এই অঞ্চলের দেশগুলোকে শুল্ক হ্রাসের জন্য ট্রাম্পের দরবারে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত