Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধে উসকানি দিলে সবার আগে ইউরোপেই হামলা চালাবে রাশিয়া: মেদভেদেভ

অনলাইন ডেস্ক
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউরোপ বা ন্যাটোকে আক্রমণ করার কোনো পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বাড়ানোর উসকানি দিলে ‘প্রয়োজনে হামলা’ ইউরোপেই চালাবে রাশিয়া। মেদভেদেভ বলেন, ‘আমাদের এখন সেইভাবেই কাজ করতে হবে। পুরোপুরি প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রতিরোধমূলক হামলা চালাতে হবে।’

তাঁর ভাষ্যমতে, ‘আজ যা ঘটছে, তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রক্সি যুদ্ধ। তবে এটি একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধও বটে এবং সেটা ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, ইউরোপের সঙ্গে। ইউক্রেন থেকে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, স্যাটেলাইট গোয়েন্দাগিরি, নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপের সামরিকীকরণ নিয়ে জোরালো বক্তব্য তারই প্রমাণ।’

১৭ জুলাই ১৯৪৫— ঠিক ৮০ বছর আগে শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক পটসড্যাম সম্মেলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একসঙ্গে বসেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের নেতারা। এ সম্মেলন বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ বদলে দিয়েছিল। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সম্প্রতি তাস সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত থেকে রাশিয়ার নেওয়া শিক্ষা, ইউক্রেন সংকটের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন।

মেদভেদেভ বলেন, ‘পটসড্যাম সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমা মিত্ররা ভেঙে ফেলেছিল। ব্রিটেন তখন অপারেশন আনথিঙ্কেবল নামে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনাও করছিল।’

তিনি ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো যুগের পর যুগ ধরে রাশিয়ার প্রতি অবিশ্বাস ও শত্রুতার মনোভাব পোষণ করে এসেছে। পিটার দা গ্রেটের আমল থেকেই তারা রাশিয়াকে ইউরোপীয় পরিবারে উপযুক্তভাবে স্থান দিতে চায়নি। বরং একে দুর্বল করে রাখার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে।’

স্বাধীন ও শক্তিশালী রাশিয়া পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্ববাদের জন্য এক ‘ঐতিহাসিক ব্যতিক্রম’। এ কারণেই তারা বারবার রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে, বলেন মেদভেদেভ।

তিনি বলেন, ‘১৯৪৫ সালে পটসড্যাম সম্মেলন স্থায়ী শান্তির সূচনা ছিল না বরং এটি ঠান্ডা যুদ্ধের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আজকের ইউক্রেন সংঘাতেও দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র, স্যাটেলাইট গোয়েন্দা নজরদারি ও সামরিকীকরণের হুমকি।’

‘পটসড্যাম আমাদের শিখিয়েছে— পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে কোনো বিভ্রম রাখা উচিত নয়। তাদের বিশ্বাসঘাতকতা, অহংকার ও দ্বিমুখী নীতি আজও বিদ্যমান। আমাদের প্রয়োজনে প্রতিরোধমূলক হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

১৯৪৫ সালের পটসড্যামে জার্মানির জন্য তিনটি মূলনীতি নির্ধারিত হয়েছিল— ডিমিলিটারাইজেশন (নিরস্ত্রীকরণ), ডিনাজিফিকেশন (নাৎসিবাদ নির্মূলকরণ) ও ডেমোক্রাটাইজেশন (গণতন্ত্রায়ণ)। বর্তমান ইউক্রেন সংকটে এসব কি প্রযোজ্য?

মেদভেদেভ বলেন, ‘আকার ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান আলাদা হলেও ইউক্রেনেও নাৎসি প্রতীক, চরম জাতীয়তাবাদী মতবাদ, ও ঘৃণার রাজনীতি দৃশ্যমান।’

মেদভেদেভের মতে— ডিমিলিটারাইজেশন ইউক্রেনকে বিদেশি কৌশলের ‘ঘুঁটি’ থেকে মুক্ত করতে পারে। অপ্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যয় বন্ধ করে অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের সুযোগ দেবে। ডিনাজিফিকেশন প্রতিশোধ নয় বরং ইতিহাস ও গণচেতনার পুনর্গঠন। সোভিয়েত উত্তরাধিকার ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতার ভিত্তি রয়েছে। আর ডেমোক্রাটাইজেশন শুধু নির্বাচন নয়, বরং আইনের শাসন, মুক্ত গণমাধ্যম, এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ার নাম গণতন্ত্র। ২০১৪ সালে এসব থাকলে ইতিহাস অন্যরকম হতো।

তিনি আরও বলেন, এই থ্রি ডি’র সঙ্গে আমি আরেকটি ডি যুক্ত করবো— ডিপ্যারাসিটাইজেশন (পরজীবী নিধন)। ইউক্রেন যেন নির্ভরশীল রাষ্ট্র হয়ে না থেকে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখে।

মেদভেদেভ দাবি করেন, যুদ্ধ শেষে পশ্চিমা দেশগুলো আসলে ডিনাজিফিকেশনকে বা নাৎসিবাদ নির্মূলকে গুরুত্ব দেয়নি। নাৎসি অপরাধীদের ন্যূনতম সাজা দিয়ে বা সাধারণ ক্ষমা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। অনেকেই আবার পরে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকেছে।

তিনি বলেন, এমন ‘সহনশীলতা’ ও একই সঙ্গে উগ্র রুসোফোবিয়া এখনো টিকে আছে—বিশেষ করে বাল্টিক দেশ, পোল্যান্ড ও ইউক্রেনে। এরা সরাসরি হিটলারের সহচর ছিল।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াসের সাম্প্রতিক রাশিয়াবিরোধী বক্তব্য ও চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎসের অতীতকে তুলে ধরে মেদভেদেভ বলেন, ‘এরা নিজেদের নাৎসি পূর্বসূরিদের গর্বের সঙ্গে অনুসরণ করছে।’

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন—আমরা ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, ইউরোপে হামলার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের এই সব বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তি ছড়াতে ও উত্তেজনা বাড়াতে।’

সাক্ষাৎকারের শেষে মেদভেদেভ বলেন, ‘ইতিহাস বিচার করবে— এই কথার মানে তখনই আছে, যখন সত্য ও সব প্রেক্ষাপট উন্মোচিত হয়। মনে রাখতে হবে, নাৎসি জার্মানির চূড়ান্ত বিচারক ছিলেন লাল সেনার সৈনিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস: এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুলের বিরুদ্ধে এবার মামলা

রক্ত কেনা যায় না—ইয়েমেনে নিমিশাকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি মাহদির পরিবারের

২৫ সেকেন্ডে ১২ গুলি, হাসপাতালে গ্যাংস্টারের শরীর ঝাঁঝরা

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ৪ জনের ময়নাতদন্ত হলো না, প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ডিআইজি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত