ডা. মো. আবদুল হাফিজ শাফী
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রায় প্রচুর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা থাকায় আমাদের নাক, কান এবং গলার নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক বেশি দেখা দেয়। গরমের মধ্যে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পানের প্রবণতা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মধ্যেই বাড়ে। তাই টনসিলের প্রদাহ খুব ঘন ঘন হয়। কারণ, গরমে বাইরে থেকে এসে আর অপেক্ষা করতে চায় না কেউ। এই সময় ঘরে ঢুকেই খুব ঠান্ডা জুস, শরবত বা পানি অনেকেই পান করেন। এতে তাপমাত্রার হঠাৎ তারতম্যের কারণে প্রচণ্ড গলাব্যথা হয়, ঢোক গিলতে পারেন না।
ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস প্রাদুর্ভাব
রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে যান, দেখা যায় টনসিলগুলো প্রদাহের কারণে ফুলে লাল হয়ে গেছে। গলার পেছনে ফ্যারিনজাইটিসের সমস্যাও এই সময়ে বেড়ে যায়। এ ছাড়া গরমে এসির ব্যবহার বেশি হয়। গরমে অত্যধিক এসির বাতাসের মধ্যে ঘন ঘন আসা-যাওয়া এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার কারণে ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করলে দেখা যায়, গলার পেছনের দিকে দেয়ালে লাল লাল গুটি গুটি বড় দানার মতো, একে বলা হয় গ্র্যানিউলার ফ্যারিনজাইটিস। মনে রাখতে হবে, ফ্যারিনজাইটিস হলে এর সঙ্গে যদি জ্বর না থাকে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয় না।
সাইনাসের সমস্যা
গরম পড়ার সঙ্গে সর্দি-কাশির পাশাপাশি প্রথম যে সমস্যাটি মানুষকে বিরক্ত করে, তা হলো সাইনাস। গ্রীষ্মের গরম ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সৃষ্ট ঠান্ডা সাইনাসে পরিণত হতে সময় লাগে না। এই পরিস্থিতিতে নাকে সর্দি, মাথাব্যথা ও জ্বরের মতো সমস্যা লেগে থাকে। প্রতিবছর এই মৌসুমে সাইনাসের শিকার হন অনেকেই। দীর্ঘক্ষণ এসির সামনে থাকার পর আপনি যখন গরম আবহাওয়ায় বাইরে যান এবং এরপরে ঠান্ডা কিছু খান, তখন ঠান্ডা লাগার পাশাপাশি সাইনাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমে বাচ্চাদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায় অনেক সময়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক শুকিয়ে গেলে নাকের নরম অংশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এ সময় তারা নাকে আঙুল দিলে নখের খোঁচা থেকে নাকের চামড়া আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তপাত হতে দেখা যায়।
গলা ও কানের সমস্যা
এ ছাড়া এই গরমে গলাব্যথা, কাশির সঙ্গে যদি গলার স্বর পরিবর্তিত হয়, তবে বুঝতে হবে স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ডে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এটিই মূলত ল্যারেনজাইটিস, যার জন্য দায়ী অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান এবং দীর্ঘক্ষণ সরাসরি এসির বাতাসে থাকা। পাশাপাশি নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠী নদী অববাহিকায় থাকার কারণে নদী বা পুকুরে গোসল করে। গরমে আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য কানের বহিরাংশে ওটিটিস এক্সটার্না হয়। ফাঙ্গাস থেকে এটি হতে পারে, যাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও হয়। এটাকে অটোমাইকোসিস বলে। কানের এই রোগ আর্দ্র পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। কারণ, গ্রীষ্মকালে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়, হিউমিডিটি বেড়ে যায়।
প্রতিরোধের উপায়
যেহেতু এই সময়ে প্রচণ্ড আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশ থাকে, তাই গরমে পিপাসাও বেশি পায়। সে ক্ষেত্রে সাধারণ তাপমাত্রার পানি অথবা ঠান্ডা পানির সঙ্গে স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে খেতে হবে। ফ্রিজের অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করাই উত্তম। এতে শরীরের ভেতরের এবং বাইরের তাপমাত্রার ভারসাম্য থাকবে।
একটানা বেশিক্ষণ এসির ঠান্ডায় থাকা যাবে না। আবার খুব গরম থেকে এসে হুট করে বেশি ঠান্ডায় এসি ছেড়ে থাকা যাবে না। এসির বাতাসের ক্ষেত্রে সময় নিন অর্থাৎ শরীরকে স্বাভাবিক উষ্ণতায় আসতে সময় দিন।
কানের প্রদাহের ক্ষেত্রে যেহেতু বেশি আর্দ্র আবহাওয়া দায়ী, সে জন্য কটনবাড দিয়ে কান চুলকানোর বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এতে যে ক্ষতি হয়, তা হলো আর্দ্র আবহাওয়া ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা ইনফেকশনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়, ফলে কানের বহিরাংশে ইনজুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে নাক খোঁচানো থেকে বিরত রাখতে হবে। গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেলে গরম পানির ভাপ নিতে হবে।
লেখক: নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, আবাসিক সার্জন (ইএনটি), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ , হাসপাতাল, সিলেট
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রায় প্রচুর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা থাকায় আমাদের নাক, কান এবং গলার নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক বেশি দেখা দেয়। গরমের মধ্যে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পানের প্রবণতা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মধ্যেই বাড়ে। তাই টনসিলের প্রদাহ খুব ঘন ঘন হয়। কারণ, গরমে বাইরে থেকে এসে আর অপেক্ষা করতে চায় না কেউ। এই সময় ঘরে ঢুকেই খুব ঠান্ডা জুস, শরবত বা পানি অনেকেই পান করেন। এতে তাপমাত্রার হঠাৎ তারতম্যের কারণে প্রচণ্ড গলাব্যথা হয়, ঢোক গিলতে পারেন না।
ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস প্রাদুর্ভাব
রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে যান, দেখা যায় টনসিলগুলো প্রদাহের কারণে ফুলে লাল হয়ে গেছে। গলার পেছনে ফ্যারিনজাইটিসের সমস্যাও এই সময়ে বেড়ে যায়। এ ছাড়া গরমে এসির ব্যবহার বেশি হয়। গরমে অত্যধিক এসির বাতাসের মধ্যে ঘন ঘন আসা-যাওয়া এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার কারণে ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করলে দেখা যায়, গলার পেছনের দিকে দেয়ালে লাল লাল গুটি গুটি বড় দানার মতো, একে বলা হয় গ্র্যানিউলার ফ্যারিনজাইটিস। মনে রাখতে হবে, ফ্যারিনজাইটিস হলে এর সঙ্গে যদি জ্বর না থাকে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয় না।
সাইনাসের সমস্যা
গরম পড়ার সঙ্গে সর্দি-কাশির পাশাপাশি প্রথম যে সমস্যাটি মানুষকে বিরক্ত করে, তা হলো সাইনাস। গ্রীষ্মের গরম ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সৃষ্ট ঠান্ডা সাইনাসে পরিণত হতে সময় লাগে না। এই পরিস্থিতিতে নাকে সর্দি, মাথাব্যথা ও জ্বরের মতো সমস্যা লেগে থাকে। প্রতিবছর এই মৌসুমে সাইনাসের শিকার হন অনেকেই। দীর্ঘক্ষণ এসির সামনে থাকার পর আপনি যখন গরম আবহাওয়ায় বাইরে যান এবং এরপরে ঠান্ডা কিছু খান, তখন ঠান্ডা লাগার পাশাপাশি সাইনাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমে বাচ্চাদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায় অনেক সময়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক শুকিয়ে গেলে নাকের নরম অংশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এ সময় তারা নাকে আঙুল দিলে নখের খোঁচা থেকে নাকের চামড়া আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তপাত হতে দেখা যায়।
গলা ও কানের সমস্যা
এ ছাড়া এই গরমে গলাব্যথা, কাশির সঙ্গে যদি গলার স্বর পরিবর্তিত হয়, তবে বুঝতে হবে স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ডে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এটিই মূলত ল্যারেনজাইটিস, যার জন্য দায়ী অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান এবং দীর্ঘক্ষণ সরাসরি এসির বাতাসে থাকা। পাশাপাশি নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠী নদী অববাহিকায় থাকার কারণে নদী বা পুকুরে গোসল করে। গরমে আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য কানের বহিরাংশে ওটিটিস এক্সটার্না হয়। ফাঙ্গাস থেকে এটি হতে পারে, যাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও হয়। এটাকে অটোমাইকোসিস বলে। কানের এই রোগ আর্দ্র পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। কারণ, গ্রীষ্মকালে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়, হিউমিডিটি বেড়ে যায়।
প্রতিরোধের উপায়
যেহেতু এই সময়ে প্রচণ্ড আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশ থাকে, তাই গরমে পিপাসাও বেশি পায়। সে ক্ষেত্রে সাধারণ তাপমাত্রার পানি অথবা ঠান্ডা পানির সঙ্গে স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে খেতে হবে। ফ্রিজের অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করাই উত্তম। এতে শরীরের ভেতরের এবং বাইরের তাপমাত্রার ভারসাম্য থাকবে।
একটানা বেশিক্ষণ এসির ঠান্ডায় থাকা যাবে না। আবার খুব গরম থেকে এসে হুট করে বেশি ঠান্ডায় এসি ছেড়ে থাকা যাবে না। এসির বাতাসের ক্ষেত্রে সময় নিন অর্থাৎ শরীরকে স্বাভাবিক উষ্ণতায় আসতে সময় দিন।
কানের প্রদাহের ক্ষেত্রে যেহেতু বেশি আর্দ্র আবহাওয়া দায়ী, সে জন্য কটনবাড দিয়ে কান চুলকানোর বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এতে যে ক্ষতি হয়, তা হলো আর্দ্র আবহাওয়া ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা ইনফেকশনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়, ফলে কানের বহিরাংশে ইনজুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে নাক খোঁচানো থেকে বিরত রাখতে হবে। গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেলে গরম পানির ভাপ নিতে হবে।
লেখক: নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, আবাসিক সার্জন (ইএনটি), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ , হাসপাতাল, সিলেট
প্রায় দেড় লাখেরও বেশি মুখ ও গলার ক্যানসার রোগী নতুন ইমিউনোথেরাপি ওষুধের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ক্যানসার মুক্ত থাকতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল থেকে জানা গেছে, এই ওষুধ ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি কমিয়ে রোগীদের রোগমুক্ত থাকার সময় দ্বিগুণ করতে পারে।
১৩ ঘণ্টা আগেদরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। এই ঈদ নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা থাকে। বাড়িতে চলে বাহারি রান্নার ধুম। ঈদ-পরবর্তী দিনগুলোতেও আমরা কোরবানির মাংসের বিভিন্ন পদের আয়োজন করে থাকি। এই সময়ে খাবারের প্রকারভেদ ও পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই আমরা না চাইলেও মনের অজান্তে হয়তো কিছু খাবার বেশি খেয়ে ফেলি; বিশেষ করে মাংস..
১৯ ঘণ্টা আগেমানেন আর না-ই মানেন, কোরবানির ঈদ মানেই মাংস খাওয়ার ধুম। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গরুই কোরবানি দেওয়া হয়। ফলে ঘরে ঘরে গরুর মাংসের নানান পদ তৈরি হতে থাকে ঈদের দিন থেকে। গরুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, যদি তা সঠিক নিয়মে, পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়...
১৯ ঘণ্টা আগেকোরবানির ঈদের আনন্দ যেন খাওয়াদাওয়াতেই। আর এই ঈদে গরু বা খাসির মাংসের বিভিন্ন আইটেম তৈরি হয়। ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটা দিন চলবে প্রতি বেলায় মাংসের তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবারের সমাহার।
১৯ ঘণ্টা আগে