Ajker Patrika

নিজেকে মোটা ভাবা এক মানসিক রোগ, হতে পারে মৃত্যু

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বাস্তবে পাতলা হয়েও নিজেকে মোটা ভাবা একটি মানসিক রোগ। এর নাম অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা। ছবি: ফ্রিপিক
বাস্তবে পাতলা হয়েও নিজেকে মোটা ভাবা একটি মানসিক রোগ। এর নাম অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা। ছবি: ফ্রিপিক

বেশি ওজন, শরীরচর্চার অভাব আর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এখন। ফলে অনেক তরুণ-তরুণী ওজন কমাতে গিয়ে অনলাইনে দেখা ‘ফ্যাড ডায়েট’ বা চটজলদি ওজন কমানোর ডায়েট অনুসরণ করছেন। এসব ডায়েট হয়তো প্রথমে নিজেদের আকর্ষণীয় মনে হবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে সেগুলো বিপজ্জনক হতে পারে। কেরালার মর্মান্তিক এক ঘটনা তার প্রমাণ।

কেরালার মেরুভাম্বাই এলাকার ১৮ বছর বয়সী শ্রী নন্দা নামের এক তরুণী ইন্টারনেটে দেখা ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ ডায়েট মেনে চলছিলেন। ছয় মাস ধরে তিনি প্রায় কিছুই খায়নি। কেবল গরম পানি পান করে চলছিলেন। কিছুদিন আগে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরে চিনির মাত্রা, রক্তচাপ ও লবণ সব ছিল অত্যন্ত কম। অবশেষে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেছেন, শ্রী নন্দা অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা নামের এক গুরুতর মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

কী এই অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা?

অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা এমন একটি মানসিক রোগ, যেখানে একজন মানুষ সব সময় মনে করেন তিনি মোটা। যদিও বাস্তবে হয়তো তিনি খুবই পাতলা। এই ভয়ে তিনি খাওয়া-দাওয়া একেবারে কমিয়ে দেন বা বাদই দিয়ে দেন। অনেকে আবার ওজন কমাতে অতিরিক্ত ব্যায়াম, উপবাস বা খাবার খেয়ে পরে তা বমি করে বের করে দেওয়ার মতো কাজও করে থাকেন। এই অভ্যাস দীর্ঘদিন চললে শরীরে পুষ্টির মারাত্মক ঘাটতি হয় এবং একসময় তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসায় আক্রান্ত মানুষ খাওয়া-দাওয়া একেবারে কমিয়ে দেয় বা বাদ দিয়ে দেয়। ছবি: ফ্রিপিক
অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসায় আক্রান্ত মানুষ খাওয়া-দাওয়া একেবারে কমিয়ে দেয় বা বাদ দিয়ে দেয়। ছবি: ফ্রিপিক

অ্যানোরেক্সিয়ার কিছু সাধারণ উপসর্গ

  • অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া বা একেবারে পাতলা হয়ে যাওয়া।
  • সারা দিন দুর্বলতা, মাথা ঘোরা।
  • চুল পড়ে যাওয়া বা পাতলা হয়ে যাওয়া।
  • গায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
  • সব সময় ঠান্ডা লাগা।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • আয়নার সামনে নিজেকে মোটা মনে হওয়া।
  • সব সময় খাবার, ক্যালরি, ওজন এসব নিয়ে ভাবা।
  • মন খারাপ, দুশ্চিন্তা বা রেগে যাওয়া।

কী কারণে এই রোগ হয়?

জেনেটিক বা বংশগত কারণ

অনেকের মধ্যে এমন মানসিক অবস্থা দেখা যায়। এদের মধ্যে অতিরিক্ত পারফেকশনিস্ট হওয়া, উদ্বেগে ভোগা, সবকিছু কড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এসব তাদের অ্যানোরেক্সিয়ার দিকে ঠেলে দেয়।

মানসিক আঘাত

শৈশবে বা কৈশোরে যদি কেউ নির্যাতনের শিকার হয় বা বড় ধরনের মানসিক ধাক্কা খায়, তবে অনেক সময় তারা খাওয়া কমিয়ে শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করে। এটা ভুলভাবে মানসিক কষ্ট সামলানোর উপায় হয়ে দাঁড়ায়।

বন্ধুদের বা সমাজের চাপ

বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা নিজের শরীর নিয়ে সব সময় সচেতন থাকে। অনেকে চায় ‘স্লিম’ হতে, যেন বন্ধুদের মতো লাগে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালো দেখায়। এই চাপ থেকেই অনেক সময় তারা ডায়েট চার্ট অনুসরণ শুরু করে।

প্রতিরোধের উপায়

ডায়েটিশিয়ানদের মতে, এই সমস্যা প্রতিরোধে কিছু বিষয় বিবেচনায় থাকা জরুরি।

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা

তরুণদের শেখাতে হবে যে, সৌন্দর্য মানেই পাতলা হওয়া নয়। শরীর যেমনই হোক, সেটাকে সম্মান করতে হবে। নিজের বা অন্যের শরীর নিয়ে নেতিবাচক কথা না বলাই ভালো।

সুষম খাবারের অভ্যাস

প্রতিদিন সঠিক সময় খাওয়া এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা থেকে বাঁচতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ছবি: ফ্রিপিক
অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা থেকে বাঁচতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ছবি: ফ্রিপিক

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ

আজকাল অনেক ফিটনেস বা ডায়েট ভিডিও তরুণদের বিভ্রান্ত করে। বাবা-মা, শিক্ষক বা বড়দের উচিত এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। প্রতিটি তথ্য যাচাই করে নেওয়া দরকার।

ভুল ডায়েট অনুসরণে শ্রী নন্দার মতো মেধাবী তরুণীর মৃত্যু আমাদের দেখিয়ে দেয়, শুধু অনলাইন দেখে ডায়েট শুরু করাটা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। আমাদের সন্তানদের প্রতি আরও মনোযোগী হতে হবে। তাদের খাওয়া, মানসিক অবস্থা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব সবকিছু নিয়েই সচেতন হতে হবে।

শরীরের যত্ন নেওয়া দরকার, কিন্তু সেটা যেন জীবন হারানোর কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

প্রেক্ষাপটবিহীন প্রতিবেদন কি সাংবাদিকতা হতে পারে?

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত