Ajker Patrika

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ শিশু কোনো টিকাই পায় না: ডব্লিউএইচও

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৫৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে অন্তত ১ কোটি ৪৩ লাখ শিশু এখনো এক ডোজও টিকা পায়নি—এমন তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নতুন বার্ষিক প্রতিবেদনে। গতকাল সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ১৯৫টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে কিছুটা অগ্রগতি হলেও যুদ্ধ-সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা শিশুদের টিকার আওতায় আনার পথকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

বিশ্বজুড়ে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে টিকাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার কমলেও এখনো কোটি কোটি শিশু ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাগুলো। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ছাড়া আরও ৫৭ লাখ শিশু আংশিক টিকা পেয়েছে—অর্থাৎ তারা টিকার সম্পূর্ণ ডোজ পায়নি।

ডব্লিউএইচওর টিকাদান, ভ্যাকসিন ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক কেট ও’ব্রায়েন বলেন, এটি বেশ উদ্বেগের বিষয়। বিশ্বজুড়ে শিশুদের জীবন রক্ষাকারী টিকা পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য, তা এখন একধরনের অদৃশ্য বাধা বা গ্লাস সিলিংয়ের নিচে আটকে গেছে। এই প্রতিবন্ধকতা ভেঙে সামনে এগোনো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও সংকটময়। বর্তমান বিশ্বে ২৬টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ, সংঘাতময় ও মানবিক জরুরি পরিস্থিতির’ দেশ রয়েছে, যেগুলোতে বসবাসরত শিশুরা স্থিতিশীল দেশগুলোর শিশুদের তুলনায় তিন গুণ বেশি টিকাবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে টিকাবঞ্চিত অর্ধেক শিশুই এসব দেশে বাস করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে নাইজেরিয়া, ভারত, সুদান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও অ্যাঙ্গোলা—এই নয়টি দেশেই বাস করছে বিশ্বের মোট টিকাবঞ্চিত শিশুর ৫২ শতাংশ।

এদিকে ধনী দেশগুলোতে টিকাদানে সংকটের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা, ভুল তথ্য ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের অভাব। ইউনিসেফের স্বাস্থ্য ও টিকাদান বিভাগের সহযোগী পরিচালক এফরেম লেমাঙ্গো বলেন, গত ৫০ বছর শুধু টিকার মাধ্যমে ১৫ কোটিরও বেশি প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে টিকাবিরোধিতা বেড়ে গেছে। তাঁর মতে, এটি কেবল তথ্য প্রবাহজনিত সমস্যা নয়, বরং তা গভীরতর আস্থাহীনতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে ভুল তথ্য শুধু যে ভয় তৈরি করে, তা নয়, বরং এটি পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর্মী ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থার অভাবকেও প্রকাশ করে।

কেট ও’ব্রায়েন বলেন, জাতীয় পরিসংখ্যান হয়তো ভালো দেখাচ্ছে, কিন্তু এই সংখ্যার নিচে অনেক ছোট ছোট জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের টিকা নেওয়ার হার খুবই কম এবং দেখা যাচ্ছে, ওসব অঞ্চলেই শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর হামের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে, টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চলে, যেখানে টিকা নেওয়ার হার তুলনামূলকভাবে কম। এই বছর দেশটিতে হামের যত কেস দেখা গেছে, তা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ও’ব্রায়েন বলেন, টিকা না পাওয়ার প্রধান কারণ হলো—টিকা ও টিকাদান সেবার নাগাল না পাওয়া। অনেক শিশুই এমন এলাকায় রয়েছে, যেখানে পৌঁছানো কঠিন কিংবা সেখানে সরকারই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। যে কারণে টিকা কর্মসূচির বাইরে থাকতে হচ্ছে তাদের।

এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রশাসন ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) ভেঙে দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গ্লোবাল ফান্ড থেকেও মার্কিন অর্থায়ন কমানোর ঘোষণা এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি। উন্নয়ন সাহায্যে ব্যাপক কাটছাঁট ও ভ্যাকসিনসংক্রান্ত ভুল তথ্য—এই দুই মিলে বিগত কয়েক দশকের অর্জনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। ডব্লিউএইচও আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে স্থানীয় সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে সব শিশুর কাছে জীবন রক্ষাকারী টিকা পৌঁছে দেওয়া যায়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে অন্তত ৮৯ শতাংশ শিশু ধনুষ্টঙ্কার, টিটেনাস ও হুপিং কাশির টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে, যা ২০২৩ ও ২০২২ সালের তুলনায় অপরিবর্তিত। তবে তিনটি পূর্ণ ডোজ পেয়েছে মাত্র ৮৫ শতাংশ শিশু, যেখানে ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৮৪ শতাংশ।

হামের প্রথম ডোজ পেয়েছে ৮৪ শতাংশ শিশু, যা ২০২৩ ও ২০২২ সালের মতোই; তবে এটি ২০১৯ সালের তুলনায় কম, সেবার এই হার ছিল ৮৬ শতাংশ। তবুও হামের দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে—২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭৪ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৭৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে হামের প্রকোপ বাড়ছে। এ বছর হামে আক্রান্ত শিশুদের ৯০ শতাংশের বেশিই টিকা নেয়নি।

এ বিষয়ে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘সুখবর হলো আমরা অনেক শিশুর কাছে জীবন রক্ষাকারী টিকা পৌঁছে দিতে পেরেছি। কিন্তু এখনো লাখ লাখ শিশু প্রতিরোধযোগ্য রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে—এটা সবার জন্যই চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট সংকোচন, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, তথ্য বিভ্রান্তি ও সংঘাতজনিত প্রতিবন্ধকতা দূর করতেই এখন জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। এমন কোনো শিশুর মৃত্যু হওয়া উচিত নয়, যাকে একটি টিকা দিয়েই রক্ষা করা যেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

প্রেক্ষাপটবিহীন প্রতিবেদন কি সাংবাদিকতা হতে পারে?

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত