Ajker Patrika

মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফলিস ক্যাথেটর পদ্ধতি ব্যবহারে ৬১ শতাংশ কমে সিজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফলিস ক্যাথেটর পদ্ধতি ব্যবহারে ৬১ শতাংশ কমে সিজার

দেশে মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফলিস ক্যাথেটার এই দুই পদ্ধতি প্রয়োগে বেড়েছে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের হার। সন্তান জন্মদানে যাদের সি-সেকশন অপারেশন (সিজার) করার কথা ছিল, এই দুই পদ্ধতি প্রয়োগে গড়ে তাঁদের ৬১ শতাংশের স্বাভাবিকভাবে সন্তান হয়েছে। 

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগে ভর্তি হওয়া ২০০ প্রসূতির ওপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চালানো এই গবেষণার ফলাফল আজ শনিবার প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী। 

গবেষণায় ১০০ জনের ওপর মিজোপোস্টল এবং ফলিক ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আর ১০০ জনকে শুধু জুস খাইয়ে অর্থাৎ মিজোপোস্টল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। 

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী বলেন, ‘একটি জরিপে আমরা দুটি প্রুফ দেখিয়েছি, যে গর্ভবতী মায়েদের আসলেই আমরা সিজারে নিয়ে যেতাম, তাদের সিজারে না নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করেছি। কাউন্সেলিং করেছি। অবস্থা বুঝে আমরা ইন্ডাকশন দিয়েছি। স্টাডির মূল যেটা ছিল, আমরা একটা মেকানিক্যাল মেথড ইউস করেছি। তা হচ্ছে ফলিক ক্যাথেটার। যা আমাদের দেশে এখনো অনেকে করেন না। আমরা দেখতে চাচ্ছিলাম এর ফল কেমন আসে।’ 

ডা. মুনিরা বলেন, ‘আমরা যে দুটি পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি তা হলো—ফলিক ক্যাথেটার এবং মিজোপোস্টল জুস দিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, নরমাল ডেলিভারির (স্বাভাবিক প্রসব) হার অনেক বেড়ে গেছে।’ 

 ‘যাদের ওপর মিজোপোস্টল এবং ফলিক ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৬৪ শতাংশের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। অর্থাৎ তাঁদের আর সিজার করতে হয়নি। সিজার করতে হয়েছে ৩৬ শতাংশের। অথচ তাঁদের সবাই সিজারে চলে যেতেন।’ 

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘মিজোপোস্টল পদ্ধতি অর্থাৎ শুধু জুস খাওয়ানোর ফলে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ৫৮ শতাংশের এবং সিজার করতে হয়েছে ৪২ শতাংশের। সন্তান জন্মদানে যারা সিজার করতেন, এই দুই পদ্ধতি প্রয়োগে গড়ে তাঁদের ৬১ শতাংশের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। সিজার করতে হয়েছে ৩৯ শতাংশের।’ 

অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী জানান, নরমাল ডেলিভারি হলে হাসপাতালে অনেক দিন থাকতে হয় না। কারও কারও রাতে ডেলিভারি হয়েছে সকালে চলে গেছেন। বেশির ভাগই একদিনে ডেলিভারি করে চলে গেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে দুই দিন পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে কত ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি হলো সেটিও তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন। 

এতে দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে ১২ ঘণ্টায় মিজোপোস্টল এবং ফলিক ক্যাথেটারে ডেলিভারি হয়েছে ২১ জনের, শুধু মিজোপোস্টলে হয়েছে ১১ জনের। ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিজোপোস্টল এবং ফলিক ক্যাথেটারে ডেলিভারি হয়েছে ৬৮ জনের এবং মিজোপোস্টলে হয়েছে ৫৬ জনের। মিজোপোস্টল এবং ফলিক ক্যাথেটারে ২৪ ঘণ্টার বেশি লেগেছে ১১ জনের এবং মিজোপোস্টলে ৩৩ জনের। মিজোপোস্টল মানে যাদের শুধু জুস খাওয়ানো হয়েছে। আর মিজোপোস্টল ও ফলিক ক্যাথেটার হচ্ছে তাঁদের জুসও খাওয়ানোর পাশাপাশি ফলিক ক্যাথেটার অর্থাৎ বেলুন ক্যাথেটার দেওয়া হয়েছে। 

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সিজারের মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তান জন্মদানে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। অল্প সময়ে সন্তান বের করা যায়। কিন্তু এর ঝুঁকি অনেক। ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। তাই সিজারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি করতে বেশ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। যাদের নরমালি হবে না বলে নিশ্চিত হই, তখন আমরা সিজারে যাই। সিজারে যাওয়ার আগে এই ধাপগুলো প্রয়োগ করলে সিজারে সন্তান জন্মদানের হার অনেক কমে যাবে।’ 

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলমের সভাপতিত্বে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, কোষাধ্যক্ষ মুন্সী মোহাম্মদ বায়েজিদ প্রমুখ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত