Ajker Patrika

আধুনিক বড় শহরে মানসিক সমস্যা ও স্থূলতা কমের কারণ

অনলাইন ডেস্ক
বড় শহরগুলোতে এসব সমস্যা কম হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
বড় শহরগুলোতে এসব সমস্যা কম হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

বড় শহরগুলোতে মানুষের মধ্যে স্থূলতা ও মানসিক অস্থিরতা—বিশেষ করে এডিএইচডির হার তুলনামূলক কম। যুক্তরাষ্ট্রের ৯১৫টি শহরের তথ্য নিয়ে পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় এই চমকপ্রদ তথ্য জানা গেছে। গবেষকেরা বলছেন, বড় শহরগুলোতে বেশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগ ও সক্রিয় জীবনধারা এ পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রাখছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বড় শহরে কম দেখা যায় এডিএইচডি। এই মানসিক সমস্যা আবার স্থূলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, এডিএইচডি থাকলে শারীরিক সক্রিয়তা কমে, যা পরোক্ষভাবে ওজন বাড়ায়।

বড় শহরগুলোতে এসব সমস্যা কম হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে—বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ অথবা শিক্ষা ও সচেতনতা। তবে গবেষকেরা এসব ব্যাখ্যাকে আপাতত অনুমান হিসেবেই দেখছেন।

বিশ্বজুড়েই স্থূলতা এখন একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ২০৩০ সালের মধ্যে স্থূলতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থূলতার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, জেনেটিক গঠন এবং পরিবেশের মতো নানা কারণ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, ইম্পালসিভিটি বা impulsivity (ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে আবেগ দিয়ে কাজ করা)–স্থূলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক কারণ হিসেবে কাজ করে।

যদিও কিছু পরিস্থিতিতে ইম্পালসিভিটি উপকারী হতে পারে, তবে অতিরিক্ত ইম্পালসিভিটি খাবারের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ইম্পালসিভিটির একটি ক্লিনিক্যাল রূপ হলো—এডিএইচডি। ইতিপূর্বে ডাচ্‌ ও কোরিয়ান শিশুদের ওপর পরিচালিত গবেষণায়ও স্থূলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তবে বেশির ভাগ গবেষণায় শহরের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে ‘অবিসোজেনিক ইনভায়রনমেন্ট’-এর (যেসব পরিবেশ স্থূলতাকে উৎসাহিত করে) প্রভাবকে উপেক্ষা করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, বড় শহরে স্বাস্থ্যকর খাবার, শরীরচর্চা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বেশি থাকায় এসব সমস্যার প্রকোপ কম থাকে।

গবেষকেরা একটি নতুন ধরনের ‘কারণ নির্ধারণ পদ্ধতি’ (causal inference method) ব্যবহার করে এডিএইচডি ও শহরের বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা শহরভিত্তিক এবং ব্যক্তিভিত্তিক—দুই ধরনের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৯১৫টি মাইক্রো ও মেট্রোপলিটন এলাকার ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়। বিবেচনায় নেওয়া হয়—শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা, কলেজ শিক্ষা ও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার তথ্য।

গবেষণায় ১৯ হাজারেরও বেশি ১০–১৭ বছর বয়সী শিশু এবং তাদের পরিবার থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল—বিএমআই, সাপ্তাহিক শারীরিক কার্যকলাপ, এডিএইডির তীব্রতা, পরিবারে খাদ্যসংকট, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবহার এবং অভিভাবকের শিক্ষা।

শহরভিত্তিক ডেটা ‘log’ রূপে রূপান্তর করে পরিসংখ্যানের ওএলএস (অর্ডিনারি লিস্ট স্কোয়ারস) পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় এবং ‘পিটার-ক্লার্ক’ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সম্ভাব্য কারণ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ‘জিনি’ সূচক ব্যবহার করে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সামাজিক-স্বাস্থ্যগত বৈষম্যও পরিমাপ করা হয়।

গবেষণার শহরভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বড় শহরগুলোতে শিশুদের এডিএইচডি, প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতা এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ, শহরের আকার যত বড়, এসব সমস্যা তত কম পরিমাণে দেখা দেয়। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ এবং কলেজ শিক্ষার হার বড় শহরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গবেষণা আরও দেখায় যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা শহরের আকারভেদে খুব একটা পরিবর্তন করে না; এটি মোটামুটি সমানভাবে সবখানে বিস্তৃত। তবে ছোট শহরগুলোতে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার হার প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি, যা স্থূলতার একটি বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্যক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব শিশুর এডিএইচডি রয়েছে, তাদের মধ্যে শারীরিক কার্যকলাপের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) বেশি। এটি ইঙ্গিত করে যে এডিএইচডি সরাসরি ওজন বৃদ্ধি এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ ছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ, খাদ্যনিরাপত্তা এবং শিশুদের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অভিভাবকের উচ্চশিক্ষা। যদিও এই শিক্ষাগত সুবিধা থাকা পরিবারের শিশুদের শারীরিক কার্যকলাপ কিছুটা কম হতে দেখা গেছে, তবুও সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা একটি সুরক্ষামূলক উপাদান হিসেবে কাজ করছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, এডিএইচডি শিশুদের মধ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়, যার পরিণতিতে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। তবে শহরের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার হার ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়ে, যা এডিএইচডি এবং স্থূলতা—দুই সমস্যারই নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, বড় শহরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তবে এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখানে ব্যবহৃত অ্যালগরিদম কিছু মৌলিক অনুমানের ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়া, গবেষণাটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ ফলাফলকে সাধারণীকরণ করাও কিছুটা সীমিত।

গবেষণা বলছে, বড় শহরের সুবিধা শুধু অর্থনৈতিক নয়—স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা এবং শিক্ষার সুযোগও এখানে বেশি। এডিএইডি ও স্থূলতার মতো জটিল সমস্যাগুলোর পেছনে আছে আত্মনিয়ন্ত্রণ, শারীরিক কার্যকলাপ এবং শিক্ষাগত ও মানসিক সহায়তার ভূমিকা। ফলে, ছোট ও অনুন্নত শহরগুলোতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটিয়ে স্থূলতা এবং এডিএইচডির মতো সমস্যা কমানো সম্ভব।

তথ্যসূত্র: নিউজ মেডিকেল লাইফ সায়েন্সেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরিফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আসন নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর

দিনাজপুরে নিহত মাইক্রোবাস-আরোহীদের সবাই সরকারি কর্মকর্তা

ফরিদপুরে গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন অজ্ঞাত ব্যক্তি, অক্ষত শুধু পায়ের জুতা

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর: উপদেষ্টা ফারুকী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত