Ajker Patrika

জগৎজ্যোতি দাস

জগৎজ্যোতি দাস

জগৎজ্যোতি দাস মুক্তিযুদ্ধে ভাটি অঞ্চলের গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তাঁর ডাকনাম ছিল শ্যামা। ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

জগৎজ্যোতি ১৯৬৮ সালে স্থানীয় এক স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। তিনি ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পালনে ভারতের গুয়াহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ইংরেজি, হিন্দি, গুয়াহাটির আঞ্চলিক ভাষা আয়ত্ত করেন। একসময় নকশালপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এখানে তিনি অস্ত্র চালানো ও গোলাবারুদ তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের জন্য যোগ দেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। প্রশিক্ষণ শেষে ভাটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর নেতৃত্বে ফায়ারিং স্কোয়াড ‘দাস পার্টি’ গঠিত হয়। তিনি এর কমান্ডার ছিলেন। এই দলের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা, নৌযান ডোবানো, ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বংস করার বিশেষ প্রশিক্ষণ ছিল।

১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর সাব-সেক্টর থেকে জগৎজ্যোতির দলকে বাহুবলে বিদ্যুতের লাইন ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল আজমিরীগঞ্জ হয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁরা আজমিরীগঞ্জ যাওয়ার আগে শত্রুর পাতানো ফাঁদে পড়ে যান। এরপর যুদ্ধের পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় তিনি একপর্যায়ে তাঁর দলকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মাত্র একটি এলএমজি নিয়ে একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে শত্রুর অবস্থান দেখতে মাথা উঁচু করার সময় একটি গুলি জগৎজ্যোতির চোখ বিদ্ধ করে। এই যুদ্ধেই তিনি শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত