Ajker Patrika

উত্ত্যক্ত হয়ে তিন বছরে আত্মঘাতী ৪৪ নারী

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১৪: ০০
উত্ত্যক্ত হয়ে তিন বছরে আত্মঘাতী ৪৪ নারী

চুয়াডাঙ্গার একটি মাদ্রাসায় পড়তেন মাসুমা খাতুন। বাসার বাইরে বের হলেই স্থানীয় যুবক আবুল কালাম নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন তাঁকে। গত ১৮ মার্চ সকালে রাস্তায় একা পেয়ে মাসুমাকে লাঞ্ছিত করেন কালাম। অপমান সইতে না পেরে ২০ মার্চ ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মাসুমা।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বখাটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন মাসুমার মতো অন্তত ৪৪ জন নারী। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন আরও ৬৬৪ জন। এমন প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার দেশব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস। ২০১০ সাল থেকে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

আসকের পরিচালক ও মানবাধিকার আইনজীবী নীনা গোস্বামী বলেন, ঘরে-বাইরে কিংবা অফিসে-রাস্তায় সর্বত্রই নারীরা উত্ত্যক্তের শিকার হন। এর মধ্যে খুব কম ঘটনাই সামনে আসে। এসব ক্ষেত্রে যে মামলাগুলো হয়, বেশির ভাগেরই আবার রায় আসে না। কারণ, এগুলোর সাক্ষী পাওয়া যায় না।

আসকের হিসাব বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বখাটের হাতে হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৮ নারী। ২০২০ সালে একই কারণে আত্মহত্যা করেন ১৪ জন। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে উত্ত্যক্তকরণে আত্মহনন করেন ১২ জন। আর এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বখাটের উৎপাতে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন।

এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বলেন, অনেকেই ভাবেন, ইভ টিজিংয়ের মতো তুচ্ছ কারণে একটা মেয়ে কেন আত্মহত্যা করেন। আসলে যে আত্মহত্যা করেন, তাঁর কাছে বিষয়টা অনেক বড়। এর সঙ্গে পারিবারিক কাঠামো ও ব্যক্তিত্বের কাঠামো জড়িত। একজন মানুষ, যিনি পারিবারিকভাবে ইতিবাচকতার মধ্যে বড় হয়েছেন, তিনি কোনো বিষয়কে যেভাবে দেখবেন, নেতিবাচকতার মধ্যে বড় হওয়া মানুষ বিষয়টাকে সেভাবে দেখবেন না।

বেসরকারি সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ২০২০ সালের এক জরিপ বলছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী কখনো না কখনো উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তাহিয়া সাবরিন বলেন, ‘গত বছর ফেসবুক মেসেঞ্জারে বাজে কিছু মেসেজ পাচ্ছিলাম। বাজে কিছু ছবির ওপর আমার মাথা বসিয়ে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছিল। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম আমি। পরিবার ও বন্ধুরা পাশে ছিল বলে আমাকে আত্মহত্যা করতে হয়নি।’

নারী উত্ত্যক্তকরণের শেষ কোথায়, এমন প্রশ্নে মানবাধিকারকর্মী ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মেয়েদের দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ছেলেদের সুমানসিকতা গড়ায় মা-বাবাকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আর আইনগতভাবে শাস্তির বিষয়টিও কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

এ বিষয়ে আসকের পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে সচেতনতা অবশ্যই দরকার। সেই সঙ্গে দরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো। বখাটেরা শাস্তির আওতায় এলে উত্ত্যক্তকরণের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত